ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক পরিবহন বিল পাস ॥ সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সড়ক পরিবহন বিল পাস ॥ সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

সংসদ রিপোর্টার ॥ কোন ব্যক্তির বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদ- বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান বহাল রেখে জাতীয় সংসদে ‘সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮’ পাস হয়েছে। বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু ঘটলে সেক্ষেত্রে দ-বিধির ৩০২ ধারায় মামলা হবে, এ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, মোঃ ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন, বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, বেগম মাহজাবীন মোরশেদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম রওশন আরা মান্নান ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী। কিন্ত তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। তারা বিলের বিভিন্ন ধারায় সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয়নি। জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব উত্থাপনকালে বিরোধী দলীয় সদস্যরা বলেন, নিরাপদ সড়ক নেই। সড়কে প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঘটছে। সারাদেশে সড়কে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। স্কুল শিক্ষার্থীরা তা আমাদের চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী সরকারও বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়েছে। যে কারণে দ্রুততার সঙ্গে এই আইনটি পাসের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আইনটি পাসের পর হরতাল-অবরোধ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিকভাবে লাইসেন্স দিতে হবে। আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করেছে বলে এই বিলটি তড়িঘড়ি করে সংসদে আনা হয়েছে এটা ঠিক না। বিলটি দেড় বছর আগে মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়া হয়েছে। ৫৭ পৃষ্ঠার এই বিল এক দিনে আসেনি। অনেক আলাপ-আলোচনার সোনালি ফসল এই বিলটি। বিলে শাস্তির বিধান বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, কেউ ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা ঘটালে সেই মামলা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ধারায় বিচার হবে। আর সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। ফলে এই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর নয়, মৃত্যুদ-। পাস হওয়া বিলে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধে বলা হয়েছে,‘এই আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন মোটরযান চালনাজনিত কোন দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোন ব্যক্তি আহত হইলে বা তাহার প্রাণহানি ঘটিলে তৎসংক্রান্ত অপরাধসমূহ পেনাল কোড ১৮৬০ (এ্যাক্ট নং এক্সএলভি অফ ১৮৬০) এর এতদসংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে’। সেখানে শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহাই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত মোটরযান চালানোর কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হইলে বা তাহার প্রাণহানি ঘটিলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ বৎসরের কারাদ- বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হইবেন’। বিলে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে তিন বছরের কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার ব্যবস্থাও থাকবে আইনে। নির্ধারিত পয়েন্টের নিচে গেলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। চালককে নতুন করে আবার লাইসেন্স নিতে হবে। বিলে ব্যক্তিগত গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই অন্তত ১৮ বছর রাখা হয়েছে। তবে পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। সংসদে উত্থাপিত বিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পাসের শর্ত রাখা হয়েছে। আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। নতুন আইনের সহকারী হতেও শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। সহকারীর ৫ম শ্রেণী পাসের সার্টিফিকেট থাকতে হবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না। এছাড়া সহকারী হতে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্সের বিধানও থাকছে। বিলে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ- দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সহকারীরও শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে বিলে। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বিলের বিধান অনুযায়ী গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না চালক। এই বিধান অমান্য করলে এক মাসের কারাদ- বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। এছাড়া ছয় মাসের কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে চালককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পুলিশকে। নতুন আইনের বিধি অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার বিধান রাখা হয়েছে বিলে। বিলের বিধান অনুযায়ী লাইসেন্সে থাকবে মোট ১২ পয়েন্ট। বিভিন্ন বিধি অমান্যে কাটা যাবে এই পয়েন্ট। পয়েন্ট শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স। এরপর চালকে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হবে।
×