ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচার চলছে সাত বছর ॥ বিচারের সময় ৪০ বার, যুক্তিতর্কে ৩২ বার সময় নিয়েছেন আসামিরা

বিচার চলবে ॥ খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিচার চলবে ॥ খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই

বিকাশ দত্ত ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মোঃ আখতারুজ্জামান এ আদেশ প্রদান করেন। এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জনকণ্ঠকে বলেছেন, আদালতের এ আদেশে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সংক্ষুব্ধ। আমরা এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে যাব। আদালতে দরখাস্ত দিয়ে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। অন্যদিকে আদালত তার আদেশে উল্লেখ করেছে, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আদালতে অনুপস্থিত থাকছেন। কারাকর্তৃপক্ষ তাকে আনার জন্য গেলেও তিনি আসছেন না। মামলার বিচারকাজ বিলম্বিত করতেই তিনি আদালত আসছেন না মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ সম্পন্ন করার এ আদেশ দেয়া হয়েছে। সাত বছর ধরে এ মামলার বিচার চলছে। মামলার বিচার চলার সময় শুরু থেকে আসামিরা ৪০ বার, যুক্তিতর্ক চলার সময় ৩২ বার সময় নিয়েছেন। এভাবে সময় পেছানো হলে মামলাটি দীর্ঘদিন অনিষ্পন্ন থেকে যাবে। আদেশে আরও বলা হয়, এ মামলার আসামি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত হাজিরা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য মওকুফ করা হলো। মামলার কার্যক্রম যথারীতি চলবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে আসামির হাজিরা মওকুফের উদাহরণ দিতে গিয়ে ভারতে রাজস্থান, উড়িষ্যা, অন্ধপ্রদেশ, এলাহাবাদ, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ এবং মহীশুর হাইকোর্টের বেশকিছু সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন বিচারক। তার আইনজীবীরা চাইলে আদালতে তার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারবেন। আসামিপক্ষ এদিন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেয়ার আবেদন করলে বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পরে এ মামলার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক শুনানি আবার শুরু করার আনুষ্ঠানিক আদেশ দিয়ে ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করে দেন। আদালতের আদেশের পর দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তো আর জোর করে ধরে নিয়ে আসা যায় না। এ কারণে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দুদকের এই আইনজীবী বলেন, আজকে (বৃহস্পতিবার) জিয়া চ্যারিটেবল মামলার যুক্তিতর্কের তারিখ ছিল। এ মামলায় দুই আসামি উপস্থিত ছিলেন। বেগম জিয়া আদালতে আসেন নাই। তিনি আসতে অনিচ্ছুক। বেগম জিয়া বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন। তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে তো আর জোর করে ধরে আনা যায় না। জেল কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে হাজির করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এর আগেও একদিন তিনি আদালতে এসে বলেছিলেন, তিনি আর আসতে পারবেন না। সেই জেদ তিনি ধরে রেখেছেন। আমরা আদালতে বলেছি, একজন আসামি যিনি জেলখানায় আছেন, তিনি আদালতে আসবেন না। আর তাকে জোর করেও আনা যাচ্ছে না। এ রকম ক্ষেত্রে যদি আমরা মামলা পরিচালনা না করতে পারি তাহলে অন্য আসামি, যারা জেলে আছে তারাও একই ইস্যুতে একই রকম বক্তব্য দিয়ে বিচারকে দীর্ঘায়িত করবে। এই দৃষ্টান্ত থেকে সরে আসা উচিত। ফৌজদারি ৫৪০ কার্যবিধি অনুযায়ী কোন আসামি যদি আদালতে না আসে। তাহলে তার অনুপস্থিতিতে আইনজীবীর মাধ্যমে রিপ্রেজেন্ট করে বিচার করা যাবে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এছাড়া ঢাকা মহানগর আদালতের বিশেষ পিপি আবদুল্লাহ আবু রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন তার দুই আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া। আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে এ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম এবং মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে আইনজীবী মোঃ আক্তারুজ্জামান ছিলেন। আদালত আদেশে বলা হয়, আদালত যদি সন্তুষ্ট হয় যে বিচার কাজ চালিয়ে যেতে কোন অসুবিধা নেই বা এ মামলা এগিয়ে নিতে আইনগত কোন বাধা নেই তাহলে আসামিপক্ষ কিংবা রাষ্ট্রপক্ষ দরখাস্ত দিল কী দিল না সে দিকে না তাকিয়ে আদালত সুয়োমোটো-ভাবে (নিজ উদ্যোগে) সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অসুস্থতার কারণে’ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত সাত মাসে আদালতে হাজির করা যায়নি বিএনপি চেয়ারপার্সনকে। এরই মধ্যে কারাগারের ভেতরে অস্থায়ী আদালত বসানো হয়। অস্থায়ী আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই ফৌজদারি আইনের ৫৪০ ‘এ’ ধারায় আদালতের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আর্জি জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এদিকে একই আদালত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করে। