ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দ্বিতীয় গণভোটের পথে ব্রিটেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দ্বিতীয় গণভোটের পথে ব্রিটেন

ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী মেল স্ট্রাইড স্বীকার করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হলে এ বিষয়ে দ্বিতীয় গণভোটে যাওয়া ছাড়া সরকারের সামনে বিকল্প থাকবে না। একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনার পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে। মেল স্ট্রাইড পিপল’স ভোটের (ব্রেক্সিট বিরোধীদের জোট) দাবির পক্ষে ব্যাপক সমর্থন ব্যক্ত করেছেন, যখন তিনি স্বীকার করেছেন যদি মে’র পরিকল্পনা না টিকে তবে সেটা ঘটার একটা বিপদ রয়েছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট। মেল বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা সম্পূর্ণ রূপে ইউ ত্যাগ নাও করতে পারি। তিনি পরামর্শ দেন আরেকটি গণভোট ইইউ’তে থেকে যেতে ভোটারদের বিকল্প ভাবার সুযোগ দেবে। মেলের বক্তব্য ব্রেক্সিট বিরোধী পিপলস ভোটের সমর্থকদের যে দারুণভাবে চাঙ্গা করবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। চলতি মাসেই সালজবার্গে বিষয়টি নিয়ে ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসছেন মে। মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন তার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। জনসন বলেছেন, ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় মে তার পরিকল্পনা থেকে কিছুই অর্জন করতে পারবে না। ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে সমঝোতা নয় বলে মে চলতি মাসের গোড়ার দিকে টেলিগ্রাফে একটি নিবন্ধ লেখার পর জনসন পাল্টা আরেকটি নিবন্ধ লিখে তার মত প্রকাশ করেন। কোন সংবাদপত্রে লেখা প্রথম নিবন্ধে জনসন মে’র চেকার্স পরিকল্পনাকে ‘আত্মসমর্পণের প্রস্তাব’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আলোচনার সময় ইইউ স্বাভাবিকভাবেই তাদের দিক থেকে সবচেয়ে সুবিধা আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করবে। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই কোন বিনিময় ছাড়া ইইউকে করদাতাদের দেয়া ৪০ বিলিয়ন পাউন্ডের দুই তৃতীয়াংশ দিতে রাজি হয়েছে। বরিস জনসন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যাভিন উইলিয়ামসনের দক্ষতা সম্পর্কে অবশ্য আগে থেকেই দলের ভেতরেই বিতর্ক রয়েছে। ধারণা করা হয় তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, প্রধান বাধাসমূহ রয়ে গেছে, এগুলোর মধ্যে রয়েছে আয়ারল্যান্ডে কঠোর সীমান্তের বিষয়টি এড়ানো ও ইইউ এর সঙ্গে ভবিষ্যত বাণিজ্য সম্পর্ক। চেকার্স পরিকল্পনা নামে পরিচিত পরিকল্পনাটি মে ৬ জুলাই প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই একের পর এক মে’র মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেন। পরিকল্পনাটি প্রকাশের পর থেকেই মূলত রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়। এসব ঘটনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মে’র নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। চলতি মাসেই আরও আগের দিকে ব্রিটেনের ট্রেড ইউয়িনগুলো ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিতীয় ভোটের দাবি তোলে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রতি তিন জনে দুই জন আরেকটি গণভোট চাইছেন। জনমত জরিপকে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। পিপল ভোট গ্রুপের পক্ষে ২ হাজার ৭শ’য়ের ওপর ইউনিয়নের ওপর জরিপটি চালায় ইউগভ। ইউনাইট, ইউনিসন ও জিএমবির মতো বৃহৎ ট্রেড ইউনিয়নগুলোও এর মধ্যে আছে। লক্ষ্য করা গেছে যারা ইইউর সঙ্গে থাকতে ইচ্ছুক তারা স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠাতায় এগিয়ে আছে। তারা মনে করে ব্রেক্সিট কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত করবে এবং জীবনযাত্রার মানের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ম্যানচেস্টার ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের বার্ষিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে জরিপটি করা হয়। সোমবার সম্মেলনে ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা হবে। ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক টালমাটাল সময় এখন পার হচ্ছে। গত চার বছরে দেশটিতে তিন নির্বাচন হয়েছে। ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোট, ১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ অথবা থাকা প্রশ্নে গণভোট এবং গত বছর আগাম সাধারণ নির্বাচন। ব্রেক্সিট ইস্যুতে সর্বশেষ রাজনৈতিক সঙ্কট শেষ পর্যন্ত গণভোট ছাড়াও আরেকটি সাধারণ নির্বাচনের পথ সুগম করতে পারে।
×