ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপর ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি আফগানিস্তান

সুপারফোরে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সুপারফোরে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ তিন বছর আগ থেকেই বাংলাদেশ-ভারত লড়াই মানেই আলাদা রকম উত্তেজনা। এখন এমন অবস্থাই হয়েছে, এ দুই দলের লড়াইয়ের আবহ এমনই তৈরি হয় যা দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেও দেখা যায় না। আজ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ‘সুপারফোরে’র ম্যাচ রয়েছে। ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় সাড়ে পাঁচটায় শুরু হবে। এই ম্যাচকে ঘিরেও উত্তাপ শুরু হয়ে গেছে। একইদিন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে ম্যাচ রয়েছে। কিন্তু এই ম্যাচটি নিয়ে বিশেষ কোন আলোচনাই নেই। সব আলোচনা বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচকে ঘিরেই। ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ দিনটি যেন কখনই ভোলার নয়। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি। কিন্তু ম্যাচটিতে এতটাই বিতর্ক তৈরি হলো, আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে এতটাই সমালোচনা হলো, সব সিদ্ধান্ত ভারতের পক্ষে গেল, তাতে ম্যাচটি বর্ষসেরা ম্যাচে স্থান করে নিয়েছিল। রুবেল হোসেনে নো বল বিতর্ক, মাশরাফির বলে রায়নাকে আউট না দেয়া, মাহমুদুল্লাহর ছক্কা না আউট; এসব বিতর্ক নিয়ে তোলপাড় হয় বিশ্ব ক্রিকেটও। কিন্তু হৃদয় ভেঙ্গেছিল শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সমর্থকদেরই। আইসিসির পক্ষপাতও সবার নজর এড়ায়নি। দেশের ভক্ত-সমর্থকরা তো শুধু ফুসেছেন। এরপর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত লড়াই মানেই হচ্ছে যেন ক্রিকেট যুদ্ধ বেধে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়ে যাওয়া। এই ম্যাচটির পর যখন একই বছর জুনে বাংলাদেশের কাছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হারল ভারত, সে কী আনন্দ বাংলাদেশী সমর্থকদের! শুরু হয়ে গেল দুইদেশের খেলা হলেই উত্তেজনার পারদ জ্বালানো। যে কোন ম্যাচের চেয়ে এ দুই দলের ম্যাচ নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়ায়। যেভাবেই হোক ভারতের জেতা চাই-ই-চাই। ভারত সমর্থকদের দাবি। আরেকদিকে বাংলাদেশ যেন কোনভাবে না হারে! এমন রবই ওঠে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত-সমর্থকদের চাওয়া থাকে এটাই। ক্রিকেট যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়ে যায়। এবারও তাই থাকছে। এই ম্যাচকে ঘিরেও সেই যুদ্ধভাব থাকছে। কথার যুদ্ধতো শুরু হয়ে গেছেই। সেই সঙ্গে দুই দলই জয়ের হিসেব নিকেশ কষতে শুরু করে দিয়েছে। ২০১৫ সালের জুনের পর ২০১৬ সালের ২৩ মার্চে আবার উত্তেজনাকর একটি ম্যাচ দেখা যায়। টি২০ বিশ্বকাপের ‘সুপার-১০’ এর সেই ম্যাচটিতে অল্পের জন্য জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ১ রানে হেরে যায়। এ বছর ১৮ মার্চেও জয়ের একেবারে কাছাকাছি গিয়েও নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে হারে বাংলাদেশ। এই ম্যাচগুলো এখনও পোড়ায় বাংলাদেশ দলকে। সেই পোড়া দগ্ধ মন নিয়ে আজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের অবশ্য এই ম্যাচ নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। বৃহস্পতিবারই যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচ খেলেছে। অথচ বুধবার গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচ খেলেছে ভারত। ম্যাচটি নিয়ে ভাবার অনেক সুযোগ পেয়েছে। সেই সঙ্গে সুবিধাগুলো তো আছেই। