ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিকের লড়াইটা প্রেরণা যুগিয়েছিল টাইগারদের ॥ অশোক মলহোত্রা

প্রকাশিত: ২০:০৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মুশফিকের লড়াইটা প্রেরণা যুগিয়েছিল টাইগারদের ॥ অশোক মলহোত্রা

অনলাইন ডেস্ক ॥ এ যেন উপরি পাওনা! দেখতে বসেছিলাম লাসিথ মালিঙ্গাকে, কিন্তু খেলে দিলেন মুশফিকুর রহিম। তাঁর দাপটেই শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ জিতে নিল বাংলাদেশ। তাদের ২৬১ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা শেষ হয় ১২৪ রানে। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দেখতে শনিবার টিভির সামনে বসেছিলাম একটিমাত্র কারণে। তা হল, লাসিথ মালিঙ্গা দীর্ঘ এক বছর পরে ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরে সেই আগের মতোই বিধ্বংসী রয়েছেন কি না। এশিয়া কাপের ম্যাচে মালিঙ্গার সেই আগুনে বোলিং দেখার পাশাপাশি, উপরি পাওনা বাংলাদেশ উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ১৫০ বলে ১৪৪ রানের দুরন্ত ইনিংস। মুশফিকুরের এই মরিয়া লড়াইটাই বোধহয় নতুন প্রেরণা যুগিয়েছিল টাইগারদের। তিন রানে দুই উইকেট চলে গিয়েছে। এই অবস্থা থেকে যে ভাবে ওঁ খেলাটা ধরেছিল, তা দেখে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের সঙ্কটমোচন আজ মুশফিক। উইকেট এমনিতেই ব্যাটসম্যানদের সহায়ক ছিল। তার পুরো সুবিধা তুলে নিয়েছেন মুশফিকুর। সেই সঙ্গে ধৈর্য। সব বলই ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলতে দেখলাম ওঁকে। কোনও অক্রিকেটীয় শট না খেলেই সেঞ্চুরি করলেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেলেন তিনি। শেষ উইকেটেও ৩২ রান যোগ করে দলের রান নিয়ে যান ২৬১ তে। আর এটাই ম্যাচ জেতার জন্য বাংলাদেশকে বাড়তি অক্সিজেন দিয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। পাশাপাশি, বাঁ হাতের কব্জি ভেঙে যাওয়ার পরেও চিকিৎসকের নির্দেশ উপেক্ষা করেই দলের প্রয়োজনে এক হাতে ব্যাট করে গেলেন তামিম ইকবাল (২)। বড় রান না করলেও এই সাহসটাও প্রেরণা দেয়। হয়তো সেই কারণেই শ্রীলঙ্কা ইনিংসের শুরুতে উপুল থরঙ্গা দুই ওভারে যখন ২২ রান করে ফেলেছেন তখনও মানসিক ভাবে ধাক্কা খায়নি বাংলাদেশ। মাশরাফি মর্তুজা এই সময়েও কিন্তু লাইন ও লেংথ না হারিয়েই বল করে গেল। মালিঙ্গা ভাল বল করা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা হারল ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ববোধের অভাবে। মাহেলা জয়বর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারার মত দায়িত্ব নিয়ে খেলার লোকের অভাব এই শ্রীলঙ্কা দলে। পাঁচ ওভারের মধ্যে ৩২ রানে তিন উইকেট চলে যাওয়ার পরে আক্রমণাত্মক হওয়ার বদলে খেলাটা একটু ধরতে হত কাউকে। সেই লোকটাকেই তো পাওয়া গেল না। সকলেই বাংলাদেশের বোলারদের আক্রমণ করতে গেলেন। এক মাত্র অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস রুবেল হোসোনের বল কাট করে ভিতরে ঢুকে আসায় আউট হলেন। বাকিরা সব উইকেট ছুড়ে দিয়ে ম্যাচটা হারিয়ে দিলেন শ্রীলঙ্কাকে। হারলেও মুগ্ধ করলেন লাসিথ মালিঙ্গা। একদিনের ক্রিকেটে শেষ যে বার মালিঙ্গাকে খেলতে দেখেছিলাম শ্রীলঙ্কার জার্সি গায়ে, তখন নতুন বলে ওঁর গতি কমে গিয়েছিল। পুরনো বলে রিভার্স সুইংটা ঠিক মতো করাতে পারছিলেন না। কিন্তু এ দিন মালিঙ্গা দুর্দান্ত বোলিং করে মনে করিয়ে দিলেন, ফিরে আসার জন্য কেউ যদি মানসিক ভাবে দৃঢ় হন, তা হলে তিনি ফিরবেনই। এ দিন ১০ ওভার বল করে দু’টো মেডেন-সহ ২৩ রানে চার উইকেট নিলেন মালিঙ্গা। ভাবছিলাম, একজন ক্রিকেটার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে বোলিং পরামর্শদাতা হয়ে যশপ্রীত বুমরাদের তৈরি করছিলেন। এ দিন নিজেই প্রত্যাবর্তন ম্যাচে ধরা দিলেন সেই চেনা মেজাজে। আসলে এই কয়েক মাসে শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার ফাঁকে নিজের ম্যাচ ফিটনেস দারুণ বাড়িয়েছেন মালিঙ্গা। এ দিন ওঁর হাত থেকে সেই পুরনো ইয়র্কার, আউটসুইংগুলো বেরিয়ে এল। সঙ্গে টানা ১৪০ কিমির বেশি গতিতে বল করে যাওয়া। বেশ কিছু শর্ট বল করেও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ‘ব্যাকফুটে’ নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শুরুতে তিন রানে বাংলাদেশের দুই উইকেট চলে যাওয়ার পরে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন (৬৩) খেলাটা ধরে নিয়েছিলেন। জুটি ভাঙা যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ফের মালিঙ্গাকে বোলিংয়ে আনলেন। তার পরেই মিঠুন প্যাভিলিয়নে। অধিনায়ক যখন উইকেট চাইছেন, তখনই উইকেট দিয়েছেন মালিঙ্গা। এ দিন ওঁকে দেখে মনে হল, এশিয়া কাপে ভারতের কাছে একটা বড়সড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারেন শ্রীলঙ্কার এই বোলার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে চারটি উইকেট মালিঙ্গা নিয়েছেন, তার মধ্যে সেরা অবশ্যই শাকিব আল হাসানের (০) উইকেট। দারুণ একটা ‘লেট সুইং’-এ ঠকে যান শাকিব। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×