ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের ১৬ আসনের হালচাল

মনোনয়ন জোটগত না হলে চিত্র হবে ভিন্ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মনোনয়ন জোটগত না হলে চিত্র হবে ভিন্ন

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবকটি রাজনৈতিক দলে মনোনয়ন লাভে আগ্রহী প্রার্থীদের বহুমুখী তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামও এ থেকে বাদ নেই। চট্টগ্রাম জেলাজুড়ে সংসদের আসন সংখ্যা ১৬। এর মধ্যে মহানগরীতে ৪। সবকটি সংসদীয় আসনে এখন আগ্রহী প্রার্থীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে ওয়ার্ড মহল্লাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট অংশ নিলেও বিএনপি এ নির্বাচন বয়কট করেছে। নির্বাচনে চট্টগ্রাম জেলার ১৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থীদেরই নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে। মহাজোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হয়েছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১২টি ও জাতীয় পার্টি ২টি, জাসদ ১টি এবং তরিকত ফেডারেশন ১টি। তারাই এখন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে এবারের নির্বাচনে জোটগতভাবে হলে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে চিত্র হবে এক। আর বিএনপি যদি অংশ না নেয় তাহলে চিত্র হবে ভিন্ন। আবার জোট থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচন করে সেক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে। বর্তমানে পুরনো সকলেই যেমন আবার প্রার্থী হতে চান অনুরূপভাবে অতীতে মনোনয়ন বঞ্চিত এবং নতুনদের মধ্যে নিজেদের উপযুক্ত বিবেচনায় এনে অনেকেই দৌঁড়ঝাপ ও লবিংয়ে ব্যস্ত। হাতেগোনা দু’য়েকজন ছাড়া আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী হলফ করে বলতে পারছেন না তিনি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন লাভ করবেন। আবার চট্টগ্রামের ১৬ আসনে কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন যাদের কর্মকা- নিয়ে দলীয় হাইকমা-ের পাশাপাশি খোদ সভানেত্রীও নাখোশ। তিনি তার এ নেতিবাচক মনোভাব বিভিন্নভাবে বিভিন্ন নেতার কাছে প্রকাশও করেছেন। প্রার্থিতা নিয়ে সর্বশেষ তিনি কোন স্থানের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, অধিকাংশ সংসদীয় আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কর্মকা- নিয়ে দলের পাশাপাশি তিনি নিজেও স্বস্তিতে আছেন। কয়েকটি আসনের সংসদ সদস্যদের নিয়ে তিনি যে নাখোশ এতে কোন সন্দেহ নেই। সূত্র মতে, যেহেতু দলের প্রার্থিতা শতভাগ চূড়ান্তকরণ সভানেত্রীর হাতে সেক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য স্থানের মত চট্টগ্রামের প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও রদবদল আসলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। কেননা, আওয়ামী লীগ সরকার গত দুই টার্মে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে দেশজুড়ে যে উন্নয়ন কর্মকা- করেছে তা দৃশ্যমান। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর, জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম জুড়ে বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকা- এখন আলোচনার পাদদীপে। তবে কোন সমস্যা সম্পূর্ণভাবে উত্তরণ ঘটানো অসম্ভব একটি বিষয়। কারণ, একটি সমস্যার সমাধান সম্পন্ন করতে না করতেই নতুন সমস্যা আবর্তিত হয়। সঙ্গত কারণে বিশ্লেষকদের মতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। তবে এ সমস্যা উত্তরণে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল কতটুকু আন্তরিক সেটাই জনগণের বিবেচনায় থাকে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মহানগর জুড়ে জলযটের যে বড় একটি সমস্যা তার নিরসনের কাজ খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) হাতে। চউক এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য তা অর্পণ করেছে সেনাবাহিনীর হাতে। চট্টগ্রাম মহানগর অভ্যন্তরে ছোট বড় প্রায় ৪২টি খাল। এসব খালের অধিকাংশের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাই এর সংস্কার এবং পূর্বের অবয়ব ফিরে আনা বেশ কঠিন একটি কাজ। চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের পরামর্শে সরকার সেনাবাহিনীকে দিয়ে এ কাজ করানোর নির্দেশনা প্রদান করেছে। ইতোমধ্যে বর্ষা মওসুম অতিক্রান্ত হয়েছে। আগামী বর্ষা মওসুম আসার আগেই জলজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন চউক চেয়ারম্যান। কাজটি ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। কিন্তু চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজের দায়িত্ব পেয়েছে চউক। কাজ পাওয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি হওয়ায় চসিকের বড় কাজটিও চউকের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ কাজে চউকের অপরিহার্যতা সংস্থার কর্মকা- প্রমাণিত হয়েছে বলেই এ ঘটনা। যদিও চসিক এ বিষয় নিয়ে নাখোশ। কিন্তু সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর আদেশ ও নির্দেশ উপেক্ষা করার অবকাশ নেই। উল্টো সহযোগিতার কথা বলে যেতে হচ্ছে। চসিক মেয়র ও চউক চেয়ারম্যান দু’জনই নগর আওয়ামী লীগের নেতা। দলীয়ভাবেও তারা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন নগরীর চার আসনই তারা ঐক্যের কাতারে থেকে দলকে উপহার দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। তবে ভবিষ্যত বলে দেবে তাদের ঘোষিত বক্তব্যের সারমর্ম। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে যারা আজ সংসদ সদস্যসহ বিভিন্নভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এর সবই দল অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার প্রধান শক্তি এবং নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হওয়ার কারণেই। বিভিন্ন পর্যায়ে দলের হয়ে যারা ক্ষমতা পেয়ে এর অপব্যবহার করেছেন বা যারা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে অভিযুক্ত হয়েছেন এবার তাদের জন্য উপযুক্ত জবাব আসতে পারে বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার কয়েকটি আসনে মনোনয়ন চিত্র পাল্টে যেতেও পারে। এর সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচনের সবদলের অংশগ্রহণ করা না করা, বিশেষ করে বিএনপিকে নিয়ে। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বর্তমানে দ-িত হয়ে জেলে। তার পুত্র দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া দ-িত হওয়ার আগে থেকেই পলাতক জীবন নিয়ে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। আলোচিত হচ্ছে এই দু’জন নির্বাচনে যেতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নেতাদের মাধ্যমে যেসব আগাম দাবি দাওয়া পেশ করছেন সরকারী দল সেক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থান ধরে রেখেছে। এক্ষেত্রে হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সঙ্গত কারণে বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এ সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলেও তাদের বহু নেতা ওই সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। ইতোমধ্যে দেশের সবকটি সংসদীয় আসনে বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের তৎপরতার চিত্র উঠে এসেছে। সূত্র মতে, সে যাই হোক, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কোনদিকে যাচ্ছে সেটাই আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। চট্টগ্রামেও অনুরূপ। কেননা, জোটগতভাবে হলেও প্রতীক নৌকা আবার দলগতভাবে হলেও প্রতীক অনুরূপ। ফলে নৌকাই যেখানে ভোটারদের কাছে প্রাধান্য পেয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এককভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরামর্শও প্রাধান্য পাচ্ছে ভোটার মহলে। যদি তই হয় সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার ১৬ আসনে মনোনয়ন চিত্র পাল্টে যে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুরনোদের সঙ্গে নতুন অনেকের আগ্রহের চিত্র উঠে এসেছে। এদের মধ্যে ডাকসাইটে আছেন হাতেগোনা কয়েকজন। দলে এদের অপরিহার্যতা নিয়েও আলোচনা চলছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে যারা ইতোমধ্যে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছেন এবং সাংগঠনিক তৎপরতায় ব্যাপক অবদান রেখেছেন এমন নেতাদের কথাও আলোচনায় আসছে।
×