ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোচ হয়ে চীন যাচ্ছেন টেনিস তারকা প্রীতি

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কোচ হয়ে চীন যাচ্ছেন টেনিস তারকা প্রীতি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল দেশ কোনটি? মহাপ্রাচীরের দেশ, ড্রাগনের দেশ, মার্শাল আর্টের দেশ কোনটি? উত্তরটা খুবই সহজ। চীন বা গণচীন। ইংরেজীতে চায়না। ‘চীন’ নামটি আসলে বিদেশীদের দেয়া। এটি সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের ‘ছিন’ রাজবংশের নামের বিকৃত রূপ। চীনারা তাদের দেশকে ‘চুংকুও’ নামে ডাকে, যার অর্থ ‘মধ্যদেশ’ বা ‘মধ্যবর্তী রাজ্য’। কাগজ, ছাপাখানা, বারুদ, চীনামাটি, রেশম এবং দিকনির্ণয়ী কম্পাস ... সবই চীনে প্রথম উদ্ভাবিত হয় এবং সেখান থেকে বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। পাঠক নিশ্চয়ই ভ্রু কুচকে মনে মনে ভাবতে পারেনÑ খেলার পাতায় চীন সম্পর্কে এত শিক্ষামূলক তথ্য দেয়ার হেতু কি? আসলে ব্যাপারটি হচ্ছে এই চীনেই আজ বিমানযোগে যাচ্ছেন বাংলাদেশের শীর্ষ মহিলা টেনিস তারকা আফরানা ইসলাম প্রীতি। না, খেলতে নয়, খেলা শেখাতে! ঘরোয়া টেনিসে যিনি প্রীতির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী, সেই ইশিতা আফরোজ রিতু হচ্ছেন দেশের প্রথম মহিলা টেনিস কোচ (বিকেএসপির হয়ে)। বছর তিনেক ধরেই কাজ করছেন। আর প্রীতি হচ্ছেন বিদেশের মাটিতে প্রথম মহিলা বাংলাদেশী টেনিস কোচ। আগামী ২১/২২ সেপ্টেম্বর প্রীতি যাচ্ছেন চীনের গুয়াংডংয়ে (যদিও ফ্লাইট ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর, কিন্তু চীনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিমানযাত্রা)। পাঠকের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছেÑ তাহলে কি খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টেনে কোচ হয়ে গেলেন প্রীতি? উত্তরটা হলো, না। এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে বাগেরহাটের মেয়ে প্রীতি বলেন, ‘কোচ হলেও খেলোয়াড়ি স্বত্বাকে বাঁচিয়ে রাখব। সুযোগ পেলেই ওখানকার (গুয়াংডং) স্থানীয় এবং আইটিএফ টুর্নামেন্টগুলোতে খেলার চেষ্টা করব।’ গুয়াংডংয়ে অবস্থিত একটি টেনিস একাডেমির কোচ হিসেবে কাজ করবেন ২০১১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া এবং ২০১৫ সালে বিকেএসপির সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা প্রীতি। চুক্তি আপাতত এক বছরের। তবে পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে এটা বাড়িয়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত করা যাবে। বেতন মাসে আপাতত ৮০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে পারফর্মেন্স ভাল হলে আরও ২০ হাজার বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ওখানে সপ্তাহে ছয়দিন কোচিং করাতে হবে সেরেনা উইলিয়ামস এবং মারিয়া শারাপোভাকে আদর্শ মানা প্রীতি। তবে কত ঘণ্টা করে এবং কতজনকে কোচিং করাতে হবে, সেটা ওখানে গিয়েই বিস্তারিত জানতে পারবেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে প্রীতি আরও জানান, ‘ওখানে আরও অনেক বাংলাদেশী টেনিস কোচ হিসেবে কাজ করছেন। তবে আমিই প্রথম মহিলা কোচ হিসেবে ওখানে যাচ্ছি। আমার সঙ্গে কোচ হিসেবে যাচ্ছেন বিকেএসপির খেলোয়াড় মাহিন রেজা খানও। আরেকটা ব্যাপারÑ বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান টেনিস খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই আমি চীনে কোচ হয়ে যাচ্ছি। এ রকম নজির কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। চীনে যাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় অবদান আমার বিকেএসপির টেনিস কোচ শ্রদ্ধেয় রোকনউদ্দিন আহমেদ স্যারের।’ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে ছেড়ে দীর্ঘসময়ের জন্য থাকতে হবে চীনে। কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন? খারাপ লাগবে না? ‘দেশকে অনেক মিস করব। দেশের চেয়ে শান্তি আর নেই। এই প্রথম চীনে যাচ্ছি। আমার চীনে যাওয়ার ব্যাপারে আমার পরিবার একটু শঙ্কায় আছে। তবে আমি মোটেও ভয় পাচ্ছি না। বরং তাদের ভরসা দিয়েছি।’ পাঠকের মনে আরেকটি প্রশ্ন উঠতে পারেÑ কোন কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা ছাড়াই কি চীনে যাচ্ছেন প্রীতি? এ প্রসঙ্গে সাত বছরের ক্যারিয়ারে সব মিলে এককে ৪৪টি শিরোপা জেতা প্রীতির ভাষ্য, ‘এ বছরই গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে তিন মাস কোচ হিসেবে কাজ করেছি। এছাড়া একটি কোচিং কোর্স করারও অভিজ্ঞতা আছে। আসলে গুয়াংডং টেনিস একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছে একটা কারণেইÑ আমি বাংলাদেশের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড় বলে।’ উল্লেখ্য, টেনিসে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য এবং খেলতে প্রীতি এ পর্যন্ত ভারত, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে গিয়েছেন। আর এবার চীনে যাবেন কোচ হিসেবে। এত খেলা থাকতে টেনিসকে বেছে নিলেন কেন? খুলনার বাগেরহাটের মেয়ে প্রীতির ব্যাখ্যা, ‘টেনিস অনেক স্মার্ট খেলা। আমাদের দেশে হয় তো এ খেলাটির কোন মূল্য নেই, কিন্তু পাশ্চাত্যে খেলাটির অনেক মূল্য। টেনিসই আমার লাইফ পার্টনার, আমার সবকিছু।’
×