ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ফিরেছেন বিষণ্ণ তামিম

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশে ফিরেছেন বিষণ্ণ তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইনজুরিতে এশিয়া কাপে খেলা শেষ হয়ে গেছে তামিম ইকবালের। বাংলাদেশ ওপেনার তাই মঙ্গলবার বিকেলেই দেশে ফিরেছেন। বিষণœœ হয়েই তাকে ফিরতে হয়েছে। হতাশা নিয়েই ফিরতে হয়েছে। কত আশা ছিল। ডান হাতের আঙ্গুলে চোট থাকা স্বত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলতে নামেন। কিন্তু বামহাতের আঙ্গুলে চোট পেয়ে যান। সেই চোট পাওয়ার পরও শেষদিকে আবার ব্যাট হাতে নামেন। সেই দৃশ্য এখনও সবার চোখে ভাসে। কি নজিরই না দেখিয়ে দিয়েছেন তামিম। তার এমন কীর্তি দেশ, দেশের মানুষ এবং ক্রিকেটের সঙ্গে থাকা সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। তামিম বীরের বেশেই ফিরেছেন। কিন্তু এরপরও তিনি আনন্দ নিয়ে ফিরতে পারেননি। বিমানবন্দরে বিষণœœ দৃষ্টি তার। হতাশা চোখে মুখে স্পষ্ট। তিনি যে এশিয়া কাপে আর দলের সঙ্গে নেই। বিমান ভ্রমণে ক্লান্ত তিনি। এরপরও সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে পিছপা হননি। বললেন, ‘সত্যি কথা এশিয়া কাপ নিয়ে আমার এবার অনেক বড় আশা ছিল। ব্যক্তিগতভাবেও। কিন্তু এভাবে প্রথম ম্যাচে ইনজুরি নিয়ে ফিরে আসা ভাল লাগার কথা নয়। অবশ্যই অনেক অনেক হতাশ। এমন একটা ইনজুরি, অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে না। এখন উচিত যতদ্রুত সম্ভব সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরে আসা।’ ইনজুরির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে তামিম বলেন, ‘ইনজুরির আপডেট যেটা ইংল্যান্ড থেকে পেয়েছি, সেটা হলো এই মুহূর্তে কোন অপারেশনের দরকার নেই। প্রথম এক সপ্তাহ একটু ক্রিটিক্যাল। এক সপ্তাহ পর একটি এক্সরে হবে। এক্সরেতে যদি দেখা যায় হিলিং ভাল হচ্ছে তাহলে কোন সমস্যা নেই। আর যদি হিলিংটা একটু এদিক ওদিক হচ্ছে তাহলে অপারেশনের দরকার হতে পারে।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ভাঙ্গা হাত নিয়েও তামিম যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা বাংলাদেশ ক্রিকেটে চিরকাল অটুট থাকবে। দেশের স্বার্থে কি সাহসটাই না দেখিয়েছেন। কিভাবে তা সম্ভব হলো? তামিম নিজেই সেই কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘বোলার যখন আমার দিকে দৌড়ে আসছিল ওই ১০ সেকেন্ডে আমি খুব সাহস পাচ্ছিলাম। মাঠে নামার সময় দর্শকদের প্রতিটি চিৎকার আমাকে সাহস যোগাচ্ছিল। আমি হয়তো আউট হয়ে যেতে পারতাম বা যে কোন কিছুই হতে পারতো, তবে ওই মুহূর্তে আমি দল এবং দেশের জন্য পুরোপুরি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম।’ তামিম অনেক বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন। হাতে বল লাগলে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেতে পারত। তামিম শোনালেন সেই গল্পও, ‘এখন মনে হচ্ছে খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কাজটা। আঘাত পাওয়া হাতটা আমার পেছনে ছিল কিন্তু যদি খেয়াল করে থাকেন, শট খেলার সময় ওই হাত সামনে চলে আসে আর বলটি মিস করলেই আমার ওই হাতেই আবার লাগতো। মাশরাফি ভাই যখন আমাকে নামতে বললেন, আমি ভেবেছিলাম তিনি মজা করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা আমার ছিল। ভাবনা ছিল আমি ননস্ট্রাইকে থাকব। কিন্তু সেটা হলো না। রুবেল যখন ক্রিজে ছিল আমি তখন প্যাডআপ করা শুরু করি। মাশরাফি ভাই আমার গ্লাভস কেটে দেন। জীবনে প্রথম অন্য কেউ আমাকে গার্ড পরিয়ে দিয়েছে! মুমিনুল এবং অন্যরা আমাকে প্যাড পরতে সাহায্য করে। সবাই আমাকে তখন দারুণ সহায়তা করছিল, সাহস দিচ্ছিল। যখন মুস্তাফিজ আউট হলো তখন পর্যন্তও নিশ্চিত ছিলাম না নামব কি-না। আমি কিছু চিন্তা না করেই নেমে পড়লাম। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় আমি নিশ্চিত কিনা, আমি দ্বিধাহীন ছিলাম। স্টেডিয়ামে দর্শকদের চিৎকারে আমি সাহস পাচ্ছিলাম। এই এশিয়া কাপ নিয়ে আমার অনেক উচ্চাশা ছিল এবং আমি ওই মুহূর্তে আবেগের বশেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যদি আমি এক বল খেললে দল আরও ৫ কিংবা ১০ রান আসে এবং সেটা দলের উপকারে আসে, তাহলে কেন নয়? কেউ হয়তো আশা করেনি যে আমি ১ বল খেললে অপর প্রান্ত থেকে ৩২ রান আসবে। মুশফিক অসাধারণভাবে শেষ দিকটা সামলেছে। আমার মনে হয় না আমার জীবনে এমন দারুণ অভিজ্ঞতা আগে হয়েছে। এখন আমি সবার প্রতিক্রিয়া দেখছি, কিন্তু আমি যখন ব্যাট করতে নামছিলাম এসব কোন কিছুই তখন আমার মাথায় ছিল না। আমি শুধু আমার দল এবং দেশের কথা ভেবে নেমেছিলাম।’
×