ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপর ম্যাচে আজ মুখোমুখি ভিয়েতনাম-লেবানন

আমিরাতকেও উড়িয়ে দেয়ার পালা মারিয়াদের

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আমিরাতকেও উড়িয়ে দেয়ার পালা মারিয়াদের

রুমেল খান ॥ শুধু নিজেদের খেলা খেললেই হবে না, পর্যবেক্ষণ করে ভালমতো ধারণা নিতে হবে প্রতিপক্ষ দলগুলো সম্পর্কেও। এই কাজটা বেশ ভালমতোই করতে পারেন গোলাম রব্বানী ছোটন। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় নারী ফুটবল দলের স্বনামধন্য এই কোচ এই যেমন ১৯ সেপ্টেম্বর এমনটি করলেন। লেবাননের বিপক্ষে খেলা শেষ করে তার দলের ফুটবলাররা বাফুফে ভবনের আবাসিক ক্যাম্পে চলে গেলেও দলের সঙ্গে যাননি তিনি। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোঃ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামেই থেকে যান। গ্যালারিতে বসে বসে দেখেন ভিয়েতনাম-বাহরাইন ম্যাচটি। এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বের (‘এফ’ গ্রুপে) এই ম্যাচে বাহরাইনকে গোলবন্যায় সয়লাব করে দেয় (১৪-০) ভিয়েতনাম। জয়ী দলের খেলা দেখে ছোটন নিশ্চিত হয়ে যান ভিয়েতনামের শক্তিমত্তা সম্পর্কে। তাদের সঙ্গেই যে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর শেষ ম্যাচে অবতীর্ণ হবে স্বাগতিক বাংলাদেশ। কোন সন্দেহ নেই ওই ম্যাচটিই হতে যাচ্ছে এই গ্রুপের সেরা দল হওয়ার জন্য নিয়ামক ম্যাচ। তবে তার আগে ছোটনের দলকে আরেকটি ম্যাচ খেলতে হবে। এই ম্যাচটি লাল-সবুজবাহিনীর জন্য ‘অলিখিত সেমিফাইনাল’! প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাত। কমলাপুরে ম্যাচটি শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৩টায়। সর্বশেষ মোকাবেলা দু’বারই মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিকে হারিয়েছে বাংলার বাঘিনীরা। আজও যে তার ব্যত্যয় হবে না এ ব্যাপারে তাদের কোন সংশয় নেই। বরং আছে অফুরান আত্মবিশ্বাস। এর আগে অন্য ম্যাচে সকাল সাড়ে ১১টায় ভিয়েতনাম খেলবে লেবাননের বিপক্ষে। এই আসরে এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলছে স্বাগতিক দল। বাহরাইনকে ১০ গোলে উড়িয়ে দেয়ার পর লেবাননকেও উপহার দিয়েছে ‘দুই হালি’ গোল। তীব্র খরতাপ এবং অসহ্য উষ্ণতাও কিশোরীদের জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি। ফিটনেস, স্পিড আর স্কিলের দুর্দান্ত সমন্বয় অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রেখেছে তাদের। তারপরও সমস্যা একটাইÑ প্রচুর গোল করলেও (এ পর্যন্ত তাদের গোলসংখ্যা ১৮) গোল করার প্রচুর সুযোগও নষ্ট করেছে তারা। যেমন বাহরাইনের বিপক্ষে ২০-০ আর লেবাননের বিপক্ষে ১৫-০ গোলের ব্যবধানে জিততে পারতো তারা। তবে এ নিয়ে মোটেও ভাবিত নন কোচ। বরং তিনি মুগ্ধ তার শিষ্যাদের পারফর্মেন্সে। তবে গোল মিসের হার যেন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে সেটা নিয়েই কাজ করছেন তিনি। অবস্থার প্রেক্ষিতে এখন এই গ্রুপে বাংলাদেশের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের মতো তাদেরও ২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট। এমনকি