ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মানব উন্নয়ন সূচক

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মানব উন্নয়ন সূচক

জাতিসংঘের হিসাবে মানব উন্নয়ন সূচকে এবারও বাংলাদেশ তিন ধাপ এগিয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি আরও বেড়ে গেছে। এর ফলে আকৃষ্ট হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। এ ছাড়া বাড়বে পণ্য, সেবা ও জনশক্তি রফতানি। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ হবে সুগম। বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে ১৬৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। এর আগের বার ২০১৬ সালে তিন ধাপ এগিয়ে ছিল ১৩৯তম অবস্থানে। আয়ুষ্কাল ও মাথাপিছু আয়সহ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। দেশে গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৮ বছর। মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য-আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য এবং জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সূচক তৈরি করেছে জাতিসংঘর উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি)। এ সূচকে প্রতিবেশী ভারত এক ধাপ এগিয়ে ১৩০তম অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমার এক ধাপ পিছিয়ে ১৪৮তম হয়েছে। নেপাল ও পাকিস্তান এক ধাপ পিছিয়ে যথাক্রমে ১৪৯ ও ১৫০তম হয়েছে। এবারও সূচকে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। এবার পর্যায়ক্রমে রয়েছে সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি ও আইসল্যান্ড। সিঙ্গাপুর নবম ও নেদারল্যান্ডস দশম। বহু দেশই মানব উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এবারের তালিকায় ১৮৯ দেশের মধ্যে ৫৯ দেশ খুব উচ্চ মানব উন্নয়ন গ্রুপে রয়েছে। আর ৩৮ দেশ রয়েছে নি¤œমানব উন্নয়ন গ্রুপে। এবারের তালিকায় বাংলাদেশ মধ্যম মানব উন্নয়ন গ্রুপে। ১৮০ দেশকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নি¤œ মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে মধ্যমমানব উন্নয়নের দেশের স্তরে। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার প্রাথমিক স্বীকৃতি আসার পর মানব উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় অর্জন। মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেতে প্রথমেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানব সম্পদের অবস্থান এবং অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততাÑ এই তিন সূচক বিবেচিত হয় মধ্যম আয়ের ক্ষেত্রে। এই তিন সূচকেই বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। মানব সম্পদ সূচকে বিবেচনা করা হয় দেশের মোট জনসমষ্টির কত ভাগ পুষ্টিহীনতার শিকার, শিশু মৃত্যুর হার কত, মাধ্যমিক স্কুলে কতজন লেখাপড়ার সুযোগ পায় এবং বয়স্ক সাক্ষরতার হার কত ইত্যাদি। উল্লিখিত সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১) প্রণয়ন করে সেখানে রয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার অকাক্সক্ষার কথা। এই সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার করা হবে। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড় তোলার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে এই অবস্থান ৩৮তম। এই সময়ের মধ্যে বিশ্বের যে এগারো দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ পর্যায়ে থাকবে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৭ দশমিক ছয় মিলিয়ন হচ্ছে তরুণ সমাজ। যাদের বয়স দশ থেকে চব্বিশ বছর। পরিকল্পিতভাবে এই সংখ্যক যুবকদের আত্মোন্নয়ন ও দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত এবং উজ্জীবিত করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে এর অনেক বড় প্রভাব পড়বে। মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। এই লক্ষ্যে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা, জনসংযুক্তি, মানব সম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অর্জন ধরে রাখার জন্য গুরুত্ব দেয়ার কোন বিকল্প নেই। এর ফলে ঋণমান সক্ষমতায় আরও এগিয়ে যাওয়া যাবে। বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের জন্য এই স্বীকৃতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা অত্যধিক। এটা বাস্তব যে, উন্নয়ন চিন্তাকে আরও এগিয়ে নিতে ভবিষ্যতেও অন্যতম বাহন হবে এই মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন। প্রতিবেদন অনুযায়ী আসল কথা হচ্ছে যে, ব্যবধান কমছে। কিন্তু তার পরও বৈষম্যের মাত্রা এখনও অনেক বেশি। যা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ খুবই প্রয়োজন।
×