ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফসলি জমি রক্ষার্থে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধের দাবি

প্রকাশিত: ২১:৩১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ফসলি জমি রক্ষার্থে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধের দাবি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ আজ বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের আয়োজনে ‘পোড়া ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।এ-সময়ে আলোচকরা, চীন, থ্যাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক উন্নয়নশীল দেশেই প্রচলিত ইটের বদলে ভবন নির্মাণে বালি, সিমেন্ট, নুড়ি পাথর দিয়ে বানানো ব্লক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে যেমন কমছে কার্বন নির্গমন অন্যদিকে রক্ষা পাচ্ছে ফসলি জমি। এসব উল্লেখ করে ২০২০ সালের পর ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিচার্স ইন্সিটিটিউটের এক তথ্য উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, দেশে এখন বছরে কম করে হলেও ১৭ দশমিক ২ বিলিয়ন পিস ইট তৈরি হচ্ছে। প্রতি মিলিয়ন ইট তৈরিতে পোড়াতে হয় ২৪০ মিলিয়ন টন কয়লা। কয়লার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে বনভূমি ধ্বংস করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও বাঁশ। ইটভাটাগুলো থেকে বছর কম করে হলেও ৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে, যা দেশের মোট কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের প্রায় ২৩ শতাংশ। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ একর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ১৯৮৪ সালে দেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩৮ হাজার একর। ১৯৯৭ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার একরে এবং সর্বোপরি ২০১২ সালে বাংলাদেশের আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫৪ হাজার একর। প্রতি বছর জনসংখ্যা বাড়তির কারণে বাড়তি আবাসন, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাঠামো নির্মাণে ভূমির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আলোচকরা আরও বলেন, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ভবন নির্মাণে বালি, সিমেন্ট ও নুড়ি পাথর দিয়ে ব্লক ব্যবহার করছে। এতে করে একদিকে যেমন কমছে কার্বন নির্গমন অন্যদিকে রক্ষা পাচ্ছে ফসলি জমি। আমাদের দেশে কংক্রিট ব্লক ব্যবহার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। নদী থেকে ড্রেজিং করা বালির সঙ্গে সিমেন্ট এবং পাথর কুঁচি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে এসব ব্লক। যা পোড়ানোর প্রয়োজন নেই। ইটের চেয়ে বহুগুণ কার্যকরীসম্পন্ন এই কংক্রিট ব্লক টেকসই, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব।দেশের সার্বিক পরিবেশ ও ফসলি জমি রক্ষাকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা আশা করি, বর্তমান জনবান্ধব সরকার একটি সময়োপযোগী নীতিমালা গ্রহণ করে ইটের পরিবর্তে কংক্রিট ব্লক ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করবে। সেমিনারে অংশ নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, টেকসই উন্নয়নে পোড়ানো ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক। কোনো ইট, খোয়া দিয়ে রাস্তা তৈরি করবেন না। কারণ এটা এটা দীর্ঘস্থায়ী না। এসবের জন্য আগে ইটের ভাটা বন্ধ করা জরুরি। অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে সব সরকারি ও আধা-সরকারি ভবনে ইট ব্যবহার বন্ধ করা; ২০২০ সালের পর ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধ করা; ২০২২ সালের পর সকল জেলা শহরে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধ করা ও ইটের বিকল্প যেকোনো প্রকার ব্লক তৈরির ফ্যাক্টরিকে ন্যূনতম ১০ বছরের জন্য সকল প্রকার ট্যাক্স ও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল, সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ রেডিনিক্স কংক্রিট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল, নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়াজ রহমান, আদিলুর রহমান প্রমুখ।
×