ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের শুভ সূচনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশের শুভ সূচনা

এশিয়া কাপ ক্রিকেটে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শনিবার শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সর্বোপরি দক্ষতা ও নৈপুণ্য প্রদর্শনে টাইগারদের কাছে সত্যি বলতে কি, পাত্তাই পায়নি একদা আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কান জাতীয় ক্রিকেট দল। পঞ্চাশ ওভারের সীমিত ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২৬১টি রানের ইনিংসটি বড়ই বলতে হবে। এর মধ্যে মুশফিকুর রহিমের ১৪৪ রানের বিশাল সংগ্রহ এবং মিঠুনের ৬৩ রান বলতেই হবে মারমুখী ও দৃষ্টিনন্দন। রান না পেলেও তামিমের আহত অবস্থায় এক হাতের ব্যাট করার দৃশ্যটি দলকে সাহস জুগিয়েছে ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। যা হোক এই রান তাড়া করতে গিয়ে বাংলাদেশের বোলার ও ফিল্ডারদের কাছে দাঁড়াতেই পারেনি শ্রীলঙ্কা। তবে বাংলাদেশ দলকে এখানেই থেমে থাকলে কিংবা আত্মপ্রসাদে ভুগলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, এশিয়া কাপ ক্রিকেটে খেলছে ভারত, পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দল। লড়তে হবে তাদের সঙ্গেও। অবশ্য শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বহু আকাক্সিক্ষত ও বহু প্রতীক্ষিত সিরিজ জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলÑ তাও আবার বিদেশের মাটিতে। এতে দলের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে নিঃসন্দেহে। দীর্ঘ নয় বছর পর বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের তুমুল আনন্দের আস্বাদ পেয়েছে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কোচ স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। অবশ্য টাইগারদের এই সাফল্য অর্জনের পথ খুঁজে পাওয়া এবং হৃতগৌরবের পুনরুদ্ধার খুব একটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে ভারতের শৈল শহর দেরাদুনে ক্রিকেটে একেবারেই নবাগত আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডেতে লজ্জাজনক হার এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দুই টেস্টে শোচনীয় পরাজয়ের পর টাইগারদের মনোবল প্রায় ভেঙ্গে পড়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও কিছু কম হয়নি গণমাধ্যম ও ক্রীড়াঙ্গনে। বিদেশে থেকেও বিদেশের মাটিতে দলীয় অন্তর্কোন্দল ও সমঝোতার মনোভাবের অভাবের কথা শোনা গেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নাস্তানাবুদের পর বিদায়ী শ্রীলঙ্কান কোচ হাতুরাসিংহে আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করে স্বদেশে ফিরে গেলে বিষয়টি অনিবার্যভাবে সামনে চলে আসে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেও হস্তক্ষেপ করতে হয় এ সময়ে ক্রিকেটের সুনাম ও হৃতগৌরব ধরে রাখার জন্য। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, টাইগারদের জন্য সময়টা ছিল কঠিন ও দূরতিক্রম্য। একদিকে দলের প্রবীণ ও নবীনদের মধ্যে সমঝোতার মনোভাবের তীব্র অভাব, দলীয় শৃঙ্খলা ও বিধি মেনে না চলার, নবীন খেলোয়াড়দের দুর্বল ব্যাটিং- বোলিং-ফিল্ডিংÑ সব মিলিয়ে প্রকৃতপক্ষেই এক ছন্নছাড়া অবস্থা। সেই অমানিশা যে এখনও অপসারিত হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না। বিশ্ব ক্রিকেটের অপার মহিমা, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য পারতপক্ষে নিহিত রয়েছে টেস্ট ক্রিকেটেই। বর্তমানে আর্থিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি, সর্বোপরি মাঠে দর্শক ধরে রাখার জন্য ওয়ান ডে এবং টি-২০র বহুল প্রচলন হলেও টেস্ট ক্রিকেটের চিরায়ত ঐতিহ্য ও আবেদন কখনই ফুরিয়ে যাবার নয়। যে কোন ক্রিকেটার বিশেষ করে ভাল ক্রিকেটার ও ব্যাটসম্যানের চিরকালের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা টেস্ট ক্রিকেটের সুমহান ঐতিহ্যের খাতায় নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে তুলে রাখার প্রাণপণ প্রচেষ্টা। টাইগারদেরও সেই স্বপ্ন দেখা থেকে নিজেদের বঞ্চিত করা চলবে না কিছুতেই। সেই স্বপ্নকে মাথায় রেখেই সিরিজজয়ী টাইগারদের মোকাবেলা করতে হবে এশিয়া কাপ ক্রিকেট। মান রাখতে হবে, ছোট জয়ের মধ্য দিয়েও অর্জিত হয় বড় বিজয়। আমরা জাতীয় ক্রিকেট দলের উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করি।
×