ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পিয়ংইয়ংয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মুন ও উন

ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা বন্ধে রাজি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা বন্ধে রাজি

উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে রাজি হয়েছে। উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দক্ষিণ কেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের আলোচনার পর রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান হয়। মুন একে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত কোরীয় উপদ্বীপ গড়ার ক্ষেত্রে ‘বড় অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেন। গার্ডিয়ান মুন মঙ্গলবার তিনদিনের সফরে উত্তর কোরিয়া যান। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে আলোচনা করাই ছিল মূলত তার এ সফরের উদ্দেশ্য। এক দশকের মধ্যে এই প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার কোন রাষ্ট্রপ্রধান উত্তর কোরিয়া সফরে গেলেন। এপ্রিলে উনের সঙ্গে মুন জায়ে ইনের প্রথম বৈঠকের পর চলতি বছর এটি উভয় নেতার তৃতীয় সাক্ষাত। আন্তঃকোরিয়া সহযোগিতা জোরদার এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনÑ মূলত এ দুটো উদ্দেশ্য নিয়েই মুন উত্তর কোরিয়া যান। উন বলেন, তিনি তার দেশের একটি প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে রাজি আছেন। তবে শর্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রকেও অনুরূপ মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। উনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মুন। উন আরও বলেন, ‘আমি নিকট ভবিষ্যতে সিউল সফরে যাওয়ার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’ যদি তাই হয় তবে এটিই হবে উত্তর কোরিয়ার কোন নেতার প্রথম সিউল সফর। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা কোরিয়া উপদ্বীপকে ‘পরমাণু অস্ত্র ও হুমকিমুক্ত একটি শান্তিপূর্ণ ভূখ-’ হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তিনদিনের এই সফরে কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তির নিয়ে উভয় নেতার আলোচনার কথা রয়েছে। ১৯৫৩ সালে অস্ত্র বিরতির মধ্য দিয়ে কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে কিন্তু উভয় দেশের মধ্যে কোন আনুষ্ঠানিক ক্ত সই হয়নি। দুই কোরীয় নেতা যৌথভাবে ২০৩২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন ব্যাপারেও আলোচনা করেছেন। এছাড়া দুই নেতার মধ্যে আলোচনায় দু’দেশের মধ্যে রেল যোগযোগ স্থাপনের বিষয়টি স্থান পেয়েছে। তবে দু’দেশের সীমান্তে যে কোন যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ কাজ মার্কিন নেতৃত্বাধীন জাতিসংঘ কমান্ডের অনুমোদিত হতে হবে। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উন বলেন, ‘আমাদের সামনে চলার পথ মসৃণ নয়, বন্ধুর। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে। আমরা যত বাধা অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হবো ততই আমরা শক্তিশালী হবো। আমরা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জকে ভয় পাই না।’ মুনের এ সফরে দু’দেশের মধ্যে কিছু চুক্তি সই হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং উত্তর কোরিয়ার সেনাপ্রধানও চুক্তি সই করেছেন। চুক্তি সইয়ের পর মুন বলেন, বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে তংচ্যাং-রিমিসাইল ইঞ্জিন টেস্ট সাইট ও মিসাইল উৎক্ষেপণ স্থাপনা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে উত্তর কোরিয়া। তংচ্যাং-রিমিসাইল পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে হোয়াসং-১৪ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালানোর পরই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা যা ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। ১২ জুন সিঙ্গাপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকে বসেন উন। ওই বৈঠকে কোরিয়ান উপদ্বীপ পরমাণু অস্ত্র মুক্তকরণ, কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন উভয় নেতা। এদিকে মুন ও উনের বৈঠকের প্রশংসা করে টুইট করেছেন ট্রাম্প। তিনি এ ঘটনাকে ‘খুব আশাব্যঞ্জক’ বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন যে উত্তর কোরিয়া প্রতিশ্রুতি মতো নিরস্ত্রীকরণের পথে এগিয়ে যাবে।
×