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫ আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। অন্য আসামিরা হলেনÑ মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী (পলাতক) এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান (পলাতক)। বৃহস্পতিবার ( ২০ সেপ্টেম্বর) জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার নথি পর্যালোচনা করে আদালত তার আদেশে বলেছে, মামলাটি সাত বছর ধরে চলমান। এর মধ্যে তিনি ৪০ বার সময় নিয়েছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিনি আদালতে আসেননি। কিন্তু গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে এলেও তিনি আর আসতে পারবেন না বলে জানান। এরপর ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে আসতে অনিচ্ছুক এমন মতামতও তিনি জানিয়েছেন। আজকেও (২০ সেপ্টেম্বর) তিনি আদালতে আসতে পারবেন না বলে অপারগতা জানিয়েছেন। সার্বিক বিষয় দেখে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। এ অবস্থায় অন্য আসামিরা হাজির হচ্ছেন। তিনি হাজির না হওয়ায় বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচারিক কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন।’ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত উভয়পক্ষের শুনানি হয়। দুপুরের বিরতির পর আদালতের কার্যক্রম ২টা ১০ মিনিটে ফের শুরু হয়। পরবর্তী দিনে ওই সময় মামলার অন্য আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের বিষয়ে যুক্তিতর্ক হবে। ১৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে বৃহস্পতিবারও আদালতে হাজির করতে না পারায় দুদকের আইনজীবী ফৌজদারি আইনের ৫৪০ ‘এ’ ধারায় আসামির অনুপস্থিতিতেই আদালতের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আর্জি জানান। ফৌজদারি আইনের ৫৪০ (এ) অনুযায়ী আদালতকে সে ক্ষমতা দেয়া আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কাজল বলেন, ‘খালেদা জিয়া সম্মানিত লোক, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। তিনি আইনের মধ্যে থেকেই সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এটাই আমরা বিশ্বাস করি। তিনি সুস্থ হয়ে আদালতে আসবেন কিন্তু বাকি দুই আসামির তো যুক্তিতর্ক শুরু করা যায়। তারা তো আর অসুস্থ না।’ বেগম জিয়া যদি আসতে না চান, তার আইনজীবীরা যদি সহযোগিতা না করেন। তাহলে আর বিলম্ব না করে এ মামলায় রায়ের জন্য দিন ঠিক করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান দুদকের এ আইনজীবী। পরে আদালত ২০ সেপ্টেম্বর আদেশের দিন ঠিক করেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। সকালে বিচার কার্যক্রমের শুরুতেই আজ (বৃহস্পতিবার) কোন আইনী ব্যাখ্যা শুনবেন না, আদেশ দেবেন বলে জানান মামলাটির বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। একথা শুনে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতকে বলেন, আদালত যদি এভাবে আমাদের প্রত্যাখ্যান করেন তাহলে আমরা কার কাছে যাব? এভাবে আদেশ দিলে তা হবে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এভাবে আইনী ব্যাখ্যা না শুনে আপনি আদেশ দিতে পারেন না। এরপরে আদালত আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনী ব্যাখ্যা শোনেন। আমিনুল ইসলাম তার আইনী ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের কয়েকটি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আদালতকে জানিয়ে বলেন, আমি একটা সিদ্ধান্তও পাইনি যে আসামি কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় আদালতে তার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চলতে পারে। আমরা আশা করি একটি আইনসম্মত আদেশ হবে। সাধারণ মানুষ মেসেজ পাবে যে এখানে একটি ন্যায়বিচার হচ্ছে। আদালতে এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, আমরা দুই আইনজীবী (এ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ) ১৯ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি। উনি আমাদের আদালতে আসতে অনিচ্ছুক এটা বলেননি। উনি বলেছেন, ‘আমি অসুস্থ, কীভাবে যাব। সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে আরও অভিযোগ করেন, কারা কর্তৃপক্ষ কাস্টডিতে কী লিখেছে সেটাও আমাকে জানানো হয়নি। মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ৫৪০ (এ) ধারায় বলা আছে, আসামি অক্ষম হলে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে তার হাজিরা হবে। আমরা আসামিকে রিপ্রেজেন্ট করছি না। উনি কাস্টডিতে আছেন। উনাকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ আমাদের নাই। আমরা তাকে এখানে শুধু ডিফেন্ড করছি। এরপর আদালত তার আদেশ দেন। দেড়টায় মুলতবির পর দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম আবারও শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, ‘আদালতের এ আদেশে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সংক্ষুব্ধ। আমরা এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে যাব। যেহেতু বাংলাদেশে এ ধরনের কোন নজির নেই এজন্য বাংলাদেশেও একটি সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।’ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ সেপ্টেম্বর এই কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচারসম্পন্ন করতে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে ৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এরপর থেকেই বিশেষ জজ আদালত-৫ এ বিচারাধীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মামলার শুনানির জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১) মোঃ মাহবুবার রহমান সরকার স্বাক্ষরিত এই গেজেটে বলা হয়েছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ বকশীবাজার এলাকার সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে পরিচালিত হচ্ছে। মামলা চলাকালীন ওই এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে এই আদালত স্থানান্তর করা হচ্ছে। এখন থেকে এই মামলার বিচার কার্যক্রম পুরাতন কারাগারে ঘোষিত অস্থায়ী আদালতে চলবে। যদিও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করেন, তারা আদালত স্থানান্তরের কোন নোটিস পাননি। সে কারণে ৫ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে তারা কারাগারের আদালতে উপস্থিত হননি। পরে আদালত আজ ১২ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির জন্য নতুন দিন ঠিক করে দেন। ১৩ সেপ্টেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার হাজিরা দেয়া না দেয়া ইস্যুতে যুক্তিতর্ক শুনানি করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ওই দিন যুক্তিতর্ক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, এই মামলায় খালেদা জিয়ার হাজিরা মওকুফ করে বিচার কাজ অব্যাহত রাখা সম্ভব। অপরদিকে আসামিপক্ষ বলেছে, খালেদা জিয়া কারাগারে মানে তিনি বিচারকের কাস্টডিতেই আছেন। সুতরাং তাকে হাজির না করে মামলা চলার কোন সুযোগ নেই। বাদীপক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘ফৌজদারি আইনের ৫৪০ (এ) অনুযায়ী কোন আসামি উপস্থিত না হলে হাজিরা মওকুফ দেখিয়ে বিচার কাজ পরিচালনা করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে তার আইনজীবীরা যদি সহযোগিতা করতে অপরাগ হয় তাহলে এ মামলার রায়ের জন্য দিন ঠিক করে দিতে তারা আদালতের কাছে প্রার্থনা করেন’। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে জিয়া চ্যারিটেবল মামলার বিচার চলবে কি না এবং তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দেন আদালত। দুর্নীতির এই মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অন্য তিন আসামি হলেনÑ খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএয়ের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন। তিনি দীর্ঘদিন থেকেই বয়সজনিত বিভিন্ন রোগসহ আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। কারা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বিএসএমএমইউ গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড গত ১৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে তাকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে চিকিৎসকরা এজন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করলেও খালেদা জিয়ার নিজের পছন্দ ইউনাইটেড হাসপাতাল। ৫৪০ (এ) ধারায় কি আছে। এ ধারার (১) অংশে বলা হয়েছে- দুই বা ততোধিক আসামি আদালতে হাজির থাকলে এই বিধির অধীন অনুসন্ধান বা বিচারের যে কোন পর্যায়ে জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট যদি কোন কারণবশত সন্তুষ্ট হন যে, আসামিদের এক বা একাধিক আদালতে হাজির থাকতে অসমর্থ, তাহলে ওই কারণ লিপিবদ্ধ করে আসামির কৌঁসুলি হাজির থাকলে আসামিকে হাজিরা হতে রেহাই দিতে এবং তার অনুপস্থিতিতে অনুসন্ধান বা বিচার চালিয়ে যেতে পারবেন এবং কার্যধারার পরবর্তী পর্যায়ে ওই আসামিকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির থাকতে নির্দেশ দিতে পারবেন। (২) অংশে বলা হয়েছে, এইরূপ কোন মামলায় আসামির কৌঁসুলি না থাকলে অথবা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামির হাজিরা প্রয়োজন মনে করেন, তা হলে তিনি উপযুক্ত মনে করলে অনুসন্ধান বা বিচার মুলতবি রাখতে পারবেন অথবা উক্ত আসামির মামলার পৃথকভাবে গ্রহণ করার বা বিচারের আদেশ দিতে পারবেন। কিন্তু আসামি পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন, যেহেতু তিনি কারাবন্দী, তার ক্ষেত্রে ৫৪০ (এ) ধারা কর্যকর হতে পারে না।
×