ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভেষজ প্রতারণা বন্ধে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভেষজ প্রতারণা বন্ধে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার তাগিদ

ডি. এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ ভেষজ পুরনো চিকিৎসা ব্যবস্থা হলেও সর্বত্র গাছপালা ও বন উজাড় করতে গিয়ে কাটা পড়ছে ভেষজ উদ্ভিদ। অতি সাধারণ সহজ ভেষজ উদ্ভিদও নিঃশেষ হতে চলেছে। যার কারণে এসব ভেষজ উদ্ভিদ এখন কাঁচামাল হিসেবেও পাওয়া যাচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে কাঁচামাল সংগ্রহ করে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে। ভেষজ ওষুধের সহজলভ্যতা ও কার্যকারিতায় উন্নত চিকিৎসার প্রসার ঘটেছে। মানুষের আগ্রহ বাড়ছে ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আয়ুর্বেদী ও ভেষজ প্রতারণা। এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, ১৯৮০ সালে সারাবিশ্বে ভেষজ ওষুধ বিক্রি হয়েছে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। ১৯৯০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ বিলিয়নে। ২০০৩ সালে বিশ্বে ভেষজ ওষুধ বিক্রি হয় ১’শত বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৯৭টি ইউনানী, ২০৪টি আয়ুর্বেদী এবং ৭৮টি হোমিওপ্যাথ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান যে সব ভেষজ ওষুধ তৈরি করছে তার বার্ষিক বাজার মূল্য প্রায় ৩’শ ৫০ কোটি টাকা। এর বাজার দেশে ও বিদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বেশ কিছু ভেষজ প্রতিষ্ঠান এই দেশের বাজার থেকে ঔষধি কাঁচামাল সংগ্রহ করে ওষুধ তৈরি করছে। আর এ সমস্ত ঔষধি গাছের প্রায় অর্ধেক বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। আমদানিকৃত বেশ কিছু ঔষধি গাছ আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী এবং এসব গাছ এদেশে একটু আগ্রহী হলেই জন্মানো সম্ভব। যে সব গাছ আমাদের আবহাওয়াতে জন্ম দেয়া সম্ভব নয়, তা আমদানি অবশ্যই করতে হবে। তবে এখানে আশঙ্কার কথা অনেক ঔষধি গাছ, গাছের ছাল আমদানি করে দেখা গেছে ভেজাল মিশ্রিত। যা শনাক্ত করা যায় না। আমরা না জেনে এসব কাঁচামাল কিনছি এবং ওষুধ শিল্পে ব্যবহার করছি। এ অবস্থা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ বিশ্বস্ত সরবরাহকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হবে। আধুনিক এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এসব কেমিক্যাল ওষুধ প্রতিনিয়ত ক্ষতি করছে। আর এই সুযোগে কিছু টাউট বাটপার মাঠে নেমে পড়েছে। তারা ভেষজের নামে বিভিন্ন দেশের লোগো ব্যবহার করে বড় বড় দোকান খুলে নিত্য প্রতারণা করে চলেছে। অথচ এদের নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও একাডেমিক সনদ। তাই যে সব ভেষজ ও আয়ুর্বেদী বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ দেশে রয়েছে সেখান থেকে বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিদের উপযুক্ত শিক্ষা, ডিগ্রী অর্জন ও সনদ ব্যবহার করতে পারলেই এই জালিয়াতি বা প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব। একে ভেষজ প্রতারণা বললেও ভুল হবে। তাই এলোপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারলে যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা এসব ভুয়া ভেষজ প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে তাদের প্রতারণা বন্ধ করবে। দেশে ধীরে ধীরে বৈদেশিক ভেষজ কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এ দেশে ঔষধি গাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ফলদ গাছের মতো ভেষজ ঔষুধি গাছ বেশি বেশি করে লাগাতে হবে। ভেষজ থেকে কাক্সিক্ষত সুফল পাবার বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। পরিসংখ্যান থাকতে হবে গাছ সংরক্ষণে। যে সমস্ত ভেষজ গাছ অধিক প্রয়োজন তার উৎপাদন পরিকল্পনা সরকারকে করতে হবে। দেশের বৈদ্য, কবিরাজ, ওষুধ সরবরাহকারী বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যে সব ভেষজ গাছে অধিক মুনাফা ও দাম বেশি কৃষকদের কাছে সে সব খবর পৌঁছে দিতে হবে। গাছ শনাক্ত করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ ডিগ্রীধারী উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের কাজে লাগাতে হবে। বিদেশে ভেষজ গাছ রফতানিতে উৎসাহ যোগাতে হবে। বন উজাড়ের নামে ভেষজ গাছ যাতে কাটাছেঁড়া না হয়, যে বিষয়ে অধিক সতর্ক অবস্থান নিতে হবে বিজ্ঞানীদের। হারবালের ব্যবহার বৃদ্ধিসহ ভেষজ গাছ উৎপাদনে আলাদা মন্ত্রণালয় গড়ে না উঠলে আমাদের দেশের ভেষজ প্রতারণা বন্ধ হবে না এটা এখন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে।
×