ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মতিলাল দেব রায়

অভিমত ॥ প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রবাসীদের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অভিমত ॥ প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রবাসীদের প্রত্যাশা

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্ক আসছেন জেনে আমরা খুবই আনন্দিত। তাঁর কাছে নিউইয়র্ক প্রবাসীদের কিছু বিষয় উপস্থাপন করছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে, কিন্তু এই উন্নত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাসীন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী অধ্যুষিত নিউইয়র্ক শহরের সঙ্গে বাংলাদেশের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই, তাই জাতীয় স্বার্থে এ ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। প্রবাসীরা নিজের দেশের বিমানে চড়ে লাল সবুজ পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানে দেশে যেতে এবং ফেরত আসতে খুবই আগ্রহী। তাই যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা ফ্লাইটটি চালু করা যায় তার ব্যবস্থা করা দরকার । নিউইয়র্ক শহরসহ আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে বেশি মানুষ আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে। ওই জেলার প্রবাসীরা প্রতিবছর পারিবারিক ও ব্যবসায়ী কাজে দেশে যায়, কিন্তু ঢাকাতে নামার পর পুরো দেড় দিন লেগে যায় গন্তব্যে পৌঁছাতে। বঙ্গবন্ধু কন্যা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, শমসেরনগরের একটি অব্যবহৃত বিরাট বিমান ঘাঁটি আছে। তাই প্রবাসীরা ঢাকা থেকে শমসেরনগর বাংলাদেশ বিমানের দিনে দুটি ফ্লাইট চালু করার দাবি জানাচ্ছে। আমেরিকায় বসবাসরত বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ কোন নির্বাচন আসলে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটায় নির্বাচনের আগে বা পরে তাদের এলাকায় কোন সমস্যা কিনা। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর সারাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মূল দুষ্কতকারীদের আজও বিচারের আওতায় আনা গেল না। এবার নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে কোন রকম উস্কানিমূলক ঘটনা কেউ সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য আগে থেকেই সব স্থানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। বাংলাদেশ মিশনের কাজ হচ্ছে প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা দেখাশোনা, দেশের ঐতিহ্য, কালচার, সংস্কৃতি ইত্যাদিকে এ দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিচয় করিয়ে দেয়া কিন্তু দুঃখের বিষয়, অভিবাসীদের কোন সভা-সমিতিতে এবং এ দেশে রেজিস্ট্রিকৃত কোন সংগঠন থেকে চিঠি লিখলে তার উত্তর পর্যন্ত পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীরাও যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে তার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার যাতে সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়, তার নিশ্চয়তা চায় প্রবাসীরা। যারা এদেশে প্রবাসী তারা সকলেই বাংলাদেশের জন্মসূত্রে নাগরিক, তাই এদের গুরুত্ব সমান যারা বাংলাদেশে বসবাস করেন। তাই প্রবাসীর যখন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তা হলে তারা সংসদীয় ভোটে প্রার্থী হতে অসুবিধা কোথায়, বিষয়টি একটু বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি রাখছি। যেহেতু প্রবাসীরা বাংলাদেশের ভূমিপুত্র তাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ রাখতে চায়। বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম ৪টি জাতীয় নীতিমালার মধ্যে গণতন্ত্র অন্যতম, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে দলীয় সকল সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেয়া বাঞ্ছনীয়। গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত হচ্ছে সঠিক ও সৎ নেতৃত্ব এবং নতুন নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করা। একটি নির্বাচিত এলাকায় যদি এক ব্যক্তিকে বারবার সংসদীয় পদে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়, তা হলে ওই এলাকায় দলের দ্বিতীয় সারির নেতৃত্ব, তৃতীয় সারির নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে না। যার ফলে এখানে গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে এবং দলীয় কোন্দল বাড়তে থাকবে। যদি নিয়ম করা যায়, একজন একটি নির্বাচিত এলাকার পর পর দুই বারের বেশি প্রার্থী হতে পারবেন না। তখন দলীয় কোন্দল ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রবণতা কমে আসবে। আমি মনে করি, সময় এসেছে বিষয়গুলোর মূল্যায়ন করে দলীয় প্রার্থী নমিনেশন চূড়ান্ত করার। প্রবাসীরা দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায়, যা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে। তাই প্রবাসীদের জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতিতে রয়েছে অবদান, প্রবাসীরা যখন পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশে ভ্রমণ করতে যান, তখন ঢাকার বিমানবন্দরে তাদের সামান্য ভুলত্রুটির জন্য বিভিন্ন রকম হয়রানি করা হয়, অনেক যাত্রীর লাগেজ কেটে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়, বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের কিছু কিছু ট্র্যাভেল এজেন্সি বিদেশে লোক পাঠাচ্ছে। এমন কিছু এজেন্সি দেশের বাইরে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এদেশের পত্রিকায় দেখলাম টেক্সাস সীমান্তে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে বর্ডারে সাইনবোর্ড লাগিয়ে বর্ডার গার্ড সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে। একটি পত্রিকায় খবর দেখেছি, বিপদসঙ্কুল আমাজান জঙ্গল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে অসংখ্য বাংলাদেশী। গত ২৪ আগস্ট ৫ বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বছর এ পর্যন্ত ৫৪১ জনকে ওই সীমান্তে গ্রেফতার করা হয়। টেক্সাস বর্ডার গার্ড প্রধান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে ঢুকছে, তারা কারা, তাদের পরিচয় কি, তারা কেন আসছে, তাদের লক্ষ্য কি ইত্যাদি। এসব ঘটনা দেশের ইমেজ বহির্বিশ্বে খাটো করছে। অবৈধ অভিবাসী যারা দীর্ঘদিন ধরে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া এদেশে স্থায়ীভাবে থেকেও বৈধ হওয়ার অনুমোদন পাচ্ছে না সেখানে কেন এভাবে এ দেশে বাংলাদেশীরা অবৈধভাবে ঢুকছে এবং নিজের জীবনকে অনিশ্চয়তার মাঝে ফেলে দিচ্ছে। পত্রিকা মারফত জানা গেছে, টেক্সাস সীমান্ত পারাপারের জন্য মেক্সিকোর চোরাচালানীদের প্রত্যেক বাংলাদেশীকে ২৭ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। দেশের মানুষকে যারা এভাবে বিপদে ফেলে ফায়দা লুটছে এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, তারা দেশের শত্রু-তাদের চিহ্নিত করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আরেকটি বিষয় ইদানীং প্রবাসীদের মধ্যে গুঞ্জন হচ্ছে যে, কিছু দিনের মধ্যে প্রবাসীদের ডুয়েল সিটিজেনশিপ থাকছে না। জানি না এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত কি? আমরা বাংলাদেশের আলো, মাটির মধ্যে বেড়ে উঠেছি, আমাদের মূল শিকড় রয়েছে দেশে। এ শিকড় থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করা ঠিক হবে কি? আমরা এদেশে থেকেও দেশের জন্য, পরিবারের সদস্যদের জন্য বিচলিত হই। তাই দ্বৈত নাগরিকত্ব বহাল থাকলে প্রবাসীরা জাতীয় উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আর যদি দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া হয়, তা হলে প্রবাসীরা শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। লেখক : আমেরিকা প্রবাসী
×