ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসছেন

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসছেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর রবিবার বাংলাদেশ আসছেন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নিবেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তিনি সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক হতে পারে। এছাড়া জিটুজি (সরকার টু সরকার) এবং বিটুবি ( ব্যবসায়ী টু ব্যবসায়ী) পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে। ‘ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দু’দেশের সম্পর্ক অন্য এক উচ্চতায় নেয়ার কৌশল গ্রহণ করা হবে তাঁর এই সফরের সময়। জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে রফতানি বাড়ানো ও দেশটির বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চলছে বহুদিন ধরে। ভারত ইতোমধ্যে পোশাক রফতানিতে শুল্ক সুবিধা দিয়েছে। এ কারণে দেশটিতে পোশাক রফতানি সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। ভারতের বাজারে পাটপণ্য রফতানিতে এ্যান্টি-ডাম্পিং একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা দূরীকরণে এবার আলোচনা করা হবে। ভারত থেকে তুলা আমদানি সহজীকরণ ও শুল্ক-অশুল্কজনিত যেসব সমস্যা রয়েছে তা দূরীকরণে উদ্যোগ নেয়া হবে। ভারতের বিনিয়োগ আনতে ইতোমধ্যে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের জন্য আহ্বান করা হবে। এছাড়া লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় দেশের অবকাঠামোখাত উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখতে চায় বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। গত আট বছরে প্রথম ও দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিট বা এলওসি চুক্তির আওতায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করা হয়। তৃতীয় এলওসির আওতায় গত বছর আরও সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ভারত থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে। যা দিয়ে দেশের বড় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। একই সঙ্গে রফতানি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে ভারতীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর এই সফরকে অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী আগামী ২৩-২৪ সেপ্টেম্বর দুদিনের সফরে বাংলাদেশ আসছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তারা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করতে চায়। মূলত বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাই করতে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফরে আসছে। এছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োড় সংক্রান্ত যেসব বাধা ও সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে এবার আলোচনা করা হবে। আশা করা হচ্ছে, প্রতিবেশী এই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার উদ্যোগ থাকবে এবারের সফরে। এদিকে, ভারতীয় ঋণে দেশের বড় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এগুলো হচ্ছে-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রা বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার ও তীর সংরক্ষণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত দ্বৈতগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নতকরণ, বেনাপোল-যশোর-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, ঈশ্বরদীতে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ, কাটিহার-পার্বতীপুর-বরনগর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন তৈরি, মংলা বন্দর উন্নয়ন, চট্টগ্রামে ড্রাই ডক নির্মাণ, মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত চার লেনে সড়ক উন্নীত করা, মোল্লারাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ১ লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ প্রকল্প। এদিকে, এলওসি চুক্তির আওতায় ভারতের কাছ থেকে ১ শতাংশ সুদে আগামী ২০ বছরে ঋণের টাকা পরিশোধের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। ফলে বড় অঙ্কের ঋণের এই টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে পাওয়া গেলে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, সুরেশ প্রভুর এই সফরে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জমি বরাদ্দের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। চলতি বছরের মে মাসে ভারত সফরের সময়ে এসব অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনাকালে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ভারতীয় বিনিয়োগের জন্য জমি বরাদ্দের বিষয়টিও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
×