ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বিল পাস

মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে ভাতা পাবেন স্ত্রী বা স্বামী, পিতামাতা ভাইবোন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে ভাতা পাবেন স্ত্রী বা স্বামী, পিতামাতা ভাইবোন

সংসদ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে সম্মানী ভাতাসহ সরকারী যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন স্ত্রী বা স্বামী। আর তাদের অবর্তমানে সুবিধা ভোগ করবেন পিতা-মাতা। তারাও না থাকলে সুবিধা পাবেন ছেলে-মেয়েরা। এদের কেউই না থাকলে সুবিধা পাবেন মুক্তিযোদ্ধার ভাই-বোনেরা। এমন বিধান রেখে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৮’ পাস হয়েছে। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিলটি পাসের প্রস্তাব উপস্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের ওপর বিরোধী দলের জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। গত ১০ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৭২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বাহিনী, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সদস্য বা আধা সরকারী পেনশনভোগী বা যাদের নিয়মিত আয়ের উৎস আছে তাদের সম্মানী ভাতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ সাধনে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিলে যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের সোয়া দুই লাখেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে পরিবারের সদস্যরাও এ সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদেরও এই প্রথম মুক্তিযোদ্ধা ভাতার আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ট্রাস্টি বোর্ড, নির্বাহী কমিটি গঠনের পাশাপাশি তহবিল পরিচালনা, নিরীক্ষার বিধানও রাখা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সুবিধাভোগীদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সুবিধাভোগী অর্থ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা। তাদের অবর্তমানে স্ত্রী-স্বামী, স্ত্রী ও স্বামীর অবর্তমানে পিতা-মাতা। স্ত্রী-স্বামী অথবা পিতা-মাতার অবর্তমানে পুত্র ও কন্যারা। উল্লেখিত ব্যক্তিদের কেউই না থাকলে বা তাদের অবর্তমানে ভাই-বোন মুক্তিযোদ্ধার সুবিধাভোগী হবেন। প্রথমবারের মতো মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বিলে বলা হয়েছে- ‘একাত্তরের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারা ছাড়াও নিচের (ক থেকে ঝ) উল্লেখিত ব্যক্তিগণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। (ক) মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ব্যক্তি বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন, (খ) যে সব বাংলাদেশি পেশাজীবী ও নাগরিক একই সময়ে বিদেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠন করেছেন, (গ) যারা মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, (ঘ) সশস্ত্র বাহিনী, গণবাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, নৌ কমান্ডো, আনসার বাহিনীর সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, (ঙ) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজিবনগর সরকারের সহিত সম্পৃক্ত তৎকালীন এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলি) ও এমপিএগণ (মেম্বার অব পার্লামেন্টারি এ্যাসেম্বলি) যারা পরে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হন, (চ) পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তার দোসরদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত (বীরাঙ্গনা) নারীগণ, (ছ) স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়গণ এবং (ঝ) মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী মেডিকেল টিমের চিকিৎসক, নার্স ও সহকারীরা। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট ॥ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোড়গোরায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন ও পরিচালনার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট বিল ২০১৮ পাস করেছে সংসদ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন। মন্ত্রী জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানস সন্তান। এই আইনটির মাধ্যমে দেশের একটি ইতিহাস সৃষ্টি হবে, মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এই বিলটি পাস হওয়ার ফলে সরকারের ‘রিভাইটালাইজেশন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প এবং ‘কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার’ শীর্ষক প্ল্যানের আওতায় স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ এই আইনের অধীনে ন্যস্ত হবে। এই ট্রাস্ট্রের পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি থাকবে। যার প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী। এছড়া ট্রাস্ট পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড থাকবে। বোর্ডের প্রধান হবে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত কোন সমাজ হিতৈষী ব্যক্তি। প্রধান কার্যালয় থাকবে ঢাকায়। বিলটি পাসের ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ট্রাস্টের আওতায় নিয়মিত বেতন-ভাতা পাবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুণ হচ্ছে ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৮ হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে সংসদে। জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের সুপারিশের আলোকে মজুরি বাড়াতে বৃহস্পতিবার শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু পণ্য উৎপাদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্রমিক (চাকরির শর্তাবলী) বিল-২০১৮ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ৮ হাজার ৩০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মজুরি হবে ১১ হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রে মজুরি ১০০ শতাংশ বাড়ল। আগে এই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৪ হাজার ১৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মজুরি ৫ হাজার ৬০০ টাকা ছিল। ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন মজুরি এবং ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ভাতা কার্যকর ধরা হবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন, বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনে কর্মরত শ্রমিকরা এই আইনের আওতায় পড়েন। ক্রীড়া পরিষদ বিল পাস ॥ পুরনো আইন বাতিল করে নতুন করে আনা ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিল-২০১৮’ সংসদে পাস হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলে ১৯৭৪ সালের ‘ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল এ্যাক্ট’ বাতিল করে বাংলায় নতুন আইন করার জন্য বিলটি পাস করা হয়েছে। বিলে ৪৮টি ক্রীড়া সংক্রান্ত সংস্থাকে পরিষদের অধীনে রাখা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, সরকার গেজেট করে যে কোন খেলাকে ক্রীড়া হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পরিষদের চেয়ারম্যান হবে। প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিলে বলা হয়েছে, অন্য কোন আইন, চুক্তি বা আইনী দলিলে যাই থাকুক না কেন পরিষদ জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা বা অন্য ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী কমিটি যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করে তবে পরিষদ ওই কমিটি ভেঙ্গে এডহক কমিটি দিতে পারবে।
×