ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

অবশেষে স্বরূপে রোনাল্ডো

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অবশেষে স্বরূপে রোনাল্ডো

অবশেষে অপেক্ষা ফুরাল রোনাল্ডোর। গোলের দেখা পেলেন নতুন ঠিকানায়। একটি নয়, রবিবার সাসুলোর বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন তিনি। তার দুই গোলের সৌজন্যেই এদিন জুভেন্টাস ২-১ ব্যবধানে হারায় সাসুলোকে। সেই সঙ্গে নতুন মৌসুমের প্রথম চার ম্যাচের সবকটিতেই জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ইতালিয়ান লীগ সিরি’এর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানটিও দখল করে রাখে দলটি। সেইসঙ্গে তুখোর ফর্ম নিয়েই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের মিশন শুরু করেন জুভেন্টাসের পর্তুগীজ সুপারস্টার। স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে দীর্ঘ নয় বছর কাটানোর পর গত গ্রীষ্মকালীন দলবদলেই জুভেন্টাসে যোগ দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। কিন্তু নতুন ঠিকানায় গোল পাচ্ছিলেন না তিনি। জুভেন্টাসের জার্সিতে প্রথম তিন ম্যাচ খেললেও গোলবঞ্চিত থাকেন পর্তুগিজ এই সুপারস্টার। ২৭০ মিনিট গোল না পাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েন রোনাল্ডো। কিন্তু প্রিয় শিষ্যের ওপর আস্থা রেখেছিলেন জুভেন্টাসের অভিজ্ঞ কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রি। শুধু তাই নয়, সাসুলোর বিপক্ষে রোনাল্ডো গোল পাবেন বলেও গ্যারেন্টি দেন তিনি। রোনাল্ডোও কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে ভুল করেননি। সাসুলোর বিপক্ষে ম্যাচের ৫০ মিনিটে প্রথম গোল করে জুভেন্টাসকে এগিয়ে দেন রোনাল্ডো। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৫ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এবারও গোলদাতা সেই রোনাল্ডো। প্রথম তিন ম্যাচে ২৭০ মিনিট খেলে গোল না পাওয়া রোনাল্ডো এদিন মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানেই প্রতিপক্ষের জালে দুবার বল জড়ান। এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আর কোন গোল না হলে ২-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ার স্বপ্ন দেখছিল স্বাগতিক সমর্থকরা। কিন্তু ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের ৯০+১ মিনিটে সাসুলোর বাবাকার গোল করলে ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সিরিএর বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। দুর্ভাগ্য রোনাল্ডোর। এই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করারও সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক এই তারকা ফুটবলার। হ্যাটট্রিক না হলেও এই ম্যাচে বিরল এক কীর্তি গড়েছেন রোনাল্ডো। একুশ শতকের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লীগে ৪০০ গোল করার মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। সব মিলিয়ে ইউরোপের পঞ্চম ফুটবলার হিসেবে এই রেকর্ড গড়েন ‘সিআর সেভেন’। সাসুলোর বিপক্ষে জোড়া গোলের পর রোনাল্ডো অবশ্য নিজের স্বস্তি লুকাননি। তিনি বলেন, ‘এটাই ফুটবল। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো দল জিতেছে। এটা ঠিক যে, রিয়াল মাদ্রিদ নিয়ে এত কথাবার্তার পর গোল না পাওয়ায় একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। এ সময়টায় আমাকে সহযোগিতা করার জন্য সতীর্থদের ধন্যবাদ। আমি জানতাম ভালভাবেই পরিশ্রম করছি এবং এটা এক সময় না এক সময় হবেই। আমি ইতালিয়ান ফুটবলের সঙ্গে ভালই মানিয়ে নিচ্ছি।’ মিডিয়া সেটের সঙ্গে কথোপকথনের সময় রোনাল্ডো আরও বলেন, ‘আমি খুব খুশি, আমরা বেশ ভাল শুরু করেছি মৌসুমের। সাসুলোর রক্ষণ খুব ভাল ছিল। কিন্তু আমরা খুব ভাল খেলেছি এবং জয় আমাদের প্রাপ্য ছিল। আমি খুব করে চাচ্ছিলাম প্রথম গোলটি। আমি খুশি অবশেষে জাল খুঁজে পেয়েছি।’ মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়েছে ইউরোপ সেরার টুর্নামেন্ট উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের লড়াই। ইতালিয়ান লীগে গত অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে এককভাবে রাজত্ব করা জুভেন্টাসের এবার মূল লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ। এ কারণেই তো নিজেদের দলবদলের রেকর্ড ভেঙে ৩৩ বছরের রোনালদোকে ১০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে দলে টেনেছে তারা। চ্যাম্পিয়নস লীগ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও জানাচ্ছেন তিনি প্রস্তুত নতুন ক্লাবকে শিরোপা উপহার দিতে। সিআর সেভেনের মতে, ‘চ্যাম্পিয়নস লীগ আমার প্রিয় প্রতিযোগিতা। এটা খুব কঠিন গ্রুপ। আমরা জানি ভাল করতে পারব এবং জুভ সব সময় সেরা হওয়ার দিকেই মনোযোগ দেয়।’ আজই স্পেনে দেখা যাবে রোনাল্ডোকে। কেননা প্রথম ম্যাচ যে হচ্ছে ভ্যালেন্সিয়ার মাঠেই। জুভেন্টাসের অন্য গ্রুপসঙ্গীরা হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইয়ং বয়েজ। এদিকে, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর ব্যাপারে মুখ খুলেছেন মেসিত ওজিলও। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক সতীর্থ মেসুত ওজিলের মতে তার সঙ্গে খেলা সব ফুটবলারদের মধ্যে রোনাল্ডোই সর্বকালের সেরা ফুটবলার। এই জুটি মিলে মাদ্রিদের হয়ে ২০১১-১২ মৌসুমে লা লিগা শিরোপা জয় করেছেন। কিন্তু তারপর থেকেই তারকা এই জুটি ভেঙ্গে যায়। ২০১৩ সালে ওজিল আর্সেনালে পাড়ি জমান। আর্সেনালেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন ওজিল। নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে ২-১ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে গানার্সদের হয়ে ২০০তম গোল করেছেন জার্মান তারকা ওজিল। আর্সেনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক আর্টিকেলে ওজিল রোনাল্ডোর পেশাদারিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। কিভাবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের আরও উন্নতি করা যায় এই শিক্ষাই তিনি রোনাল্ডোর কাছ থেকে পেয়েছেন। সেখানে ওজিল লিখেছেন, ‘মানুষ সবসময়ই আমার কাছে জানতে চেয়েছে রোনাল্ডোর সঙ্গে খেলার মধ্যে আলাদা কি আছে। আমি তাদের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র একটি কথাই বলতে চাই, তার মতো মানুষ আমি কোনদিনই দেখিনি। সে নিজেও যেমন কঠোর পরিশ্রম করে অন্যদেরও সেই শিক্ষাই দেয়। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সে সবসময়ই অনুশীলন মাঠে আসে, আর শেষ ব্যক্তি হিসেবে মাঠ ত্যাগ করে। সে খুবই পেশাদার এবং সবসময়ই জেতার জন্যই মাঠে নামে, এমনকি অনুশীলন ম্যাচেও। অবশ্যই আমি সবসময়ই দেখতাম সে কি করে, এমনকি অনেক সময় নিজের অনুশীলন বাদ দিয়ে তার শূটিং কৌশলের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। সত্যিকার অর্থেই আমি তার সঙ্গে খেলাটা দারুণ উপভোগ করেছি। কারণ সে মাঠে আমাকে কিভাবে উন্নতি করা যায় সেজন্য সহযোগিতা করেছেন। সে একজন দারুণ বন্ধু। আমি তাকে অনেক গোলে সহযোগিতা করেছি এবং সে কখনই আমাকে সেই বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়নি। তার সঙ্গে খেলাটা সবসময়ই সহজ। কারণ তখন নিজেকে খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে হয় না। এমনকি তাকে যদি শুধুমাত্র দুটি পাস দেয়া যায় তবে সে দুটোতেই গোল করবে। আর সে কারণেই বর্তমানে সে সর্বকালের সেরা ফুটবলার।’ ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে খেলেছেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। রোনাল্ডোর সঙ্গে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দীর্ঘ চারটি বছর একত্রে খেলার পরই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে দেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। এরপর নেপোলি ঘুরে ২০১৬ সালে জুভেন্টাসে নতুন করে ঠিকানা গড়েন ৩০ বছরের এই তারকা ফুটবলার। গত গ্রীষ্মকালীন দলবদলে রিয়ালের সেই সতীর্থ রোনাল্ডো আবারও জুভেন্টাসে সঙ্গী হন হিগুয়েইনের। সিআর সেভেন জুভেন্টাসে যোগ দেয়ার পরই যেন কপাল পুড়ে হিগুয়েনের। জুভেন্টাসকেও বিদায় বলে ধারে এসি মিলানে যোগ দেন তিনি। রোনাল্ডোর মতো নতুন ঠিকানায় গোল-খরায় ভুগছিলেন হিগুয়েন। তবে প্রথম দুই ম্যাচে গোল না পেলেও তৃতীয় ম্যাচেই প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পেলেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার।
×