ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শেখ হাসিনার বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শেখ হাসিনার বিকল্প নেই

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাঙালী জাতির আদর্শ’ আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অনুসারী ‘বাঙালী জাতি’- এসবই বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ, উন্নয়ন ও মুক্তির পথ ও পাথেয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই যার প্রমাণ তিনি যতবার ক্ষমতায় থেকেছেন ততবারই দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, ঐকান্তিকতা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, অসামান্য পা-িত্য ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ^ পরিম-লে অন্যরকম উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি দেশ-বিদেশে জননন্দিত নেত্রী হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। বিশ^বাসীর জানা আছে, বাংলাদেশ নামক সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যমলাÑ দেশটি বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা। যারা বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস জানেন তারা জানেন ‘বাংলাদেশ’-এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর রক্তে-মগজে-মননে-দর্শনে রাজনীতি ও দেশপ্রেম মিশে আছে কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। শেখ হাসিনা বিশে^র শ্রেষ্ঠ সৎ ৫ জন রাষ্ট্রনেতার মধ্যে তৃতীয় জন। আর অপরদিকে আমাদের জাতির জনক ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে সাধীনতার পারাজিত শক্তিকে সঙ্গে করে উচ্চাভিলাষী ক্ষমতালিপ্সু সামরিক শাসক হয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি এবং যার মৃত্যুর পর যার স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং প্রতিবারই ক্ষমতায় থেকে দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ লুটপাট করে খেয়েছেন- বিশে^র শীর্ষ দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক পরিবারের তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করেছিলেন। সিঙ্গাপুরের আদালতে কার পুত্রদের দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে! আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কোন পরিবারের অর্থপাচার কেলেঙ্কারী প্রকাশিত হয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, সৌদি-আরবসহ বিভিন্ন দেশে কোন প্রধানমন্ত্রী ও তার পুত্রদের অর্থ কেলেঙ্কারি মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে- এদেশের মানুষ তা জানে। বিশ^বাসী মিডিয়া থেকে এটাও জানে যে, কোন পরিবারের বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইয়ে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি, সৌদি-আরবে বাক্স ভর্তি করে অর্থ পাঠাতে পাঠাতে মার্কেটেরও মালিক হয়েছে। কে অমুক অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের অর্থ আত্মসাত করেছে। বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি, গ্যাটকো দুর্নীতি, নাইকো দুর্নীতি, পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি ও প্যারাডাইস পেপার কেলেঙ্কারির সঙ্গে কোন রাজনৈতিক পরিবার সম্পৃক্তÑ কে না জানে। দুবাইভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল দ্য ন্যাশনাল-এর খবরে অভিযোগ করা হয় যে, সৌদি আরবসহ বিশে^র কমপক্ষে ১২টি দেশে ‘ঐ’ পরিবারের ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (৯৬ হাজার কোটি) বিনিয়োগ হয়েছে। এতসব অপরাধ, অস্ত্র চোরাকারবারী, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, গাড়িতে পেট্রোলবোমা হামলাকারী, আগুন সন্ত্রাসী ও হত্যাকারী, জঙ্গীবাদের উসকানিদাতা এ দেশবাসী জানে যে সে কে বা কার দল। কানাডার ফেডারেল আদালতের রায়ে বলা হয়েছে যে, Ñ’বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। ঐ রাজনৈতিক দলের দুর্নীতির কেচ্ছা-কাহিনী বললে লেখা ছাপানোর জায়গা পেপারে হবে না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল কে? যাদের রাজনীতি অপরাধ দিয়েই শুরু, কাজেই তা টিকতে পারে না, পারবেও না। সেরকম রাজনীতির মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদেরও রাষ্ট্রের ভাল ভাল সেক্টরে, এমনকি মন্ত্রী পদে পুনর্বাসিত করেছিল তারা এদেশের চিরশত্রু। তার বা তাদের জনগণের সামনে দাঁড়ানোর কোন অধিকার নেই। ঐ দলীয় নেতা-নেত্রীদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় তারা প্রতিহিংসায় কা-জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। কোথায় বঙ্গবন্ধু আর কোথায় সামরিক শাসক। কোথায় শেখ হাসিনা আর কোথায় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন নেত্রী বেগম ‘ÑÑ’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঐ দলীয় ছোট-বড়, পাতি-অপাতি কর্মীরা টকশোতে বলতে শুনি- ‘শেখ সাহেব’ এবং মানবতাবাদী বিশ^নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শুনি ‘শেখ হাসিনা’। মিথ্যা আত্মাভিমান, গলাবাজি ও আস্ফালন দিয়ে আর যাই হোক অন্তত গণমানুষের মন জয় করা যায় না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য জননন্দিত নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২৭টি পুরস্কার ও পদক অর্জন করেছেন অথচ ঐ দলের নেত্রী কয়টা বা কিরকম পুরস্কার পেয়েছেন তা পৃথিবীর মানুষ ভাল করেই জানে। