ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক লাখ মোবাইল সেট নষ্ট না করেই পাচারের চেষ্টা

নিলামের নামে কাস্টমস সিন্ডিকেটের নজিরবিহীন জালিয়াতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নিলামের নামে কাস্টমস সিন্ডিকেটের নজিরবিহীন জালিয়াতি

আজাদ সুলায়মান ॥ বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে আনা এক লাখ মোবাইল ফোন সেট নষ্ট করে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা কাস্টমস হাউস। কিন্তু কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সেগুলো নষ্ট না করেই পাচারের সময় হাতেনাতে ধরে ফেলে এপিবিএন। সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটেছে এমন চাঞ্চল্যকর জালিয়াতি। এতে হৈচৈ পড়ে গেলে তাড়াহুড়ো করে সেই ফোনগুলো আবারও কাস্টমস হাউসেই সিলগালা করে রাখা হয়। গ্রীন বাংলা নামক একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নিলামের নামে ধ্বংসযোগ্য ফোন নষ্ট না করেই পাচারের চেষ্টা করে। দিন দুপুরে এমন জালিয়াতির কারণ কি প্রশ্ন করা হলে-ঢাকা কাস্টমস হাউস কমিশনার মান্নান শিকদার জনকণ্ঠকে বলেন, এতে আমার কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। জানা গেছে- প্রতিটি কমপক্ষে ২ হাজার টাকা করে হলেও এক লাখ মোবাইল ফোন সেটের দাম ২ কোটি টাকা। এগুলো গত কয়েক বছরে অবৈধ পথে আনা। এ জন্য অতিরিক্ত কমিশনার তাসনীমুর রহমানকে মোবাইল ফোন বিনষ্টকরণ কমিটির সভাপতি মনোনীত করে তাকেই নিলাম ডাকার দায়িত্ব দেয়া হয়। সম্প্রতি এই কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়- এই ১ লাখ ফোন ড্রিল মেশিন দিয়ে ফুটো করে বিনষ্ট করার পর নিলামে বিক্রি করা হবে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রীন বাংলা কর্পোরেশন নামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নষ্ট ফোনগুলো ১৫ লাখ টাকায় কিনে নেয়। এরপর গত সোমবার কাস্টমস হাউসের সামনে প্রকাশ্যে এগুলো ড্রিল মেশিন দিয়ে ফুটো করার কাজ শুরু হয়। শুরুতে তাসনীমুর রহমান ও সহকারী কমিশনার শামীম উল আলমসহ অন্য এজেন্সীর লোকজন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তারা কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে চলে যান। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত এপিবিএন কনস্টেবল হারুন অর রশীদ দেখতে পান- মাত্র হাজার খানেক মোবাইল সেট নষ্ট করার পর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তাড়াহুড়ো করে বাকি ৯৯ হাজার ফোন নষ্ট না করেই ট্রাকে তোলা হয় এবং নষ্ট করা ফোনগুলো সবার ওপরে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগের জন্য ট্রাক স্টার্ট দেয়া হয়। এতে হারুণ অর রশীদ তার উর্ধতন কর্মকর্তা এপিবিএন সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ রবিউল ইসলামকে বেতার বার্তায় অবহিত করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রহমান সেখানে হাজির হয়ে ঘটনার সত্যতা দেখতে পান। এরপর সেখানে ছুটে আসেন তাসনীমুর রহমান ও শামীম উল আলমসহ অন্যরা। তখন তারা এ অভিযোগের সত্যতা দেখতে পেয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন এবং তা আবার গোডাউনে নিয়ে সিলগালা করেন। এ বিষয়ে পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অতিরিক্ত কমিশনারের যোগসাজশেই অত্যন্ত গোপনে গ্রীন বাংলা এই এক লাখ ফোন সেট নিলামের শর্তানুযায়ী নষ্ট না করেই কাস্টমস হাউস থেকে পাচারের চেষ্টা করেন। এ কারণেই তাসনীম ও শামীম সেখান থেকে চলে আসেন।
×