ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রহ্মপুত্র পারে জয়নুল উদ্যান

দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, চরকি ঘোড়ার গাড়ি, টমটম চিড়িয়াখানা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, চরকি ঘোড়ার গাড়ি, টমটম চিড়িয়াখানা

বাবুল হোসেন ॥ ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্র পারের হাজারো বৃক্ষরাজির ছায়া শীতল পরিবেশের শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যানে প্রতিদিন প্রকৃতি প্রেমিকদের ঢল নামছে। উদ্যানের ভেতরে বাইরে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, নাগরদোলা, চরকি, হারিয়ে যাওয়া ঘোড়ার গাড়ি টমটম, মিনি চিড়িয়াখানা, দোলনা, খেলনা ও ব্রহ্মপুত্রের বুকে আবহমান বাংলার ছবি পালতোলা নৌকাসহ বিনোদনের নানা আয়োজন শিশু কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষকে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবারের ছুটির দিনসহ ঈদ কিংবা পুজোয় হাজারো মানুষের ঢল জয়নুল উদ্যানকে উৎসবমুখর করে তুলছে। আর বাংলা বর্ষবরণের দিনে এই উদ্যানে ঢল নামছে লাখও মানুষের। ময়মনসিংহ পৌর কর্তৃপক্ষ মানুষকে নির্মল আনন্দ দিতে উদ্যানকে সাজিয়েছে নতুনরূপে। ইতোমধ্যে উদ্যানের ভেতরে দর্শনার্থীদের বিনোদন ও বসার ব্যবস্থাসহ পৌর কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। ব্যস্ত নগরবাসীর সুস্থ বিনোদনের জন্য এমন উদ্যোগ আর আয়োজন নিয়ে খুশি নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। আর নগরীর বিশিষ্টজনরা পৌর কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমিন কালাম জানান, ব্রহ্মপুত্র পারের এই পার্ক ছাড়া ব্যস্ত নগরবাসীর বিকল্প কোন জায়গা ছিল না। জয়নুল উদ্যানসহ পার্কটিকে নতুন করে সাজিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ নগরবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রাচীন নগরী ময়মনসিংহের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। মূলত এই নদ ময়মনসিংহকে দুই ভাগ করে রেখেছে। ব্রহ্মপুত্রের একপাশে গড়ে উঠেছে শহর ময়মনসিংহ। আরেকপাশে চর, গ্রাম। যদিও এখন ব্রহ্মপুত্রের ওপারে ইউরোপ আমেরিকার আদলে আধুনিক নগর গড়ে তোলা হচ্ছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় হেড কোয়ার্টারের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে ওই চরে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ব্রহ্মপুত্রের বুকে পালতোলা নৌকা, মাঝিদের গুনটানা, চরের মানুষের জীবন জীবিকা, পারের অপেক্ষাসহ ময়মনসিংহে বসে অসংখ্য ছবি এঁকেছেন। শিল্পাচার্যের দুর্লভ সব শিল্পকর্ম নিয়ে সাধের জয়নুল সংগ্রহশালাটি-এখন জয়নুল জাদুঘর-এই ব্রহ্মপুত্র পারেই। জয়নুল জাদুঘরটিকে আধুনিকায়ন করে শিল্পাচার্যের অসংখ্য দুলর্ভ শিল্পকর্ম ও ছবি রাখা হয়েছে। ময়মনসিংহ পৌর কর্তৃপক্ষ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জাদুঘর সংলগ্ন পার্কের ভেতর গড়ে তুলেছে জয়নুল উদ্যান। এক সময় কাচিঝুলি সাহেব কোয়ার্টার সংলগ্ন এই জায়গাটির নাম ছিল উমেদ আলী পার্ক। ব্রিটিশ শাসনামলে ময়মনসিংহ কালেক্টরেটে কর্মরত ইংরেজ সাহেবদের বাসভবনগুলো ছিল ব্রহ্মপুত্র পারের নৈসর্গিক পরিবেশের এই পার্কের পাশেই। সেই সময় থেকেই সাহেব কোয়ার্টার হিসেবে পরিচিতি পায় এলাকাটি। ময়মনসিংহ নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বরাবর পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার পেরিয়ে সড়কটি চলে গেছে সার্কিট হাউস মাঠ হয়ে কাচিঝুলি মোড়ে। এর মধ্যে কাচারি ফেরিঘাট থেকে কাচিঝুলির শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জাদুঘর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র পারের প্রায় দুই কিলোমিটারের জায়গাটিকে উমেদ আলী পার্ক বলে গণ্য করা হয়। আর মূল পার্কের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে জায়গাটিকে পৌর কর্তৃপক্ষ ‘জয়নুল উদ্যান’ নামকরণ করে সংরক্ষিত করেছে। মূলত এর ভেতরেই দর্শনার্থীদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, দোলনা, চরকি, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকাসহ বিভিন্ন রাইড। রয়েছে জলের ফোয়ারা। টাইলসে মোড়ানো বহ্মপুত্র নদ বরাবর বসার জায়গা, নামাজখানা, বৈশাখী মঞ্চ, ভাষাসৈনিক মোস্তফা মতিন পাঠাগার ও টয়লেট সুবিধাসহ নানা কিছু। মিনি চিড়িয়াখানায় রয়েছে ভাল্লুক, বানর, সজারু, খরগোশ, ময়ূর, উটপাখি, ধনেশ, কুমিরছানা, হরিণ, অজগর, ঘুঘু ও বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি। ৩০ টাকার বিনিময়ে দর্শনার্থীরা এই চিড়িয়াখানা দর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন। আছে ম্যাজিক নৌকা, ট্রেন, চরকি। ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকার বিনিময়ে শিশু-কিশোররা এসব রাইডে চড়ার সুযোগ পাচ্ছে। উদ্যানের ভেতর বাইরে শত শত বৃক্ষরাজি এর পরিবেশকে ছায়া শীতল করে রাখছে প্রতিনিয়ত। এ যেন ময়মনসিংহ নগরীর ফুসফুস! ফলে নগরবাসী ও দর্শনার্থীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পাচ্ছে এখানকার নির্মল পরিবেশে। এসবের বাইরে উদ্যানের ভেতর শিশুরা টাকা ছাড়াই দোলনাসহ বিভিন্ন বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছে। উদ্যানের বাইরে নাগরদোলা, চরকি, ঘোড়ার গাড়ি টমটমে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। পুরো পার্ক এলাকার একাধিক ঘাটে বাঁধা আছে বাহারি ও রঙিন পালতোলা নৌকার সারি। দরদাম ঠিকঠাক করে ঘুরে বেড়ানো যায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে। এছাড়া উদ্যানের ভেতরে বাইরে রয়েছে অসংখ্য চটপটি, ফুসকা ও চা কফির দোকান।
×