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন বলেছেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদান অনন্য ও বর্তমান বিশে^র জন্য অবিস্মরণীয়। এভাবে কর্মগুণে কেউ সম্মানিত হয় আর কেউ চুরির দায়ে অপমানিতও হয়। এটা বুঝতে হবে বাঁশের গোড়া দিয়ে বাঁশই জন্মায়। ‘কিসের সঙ্গে কিসের তুলনা’- একটা গ্রামীণ প্রবাদ বাক্যই রয়েছে। শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি, সাহস, মনোবল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ^বাসী হতবাক। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স- এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশে^র ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে উন্নত দেশে পরিণত হবে। উল্লেখ্য, তার পূর্বেই অর্থাৎ ২০২১ সালেই বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪১ সালেই ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশে^ আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে দেশে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার। জরিপের তথ্যানুযায়ী দেশে ৫ বছরের ব্যবধানে ৪ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ২২ শতাংশ। মাতৃমৃত্যুর হারও কমেছে। গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭১.৬ বছর। স্বাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭১ শতাংশ। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছর ধরে মাথাপিছু আয় বেড়ে চলেছে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে চূড়ান্ত মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার। এর আগের ২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ১৮৪ ডলার এবং ১ হাজার ৫৪ ডলার। বর্তমান মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলার। আমাদের দেশ যে দ্রুত উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে- এটি তারই প্রমাণ। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশে^র শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে অত্যন্ত শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে তা অত্যন্ত পরিষ্কার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল ১০.৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অথচ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আবার ২০০৬-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বর্তমানে ৩৩.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে। দেশে ব্যাপক বেকার সমস্যা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঐ সমস্ত রাজাকার-আল বদরের সঙ্গীদের আমলে হাহাকার ছিল। এখন তো মানুষের জীবনে সব ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। ২০০৯ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ডবল ডিজিটে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশ। ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুত উৎপাদন ছিল ৩২০০ মেগাওয়াট, বর্তমানে তা প্রায় ১৬১৪৯ মেগাওয়াট। দেশের ৮৩% মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় রয়েছে। ১১৯টি নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আজ দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’। দেশ যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাযাত্রার মাহসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে তা চরম সত্য। আলোচনা প্রসঙ্গে, বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন এক নাগাড়ে। জননেত্রী যদি ক্ষমতায় থাকেন তাহলে এদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না বরং সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো ঝকঝকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই। এটা সত্য যে, শেখ হাসিনাই পারবেন উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। ওয়াশিংটনভিত্তিক জরিপের ফলাফলে এসেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থক ৬৬%। মানবতাবাদী নেত্রী, গণমানুষের নেত্রী তুমি এগিয়ে যাও, তোমার সঙ্গে আমরা সাধারণ মানুষ আছি। জয় তোমার অনিবার্য। লেখক : ডিন, আইন অনুষদ আইন উপদেষ্টা ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
×