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ‘সুপারফোরে’র যে সূচী দিয়েছে তাতে সব সুবিধা ভারত পেয়েছে। অন্য দলগুলো দুবাই ও আবুধাবিতে ম্যাচ খেলবে। আর ভারত সব ম্যাচ খেলবে দুবাইয়ে। তাদের ভ্রমণ করে আবুধাবিতে যেতে হবে না। বাংলাদেশ দল বৃহস্পতিবার আবুধাবিতে ম্যাচ খেলেছে। রাতে ম্যাচ শেষ হয়েছে। আবার দুবাইয়ে এসেছে। দুবাইয়ে এসে রাতটা অতিক্রম করে সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে বিকেল হতেই আবার ম্যাচ খেলতে নামতে হচ্ছে। ম্যাচের আগে এমন এক মুহূর্ত কোন দলের ভাল লাগে। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাই ক্ষেপেছেন। হতাশ হয়েছেন। বলেছেন, ‘সূচী বদল নিয়ে চিন্তা করার সুযোগই পাইনি। তবে অবশ্যই এটা হতাশার। প্রথম থেকেই আমাদের পরিকল্পনায় ছিল যে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ম্যাচে হারাতে পারলে আমরা হয়তো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এগিয়ে যাব। এরপর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ দলের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলব সুপার ফোরে। কিন্তু বুধবার সকালে জানতে পেরেছি আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতি আর হারি, আমরা ‘বি ২’ হয়ে গেছি। এটা অবশ্যই হতাশার। আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটি এখন অবশ্যই আন্তর্জাতিক ম্যাচের মূল্য আছে। কিন্তু গ্রুপ ম্যাচ বলেন বা যা বলেন, একটা নিয়ম থাকে টুর্নামেন্টের। সেই নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছি আমরা। এটাই হতাশার।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘কাজটা কঠিন। দেখুন ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচ খেলছি আমরা কখন? একটা গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ খেলে মূল ম্যাচে যখন ঢুকছি, তখন এই গরমে আমরা ব্যাক টু ব্যাক খেলছি। আমাদের তো ২৪ জন ক্রিকেটার নেই যে মূল ১১ জনকে বিশ্রাম দিয়ে অন্য ১১ জন খেলাব। আমাদের জন্য কাজটা আগে থেকেই কঠিন ছিল, ২০ তারিখ ম্যাচ খেলেই ২১ তারিখ সুপারফোরের প্রথম ম্যাচ খেলা। রিকভারির সময়ই তো নেই। ধরুণ যে কাল (বৃহস্পতিবার) পরে ফিল্ডিং করলাম, তারপর ২১ তারিখের ম্যাচে আগে ফিল্ডিং করলাম, তাহলে মাঝে ১০ ঘণ্টাও রিকভারির সময় নেই। এটা তো সত্যি শরীরের সঙ্গে জোর করা চলে না। এই কন্ডিশনে যতটা ঘাম ঝরে, সেটা পুষিয়ে নিতেই ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা লাগে অনেক সময়। আমি অজুহাত দিতে চাই না। কিন্তু ব্যাপারটা হলো আগে তবু একটা ব্যাপার ছিল, গ্রুপ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হলে পরের ম্যাচে আমরা দেখতে পেতাম কোন্ প্রতিপক্ষ পাই বা কেমন হয়। কিন্তু এই সমীকরণের কোন সুযোগই নেই এখন। আমরা ‘বি ২’ হয়ে গেছি। খারাপ জিনিসটিই আমাদের দিকে এসেছে। এটা কতটা প্রভাব ফেলছে আমাদের মানসিকতায় সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে। একজন পাগলও এটায় ভালভাবে রিএ্যাক্ট করবে না। এটা অবশ্যই ঠিক না আন্তর্জাতিক পর্যায়ের টুর্নামেন্টে ম্যাচের আগেরদিন আপনি শুনছেন যে গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচের আগেই আমরা ‘বি ২’। সবাই হতাশা প্রকাশ না করলেও প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক।’ প্রতিক্রিয়া সবদিক থেকেই হচ্ছে। তাতে এখন আর লাভ কী? ভারত একদিন বিশ্রাম নিয়ে আরামে খেলতে নামবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা আরাম করার সুযোগই পাচ্ছেন না। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচের আগে সমর্থকদের এত চাহিদাপূর্ণ একটা ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা ক্লান্তই থাকবে! ভারত কতটা সুবিধা ভোগ করছে। এই সুবিধা নেয়ার জন্যই আসলে বাংলাদেশের জেতা উচিত। তাতে একটা শিক্ষাও দেয়া যাবে। বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ে এখন সবার চাওয়া একটাই, ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ একটা শিক্ষা দিক!
×