ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ইব্রাহীম রাসেল

চাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি

বিত্ত মানুষকে ব্যস্ত করে দেয়। আংশিক অনিচ্ছায় আংশিক ইচ্ছায়। বিশাল বিত্তের সঠিক তদারকির ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকতে হয়। কেউ কেউ আছেন যতটুকু না ব্যবস্থা তার চেয়ে বেশি দেখান। সব মিলিয়ে বিত্তমান মানুষের ব্যস্ততা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এই ব্যস্ততার গ্রাসে কেউ কেউ আপন সমাজ, সংসারের ন্যূনতম পালনীয় কর্তব্যগুলো ভুলে যান। হয়ে পড়েন বিত্তকেন্দ্রিক বা আত্মকেন্দ্রিক। এই বিত্তের বিশালতা সামলাতে গিয়ে অনেকের স্ত্রী-সন্তানের প্রতি কর্তব্যগুলো সঠিকভাবে পালন করা হয় না। যে কারণে স্ত্রী ভোগেন স্বামীর শূন্যতায় আর সন্তান ভোগেন বাবার শূন্যতায়। এমন অনেক বিত্তশালী আছেন একই ছাদের নিচে থেকেও নিজ সন্তানের সঙ্গে সপ্তাহে হয়তো একবার কথা হয়। কারণ কর্ম শেষ করে যখন গভীর রাতে বাসায় ফেরেন তখন সন্তান ঘুমিয়ে থাকে। আবার সকাল হলে সন্তান স্কুলে চলে যায়, বাবার তখন ঘুমের সময়। এভাবে সপ্তাহ ঘুরে ছুটির দিনে বাবা আর সন্তানের মাঝে কথা হয়। কোন কোন ছুটির দিনেও আবার বাবার ব্যস্ততা থাকে। অতএব বাবার পরিপূর্ণ ¯েœহ থেকে সন্তান বঞ্চিত হচ্ছে। যে কারণে দেখা যায় বিত্তবানদের সন্তানদের মধ্যে বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা তুলনামূলক কম। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে এগুলোর প্রতি খেয়াল রাখার সময় হয় না বলেই সন্তান ভুল পথে পা বাড়ায়। যার ফলে আমরা প্রায়ই শুনতে পাই বড়লোকের বখাটে ছেলে শব্দটি। বিত্ত সামলাতে গিয়ে সন্তানকে সামলানোর সময় হয় না বলে বিত্তবানদের অনেক সন্তান বখে যায়। একটি রাষ্ট্রের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গের রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সম্পদের পাহাড় গড়ে সেই সম্পদ যদি দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে না আসে এমন সম্পদের সার্থকতা নেই। ধর্মও একথা বলে যে-সম্পদশালীর সম্পদে গরিবের অধিকার রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে সে দেশের ধনবান বা বিত্তশালী ব্যক্তিরা দু’হাতে দান করেন। যেমন করেন রাষ্ট্রের বৃহৎ কোন কাজে, তেমন করেন ব্যক্তি উদ্যোগে মানুষের কল্যাণে। যে কারণে উন্নত বিশ্বে দরিদ্র মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এমন অনেক দানবীরের গল্প আমরা জানি। আমাদের দেশের বিত্তবান শ্রেণীরা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের জন্য যেটুকু করেন তা হয়তো তার সাধ্যের তুলনায় খুবই সামান্য। যে কারণে আমরা দেখি বিত্তবানরা আরও বিত্তশালী হচ্ছেন, দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ ক্রমান্বয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। যে সব শ্রমজীবী মানুষের কাঁধে ভর করে বিত্তশালীরা বিত্ত গড়ে তুলছেন ঐসব শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিত্তশালীদের কার্যকর কোন ভূমিকা আমাদের চোখে পড়ে না। অতএব বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান থাকবেÑ সম্পদ, জীবন কোন কিছুই স্থায়ী নয়। নিজের অর্জিত পাহাড়সম সম্পদের বিশেষ অংশ যদি মানুষ বা রাষ্ট্রের মঙ্গলে ব্যয় করা যায় সেখানেই তার সত্যিকারের সার্থকতা। তাই বিত্তবানরা আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে মানবিক হবে এটাই প্রত্যাশা। আমাদের দেশের বিত্তনারা যদি এগিয়ে আসেন তবে দ্রুতই দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×