ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ লাইন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ লাইন

রশিদ মামুন ॥ চট্টগ্রামে আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ বৃদ্ধির তিন পাইপলাইন নির্মাণ যথাসময়ে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পাইপলাইন তিনটির কাজ শেষ করে অক্টোবরের মধ্যে এলএনজির সরবরাহ দৈনিক ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট করার প্রত্যাশার কথা জানানো হয়েছিল। সম্ভাব্য এই প্রক্ষেপণের ওপর ভিত্তি করেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার কথা। কিন্তু এখন শেষ মুহূর্তে এসে পাইপলাইন তিনটির নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নিয়ে হতাশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) দায়িত্বশীলরা। এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করার কথা। কিন্তু দৈনিক এখন সরবরাহ হচ্ছে ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। দেশে গ্যাসের সঙ্কট থাকলেও পাইপলাইনের জন্য বাকি গ্যাস নিতে পারছে না পেট্রোবাংলা। সূত্র বলছে, কর্ণফুলী সার কারখানা (কাফকো) , চট্টগ্রাম সার কারখানা (সিএফইউএল) ও শিকলবাহা বিদ্যুত কেন্দ্রে চট্টগ্রামের রিং-মেইন পাইপলাইন থেকে একক লাইনে গ্যাস দেয়ার জন্য তিনটি পৃথক লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। অক্টোবরের মধ্যে ২৫ কিমি দীর্ঘ পাইপলাইন তিনটি বসানোর কাজ শেষ হওয়ার কথা। সেই হিসেবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয় বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ পাইপলাইন শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিইআরসি সূত্র বলছে, গ্যাসের দাম নির্ধারণে এলএনজির সরবরাহকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। শুরুতে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ ধরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়। তখন জুন ’১৮ থেকে জানুয়ারি ’১৯ পর্যন্ত দৈনিক ৫শ’, এরপর জানুয়ারি থেকে জুন ’১৯ পর্যন্ত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করার কথা জানায় বিতরণ কোম্পানিগুলো। কিন্তু এখন গত ১৮ আগস্ট থেকে দৈনিক ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহের মধ্য দিয়ে এলএনজি বিতরণ শুরু করা হয়। পর্যায়ক্রমে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুটে। পাইপলাইন শেষ হলে পরিমাণ আরও ১শ’ থেকে দেড়শ’ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পেতে পারে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম রিং-মেইন পাইপলাইন থেকে সিএফইউএল, কাফকো ও শিকলবাহাকে আলাদা করে পৃথক ২৫ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করলেই গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি সম্ভব। এই ২৫ কিমির মধ্যে ১০ কিমি লাইন পাইপ রয়েছে। বাকি ১৫ কিলোমিটারের লাইন পাইপ চীন থেকে শিপমেন্ট করা হয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ওই পাইপলাইন শিপমেন্ট করা হয়। ফলে এখনও পাইপলাইন দেশে না আসায় প্রকল্পটির কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী আহমেদ মজুমদার বলেন, আমরা অক্টোবরের মধ্যে সিএফইউএল ও কাফকোকে আলাদা করতে পারব আর নবেম্বরে শিকলবাহা কেন্দ্রে গ্যাস দেয়ার জন্য পৃথক লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হবে। জানা গেছে, এরমধ্যে কাফকোর দৈনিক গ্যাস চাহিদা ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট, সিএফইউএলের ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট আর শিকলবাহা কেন্দ্রের চাহিদা রয়েছে দৈনিক ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ পাইপলাইন নির্মাণ শেষ হলে দৈনিক আরও ১৭৭ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজির সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব। চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যুক্ত করার কাজে ইতোমধ্যে পিছিয়ে পড়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল)। আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি তারা। জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্তির জন্য ৩০ কিমি পাইপলাইনটির প্রতিদিন ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার কথা ছিল। নদীর দুই পাশের পাইপলাইনের নির্মাণ শেষ হলেও কর্ণফুলী নদী ক্রসিংয়ের কাজে দুই দফা ব্যর্থ হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সঙ্গত কারণে চট্টগ্রাম থেকে গ্যাস আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, দুই দফায় তারা কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে গেলে আবার সময় অপচয় হবে। এজন্য আমরা তাদেরকেই আরও একবার সুযোগ দিয়েছি।
×