ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষানুরাগী প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শিক্ষানুরাগী প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশেষ গুণ ছিল। তাঁর সঙ্গে একবারের জন্যও যদি কারও দেখা হতো, পরে আবার দেখা হলে তার নাম ঠিকানা নির্ভুলভাবে বলতে পারতেন। কারও কারও ক্ষেত্রে পরিবারের ছেলেমেয়েদের নামসহ। বঙ্গবন্ধুর এই বিশেষ ক্ষমতাটির কারণে কর্মীরা অত্যন্ত আকৃষ্ট হতো। নেতা-কর্মীদের আকৃষ্ট করার জন্য বঙ্গবন্ধুর গুণের অভাব ছিল না। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে প্রগতিশীল, সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব। তাঁর গুণের কোন জুড়ি ছিল না। ভাবতে অবাক লাগে, যে সময় মানুষের আর্থিক দুরবস্থা, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিক্ষার প্রতি অসচেতনতার কারণে পড়ালেখা করাটাই ছিল আশ্চর্যজনক ঘটনা সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে গিয়ে সুদূর কলকাতায় লেখাপড়া করেছেন, দেশের জন্য রাজনীতি করেছেন। তখন কেউ যদি কোনভাবে মেট্রিকুলেশন পাস করত পত্রিকায় সংবাদ হতো, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তাকে দেখতে আসত। বঙ্গবন্ধুর জীবন ছিল বৈচিত্র্যে ভরা। বঙ্গবন্ধু যেমন রাজনীতি সচেতন ছিলেন তেমনি ছিলেন জ্ঞানপিপাসু। আমরা দেখতে পাই, একুশ শতকেও বহু রাজনীতিবিদের জীবন বৃত্তান্তে লেখা থাকে স্বশিক্ষিত। অথচ সেই কত বছর আগে বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করতেন কিন্তু পড়াশোনায় অবহেলা করেননি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কলকাতা থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চাইলে লেখাপড়া না করেই রাজনীতি করতে পারতেন। সেটা তিনি করেননি। বঙ্গবন্ধুর সেই প্রভাব পড়েছিল তাঁর ছেলেমেয়েদের ওপর। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রায় সময়ই বলেন, ‘আমার বাবা আমাদের বলতেন, আর যাই হোক সব সম্পত্তি হারিয়ে যেতে পারে কিন্তু বিদ্যা কোন দিন হারিয়ে যাবে না। এ এক অমূল্য সম্পদ।’ হয়ত তিনি অনুধাবন করতেন, একদিন তিনি থাকবেন না তখন যাতে শিক্ষার আলোয় সন্তানরা বাকি পথ চলতে পারে। কন্যাও পিতার বৈশিষ্ট্য পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অসম্ভব অনুরাগী। নিজে যেমন বিদ্যায় আলোকিত হয়েছেন তেমনি একটি জ্ঞাননির্ভর, সুশিক্ষিত আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কারণ, শিক্ষা ছাড়া যেমন উন্নয়নের পথ রুদ্ধ তেমনি টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষিত সমাজ আবশ্যক। ॥ দুই ॥ আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সময় স্কুলে পড়তেন সে সময়েও এ ভূ-খ-ে নারী শিক্ষা ব্যাপকভাবে চালু হয়নি। কিন্তু সব প্রতিকূলতার ভিড়ে পিতা-মাতার আগ্রহ এবং নিজের অসীম ইচ্ছা শক্তির জন্যই তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পেরেছিলেন। তবে শিক্ষা জীবনটা এত সহজ ছিল না। নিজের জন্য নিজেকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে। বাবা রাজনীতি করতেন। তিনি ছিলেন শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূল। নানা সময় থাকতেন জেলে জেলে। তাঁর জীবনেও হুমকি ছিল কিন্তু এগুলো তিনি উপেক্ষা করে অত্যন্ত সাধারণ পরিবেশে আট দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই পড়ালেখা করেছেন, আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। বিদ্যার প্রতি সীমাহীন অনুরাগ না থাকলে তা করা এখনই সম্ভব হত না। প্রতিকূলতা ভেঙ্গে নিজের আত্মবিশ্বাস থেকে যে শিক্ষাটা তিনি গ্রহণ করেছেন আজ তা রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কাজে লাগছে। তিনি আজ একাধারে সফল রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, প্রশাসক, শিক্ষাবিদ, সংগঠক, উন্নয়ন কর্মী, গণমানুষের নেতা। তিনি একা একজন মানুষ যুদ্ধ করে যাচ্ছেন সব ক’টি সেক্টরে। তাঁর নেতৃত্বে আমাদের উন্নয়নের কমতি নেই। প্রতিদিন তার বয়স বাড়ছে কিন্তু কাজের প্রতি উদ্দাম কমেনি এক বিন্দুও। বরং তিনি রাষ্ট্রের ছোটখাটো বিষয়গুলোতেও অমনোযোগী নন। বঙ্গবন্ধু কন্যার এই দক্ষটাকে ম্যাজিক্যাল পাওয়ার বললেও বেশি বলা হবে না। বাবার সুযোগ্য কন্যা হিসেবে তিনিও মানুষকে মুগ্ধ করার অসম্ভব ক্ষমতা অর্জন করেছেন। সেই ক্ষমতাই তাকে স্থান দিয়েছে কোটি মানুষের হৃদয়ে। কারণ তাঁর যোগ্যতা তাঁর শিক্ষা। প্রজ্ঞা ও বিদ্যা তাঁর অলঙ্কার। ॥ তিন ॥ শিক্ষার প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের আগ্রহ বরাবরই বেশি থাকে। মানুষ যাতে ঠিকমতো শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় এ বিষয়ে তিনি খুবই সচেতন। তাঁর জন্যই দারিদ্র্যের হার অনেক কমে এসেছে। শুধু তাই নয়, সব খাতে বিরামহীন উন্নয়ন হচ্ছে। কিছু কিছু খাতে আমরা ইউরোপের উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গিয়েছি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী অবস্থায় উপনীত হবে। এখন উন্নয়নকে সুষম বণ্টন ও জোরদার করতে আমাদের প্রয়োজন শিক্ষা। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শিক্ষার হার বাড়ানো সম্ভব না হলে উন্নয়নের সুবিধা সবাই ভোগ করতে পারবে না এবং সেই উন্নয়নও টেকসই হবে না।’ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় বিভিন্ন উপলক্ষে আমরা নেতাকর্মীরা যতবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি ততবারই তিনি আগতদের উদ্দেশে নির্দেশ দিয়েছেন, এখান থেকে ফিরে গিয়ে প্রত্যেককে নিজ নিজ এলাকায় নিরক্ষরতা দূরীকরণে কাজ করতে হবে। গ্রামের মানুষকে অন্তত সাক্ষরতাটা হলেও দান করতে হবে। যেসব ছেলেমেয়ে স্কুল থেকে ঝড়ে যাচ্ছে তাদের বাবা-মার সঙ্গে কথা বলে তাদের আবার স্কুলমুখী করতে হবে। প্রয়োজনে সাধ্যমতো সাহায্য করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তোমাদের অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখতে হবে। ॥ চার ॥ বঙ্গবন্ধু তনয়া শিক্ষা খাতকে নিয়ে সব সময় নতুন করে চিন্তা করেন। শিক্ষা ও শিক্ষার্থীর অগ্রাধিকার তাঁর কাছে সবার আগে। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় নয়। কিছু দিন আগে, জাবেলা নূরের বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের দু’জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিনব প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি ছিল। তিনি আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে সব দাবি মেনে নেন। এ ছাড়াও তিনি ওই স্কুলে ৫টি নতুন বাস উপহার হিসেবে দিয়েছেন। নিহত শিক্ষার্থীদের দুই পরিবারকে ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে দিয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। সুষ্ঠুভাবে চলাচলে জন্য আন্ডারপাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেছেন। আমরা দেখেছি, সেই আনন্দে সারাদেশের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল দিয়েছেন। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের অতিরিক্ত ভ্যাটযুক্ত করার প্রস্তাব এলে প্রধানমন্ত্রী তা সরাসরি বাতিল করে দেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল নির্মাণ নিয়ে তুমুল আন্দোলন হয়েছে। হল নির্মাণের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালকে নতুন ক্যাম্পাস উপহার দেন। তাছাড়া নতুন করে ২১৭ কলেজকে জাতীয় করণ করা হয়েছে। দেশে সরকারী কলেজের সংখ্যা এখন ৫৯৮টি। স্থাপন করেছেন বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও। বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে কয়েক হাজার গরিব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য প্রতি মাসে ব্যক্তিগতভাবে বৃত্তি প্রদান করা হয়। ॥ পাঁচ ॥ বাংলাদেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসিবে যে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি এত জোর দেয়া হয়েছে সেই শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চলছে ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্রকারীরা শিক্ষা খাতকে ব্যাহত করে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে শিক্ষাজীবনই ধ্বংস করে দিতে চায়। ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে টার্গেট হিসেবে নিয়ে এ দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে। তাদের কোন ষড়যন্ত্রকেই সফল হতে দেয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, আমরা হেরে গেলে হেরে যাবে বাংলাদেশ। তাই আমাদের সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। নিজের স্বার্থেই শিক্ষাখাতে কোন আঘাত আসলে রুখে দাঁড়াতে হবে। যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যানন্দিনী শেখ হাসিনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাকে নির্বিঘেœ চলতে দিতে হবে। শিক্ষানুরাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন, আছেন। লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ
×