স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সারাদেশে বিদ্যুত উৎপাদন এবং বিতরণের যে তথ্য নিজেদের ওয়েব পেজে শেয়ার করেছে তাতে দেখা যায় দেশ শূন্য লোডশেডিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু এত বড় অর্জনের কোন ঘোষণা দিচ্ছে না বিদ্যুত বিভাগ। এই উন্নতি কি টেকসই নয়, নাকি যে তথ্য দিচ্ছে সরকারী দুই সংস্থা তাতে ভেজাল রয়েছে।
জানতে চাইলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী বলেন, বিদ্যুত উৎপাদন এবং চাহিদার মধ্যে যদি কোন ঘাটতি থাকে তাহলে সেটা লোডশেডিং। কিন্তু আমাদের এখানে যা চাহিদা দেখানো হচ্ছে তাই উৎপাদন হচ্ছে। এখন কোন বিতরণ কোম্পানি যদি তার বিতরণ লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে বিদ্যুত নিতে না পারে সেটাকে লোডশেডিং বলা ঠিক হবে না।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি সূত্র বলছে, ১০ বা ১১ হাজার মেগাওয়াট সরবরাহের মধ্যে ছোটখাট লোডশেডিংকে তারা হিসেবের মধ্যে আনছে না। ফলে লোডশেডিং হলেও ওয়েবসাইটে তা দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবে দেশে লোডশেডিং রয়েছে। যেহেতু হিসেবেই করা হচ্ছে না তাই বিতরণ কোম্পানিগুলোরও কেউ লোডশেডিং নিয়ে কথা বলতে নারাজ। কেন এত বড় অর্জনের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে না তা জানার জন্য বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং পিডিবি চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। যদিও কত দিন অপেক্ষা করতে হবে সে বিষয়টি প্রতিমন্ত্রী নির্দিষ্ট করেননি। প্রসঙ্গত সরকার প্রথম দফায় ২০১২ এবং পরে ২০১৫ সালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছিল।
রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা জুবায়ের হোসেন জানান. গত তিন দিন ধরে রাত ১১টার পর বিদ্যুত চলে যাচ্ছে। আসছে ঘণ্টা ঘানেক পর। মঙ্গলবার রাতে ১১টা ২০ মিনিটে বিদ্যুত গিয়ে এসেছে ২টার দিকে। এসময় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বনশ্রী কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নাম্বারে অন্তত ৫০ বার ফোন করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। প্রতিদিন একই সময়ে বিদ্যুত চলে যাওয়া এবং নির্দিষ্ট বিরতিতে আবার আসাকে লোডশেডিং ছাড়া আর কি বলা যায় প্রশ্ন করেন এই বাসিন্দা।
একই অবস্থার কথা জানান রাজধানীর মিরপুর-১ এর বাসিন্দা ফারজানা রহমান। তিনি জানান, যথারীতি রাতে ঘুমানোর আগে তার বাসায় সাড়ে ১১টায় বিদ্যুত চলে যায়। রাজধানীর মৌচাক এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেনেরও একই অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে তার বাসায় এক ঘণ্টা বিদ্যুত ছিল না।
রাজধানীতে বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে মঙ্গলবার রাতে ডিপিডিসির কন্ট্রোল রুমে ফোন করলে বলা হয় গরমের কারণে আধাঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে বলা হয়েছে। রাজধানীর বনশ্রী, মানিকনগর এবং মুগদা এলাকায় আধাঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। ওই এলাকার সাবস্টেশন লোড নিতে না পারায় পর্যাপ্ত বিদ্যুত দেয়া যাচ্ছে না।
সারাদেশের ১২৩ বিদ্যুত কেন্দ্রের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৪৫ মেগাওয়াট। এর সঙ্গে ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির পরিমাণ এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে গ্রিডে সংযুক্ত হতে পারে এমন বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৬০৫ মেগাওয়াট। মঙ্গলবার দিনের বেলা প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট আর সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৩৬৩ মেগাওয়াট। বুধবার দিনের বেলা পিক ডিমান্ড ধরা হয় ৯ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এই পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য তৈরি রাখা হয় ১১ হাজার ৩০৭ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র। একইভাবে সন্ধ্যার সর্বোচ্চ চাহিদা ১১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের জন্য ১২ হাজার ৪৫৯ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রকে প্রস্তুত রাখা হয়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: