ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমদানি করা এলএনজিতে চট্টগ্রামে কাটছে গ্যাস সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আমদানি করা এলএনজিতে চট্টগ্রামে কাটছে গ্যাস সঙ্কট

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আমদানি করা এলএনজিতেই (তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস) কাটতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের গ্যাস সঙ্কট। সরবরাহ শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে। নতুন দুটি পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় পুরোদমে এলএনজি সরবরাহ এখনও সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ সঙ্কট পুরোপুরি কেটে যাবে, এমনই আশা করছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। এদিকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রাম গ্যাস সরবরাহ কমানো হয়েছে। এতে করে সরবরাহ বেড়েছে তিতাস গ্যাসের, যার প্রভাব পড়েছে তিতাতের আওতাধীন বিতরণ এলাকায়। কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে দৈনিক ৩শ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে গৃহস্থালিতে উন্নতির পাশাপাশি এখন দুটি সারকারখানা এবং বিদ্যুত উৎপাদনের তিনটি ইউনিটে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট এবং কাফকো (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড), সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) এবং শিকলবাহা পর্যন্ত নতুন পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সক্ষমতার পুরো মাত্রায় গ্যাস সরবরাহ বিলম্বিত হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত যেটুকু গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতেই চট্টগ্রামের চাহিদা মেটাবার জন্য জাতীয় গ্রিডের ওপর চাপ কমেছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদ মজুমদার মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে এখন কোন ধরনের কারিগরি ত্রুটি নেই। অপেক্ষা শুধু নতুন দুটি লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়া। লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়ে গেলেই কর্তৃপক্ষ দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি জানান, আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। কাফকো, সিইউএফএল, শিকলবাহা বিদ্যুত উৎপাদন পর্যন্ত লাইন বসানোর কাজও অনেকটা শেষ। সেখানে শুধু কর্ণফুলী রিভার ক্রসিংয়ের কাজটুকু বাকি আছে। যত দ্রুত সম্ভব সে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪৮০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে কেজিডিসিএল সরবরাহ করতে পারত সর্বোচ্চ ২৮০ থেকে ৩শ মিলিয়ন ঘনফুট। এই কোম্পানির নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বা উত্তোলন ব্যবস্থা না থাকায় সমুদয় গ্যাস সরবরাহ করতে হতো জাতীয় গ্রিড থেকে। এলএনজি যুক্ত হওয়ায় ক্রমান্বয়ে জাতীয় গ্রিডের গ্যাস সরবরাহ হ্রাস করা হচ্ছে। এতে করে তিতাসের গ্যাস বাড়ছে। কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, গত সোমবার তারা গ্যাসের সরবরাহ পেয়েছেন ৩৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট, যা গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই সারকারখানা কাফকো ও সিইউএফএলকে ১শ মিলিয়ন ঘনফুট এবং শিকলবাহার দুটি এবং রাউজানের একটি বিদ্যুত উৎপাদন ইউনিটকে ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে সার কারখানা এবং বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র সচল রয়েছে। এদিকে নতুন দুটি গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে করে আগামী ডিসেম্বর/জানুয়ারি নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি শেষ হলে প্রতিদিনই যুক্ত হবে ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি। চট্টগ্রামের চাহিদা এর চেয়ে বেশি নয় বিধায় সঙ্কট কেটে যাবে। পাশাপাশি চাহিদার হ্রাস বৃদ্ধি সাপেক্ষে কিছু গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া চট্টগ্রামের জন্য যদি জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস নিতে না হয় সেটিকেও বড় ধরনের উন্নতি হিসেবে দেখছে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানটি। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলক এলএনজি সরবরাহ শুরু হয় গত ১৮ আগস্ট। প্রথমে ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ হচ্ছিল। গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তা বেড়ে হয় তিনগুণ, অর্থাৎ ৩শ মিলিয়ন ঘনফুট। চট্টগ্রাম জেলায় সব মিলিয়ে গ্রাহক সংখ্যা ৫ লাখ ৮০ হাজার। শিল্প, বাণিজ্যিক, সারকারখানা, বিদ্যুত কেন্দ্র ও চা বাগানের মতো বৃহৎ গ্রাহকের সংখ্যা ৪ হাজার ৯২টি। রি-ফুয়েলিং স্টেশন রয়েছে ৭০ থেকে ৮০টি। চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট নিরসনে শিল্পোদ্যোক্তা ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এলএনজি আমদানির দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরে। গ্যাসের অভাবে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন ব্যাহত হচ্ছিল। স্থাপনা করা অনেক শিল্প কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছিল না। এই সংকট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১০ সালে গৃহীত হয় এলএনজি প্রকল্প। এরপর ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়। এর দুই বছরের মধ্যেই মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত হয় এলএনজি টার্মিনাল। মধ্যপ্রাচ্যের কাতার থেকে প্রথম দফায় গত ২৪ এপ্রিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯শ ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে যে জাহাজটি মাতারবাড়ি উপকূলে আসে, সেটিই ব্যবহৃত হচ্ছে ফ্লোটিং টার্মিনাল হিসেবে। এ নিয়ে এলএনজিবাহী জাহাজ এসেছে দুটি। তন্মধ্যে দ্বিতীয় জাহাজটি গত ৮ সেপ্টেম্বর ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে আসে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি উপকূলে।
×