গোলসংখ্যাও (১৮, কোন গোল হজম করেনি) সমান। এখন তাদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার আগে এক ম্যাচ হাতে পাচ্ছে বাংলাদেশ (বিপক্ষ আমিরাত)। বাংলাদেশের সুবিধা হচ্ছে সেই ম্যাচটি খেলার আগে ভিয়েতনাম তাদের ম্যাচটা খেলবে (প্রতিপক্ষ লেবানন)। সেই ম্যাচে ভিয়েতনাম যত গোল করবে (তাদের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি), সেটা জেনে বাংলাদেশ তাদের চেয়ে বেশি গোল দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে আমিরাতের বিপক্ষে। এ প্রসঙ্গেই ছোটন বলেন, ‘গত দুই ম্যাচে মেয়েরা যেভাবে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে, আমিরাতের বিপক্ষেও সেভাবেই খেলবে। শুক্রবার সকালে আগে আমরা ভিয়েতনাম-লেবানন ম্যাচটা দেখব। ম্যাচের ফল জেনে আমরা টার্গেট সেট করব আমিরাতের বিপক্ষে কত গোল দেয়ার জন্য খেলব। তাই বলে আমি আমিরাতকে ছোট দল মনে করি না। বরং তাদের সমীহই করছি।’ প্রচ- গরমের মধ্যে দু’দিনের ব্যবধানে দুটি ম্যাচ খেলে খেলোয়াড়রা যদি ক্লান্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আজ দুর্বল আমিরাতের বিরুদ্ধে কি কিছু নিয়মিত ফুটবলারকে বিশ্রামে রাখবেন ছোটন? ‘এমনটা হতে পারে। তাছাড়া আমাদের অধিনায়ক মারিয়া একটি হলুদ কার্ড পেয়েছে। আমিরাতের সঙ্গে খেলে আরেকটি কার্ড পেলে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে সে খেলতে পারবে না। এই বিষয়টি মাথায় নিয়েই আমরা আমিরাতের বিরুদ্ধে দলে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারি।’ প্রচুর গোল মিস হলেও শিষ্যাদের খেলায় মুগ্ধ কোচ। লেবাননের বিপক্ষে মেয়েরা যেভাবে খেলেছে সেটা সামনের দুই ম্যাচেও ধরে রাখতে চান তিনি, ‘এখন পর্যন্ত মেয়েদের খেলায় আমি সন্তুষ্ট। আমার কাছে সবদলই শক্তিশালী। আরব আমিরাতও কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে আমরাও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। আমাদের ভাবনায় শুধুই জয়। গত আসরে তাদের আমরা হারিয়েছি। এবারও হারাতে পারব বলে আশা করি। এ জন্য মেয়েরা তাদের সেরা খেলাটাই খেলবে।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরের বাছাইপর্বে ঢাকায় এই আমিরাতকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। গোল করেছিল কৃষ্ণা, আনুচিং, তহুরা। বয়সের কারণে এবার দলে নেই কৃষ্ণা। তাতে সমস্যা হচ্ছে না। মেয়েদের ফুটবলের পাইপলাইনটা অনেক শক্ত। কৃষ্ণার জায়গায় অনেক ভাল ফুটবলার উঠে এসেছে। বর্তমান দলের মেয়েরা এবারও আমিরাতকে হারিয়ে সেরা হওয়ার পথে আরেকধাপ এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস ছোটনের। ভিয়েতনাম কয় গোল করল, সেটা নিয়ে কোন চাপ নিতে চান না ছোটন, ‘সেরা হতে হলে আপনাকে সব ম্যাচই জিততে হবে। আশাকরি তা করতে পারব। আমরা সব ম্যাচেই জিতলে তখন আর গোলের সমীকরণ নিয়ে মাথা খারাপ করতে হবে না।’ আমিরাত প্রথম ম্যাচে ভিয়েতনামের কাছে হেরেছে ৪-০ গোলে। এরপর লেবাননের কাছে তারা হারে ৬-৩ গোলে। দেখার বিষয়, আজ তারা কেমন খেলে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
×