ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এ সময়ের ফ্যাশনেবল পোশাক

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এ সময়ের ফ্যাশনেবল পোশাক

জীবনে ফ্যাশন এক প্রধান অনুষঙ্গ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অনুষঙ্গের যে রূপান্তর হচ্ছে’ এই রূপান্তরের মর্মে নিহত রয়েছে শিল্প ও নান্দনিকতার এক অমিয় উজ্জ্বলতা। যে উজ্জ্বলতার পথ বেয়ে যুগ যুগ ধরে ফ্যাশন ট্রেডে পরিবর্তনের সৌন্দর্যময়তা স্ফুরিত হচ্ছে। মানুষের মন ও রুচির ভিন্নতর মুগ্ধতম নক্ষত্রের আলোকরশ্মি জেগে ওঠার সূচনাকাল থেকেই পরিলক্ষিত হতে দেখা যাচ্ছে এক-একেকজন মানুষ তথা নারী ও পুরুষের জীবনাচার, পছন্দ-অপছন্দ এবং পোশাক-আশাকের ভিন্নতা। এই ভিন্নতা দৈনন্দিন জীবনেও নানাভাবে ছাপ ফেলে যায়। বলা চলে বিজ্ঞানের যুগে জীবনের প্রবেশমুহূর্ত থেকেই মানুষের মধ্যে আধুনিক চেতনার স্ফূরণ ঘটে। যে স্ফূরণ পরবর্তীতে জীবন ধারায় সম্পৃক্ত হয়ে যায় ধীরে ধীরে। একটা সময় আসে যখন জীবন প্রচ- গতিশীল হয়ে পড়ে। আর এই জাতিটা আধুনিকতারই প্রতিচ্ছায়া। জীবনবোধ এবং জীবনাচার যখন এই আধুনিক কনসেপ্টের মায়াবি আচ্ছন্নতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে জীবন তখন সেই আধুনিক ধারার প্রতিবিম্বে রূপ নেয়। মনপ্রাণজুড়ে প্রতিনিয়ত শিল্পের অবগাহন প্রবলভাবে রেখাপাত করে। যার ছাপ পড়ে প্রাত্যহিক জীবনে। প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটা অনুষঙ্গই যে দৃষ্টিনন্দন কিংবা আকর্ষণীয় তা কিন্তু নয়। এর মধ্যে থেকে দু’একটা বিষয় অন্যকে আকৃষ্ট করে। এবং কখনও সেটা অনুকরণীয়ও হয়ে উঠতে পারে। অনুকরণ বা আকৃষ্ট হওয়ার বিষয়টা ব্যাপকভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে সেলিব্রেটিদের জীবনধারাকে উপজীব্য করে। শুধু পোশাকের মধ্যেই যে ফ্যাশনটা সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়। ড্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয় হেয়ারস্টাইল, নেকলেস, ব্রেসলেট, সু, প্যান্টের বেল্ট, ভ্যানিটি, ঘড়ি সানগ্লাস থেকে শুরু করে ইত্যাকার অনুষঙ্গ। মানুষের রুচিও পছন্দেও আসে পরিবর্তন। ফ্যাশনের এই আলোটা চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশক থেকে ক্রমশর ব্যাপৃত হতে থাকে। ষাটে এসে বাঙালী নারী ও পুরুষের মধ্যে দানা বাঁধতে থাকা ফ্যাশন চেতনাটা প্রস্ফুটিত হতে থাকে। তবে এর পেছনে চলচ্চিত্রের সেলিব্রেটিদের একটা প্রভাব তো আছেই, কারণ পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাঙালীরা স্বদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারার অভিষেক ঘটায়। এর অব্যবহিত পরে ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে টিভি স্টেশন স্থাপিত হয় ঢাকায়। এই টিভি স্টেশন স্থাপনের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির রূপটা দ্রুত বদলে যেতে থাকে। বদলে যাওয়া এই সংস্কৃতির পথ বেয়ে বাঙলী মধ্যবিত্ত সমাজে উদিত হয় এক নতুন শহরের। ঘরোয়া বিনোদন হিসেবে যেমন টেলিভিশনের একটা অপরিসীম গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। পাশাপাশি যারা এই টিভি পর্দার ভেতরের মানুষ কিংবা সিনেমা জগতের মানুষ। তাদের ড্রেস, হেয়ারস্টাইল, হাঁটাচলাকে অনুকরণ করা একটা ফ্যাশনে রূপ লাভ করে। ক্রমান্বয়ে ফ্যাশনের তারাটাও ফুটতে থাকে যেন। তারপর আসে ১৯৭১। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতা লাভের পর বাঙালী সংস্কৃতির সুমসৃণ পথ বেয়ে দেশীয় ফ্যাশন ধারায় উন্মেষ ঘটে এক অসম্ভব সুন্দর আর নান্দনিক যুগের। এ যুগ প্রথমে নগর কেন্দ্রিক এবং সীমিত মানুষের জীবনধারায় আবদ্ধ থাকলে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ফ্যাশনের ফোয়ারায় যেন সিক্ত হয়ে ওঠে প্রায় পুরো দেশ। প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলোর মাধ্যমে দেশীয় ফ্রেব্রিকের বিস্তার যেমন এতে ঘটতে থাকে। তেমনি দেশীয় তাঁতশিল্পও সমৃদ্ধ হতে থাকে পুরনো গৌরবের ছোঁয়ায়। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা লক্ষ্যণীয় তা হলোÑ ফ্যাশন এখন বয়সের সীমায় অবরুদ্ধ নেই। শিশু থেকে বুড়ো। তরুণ থেকে প্রৌঢ়। তরুণী থেকে মহিলা। সবার জীবনেই ফ্যাশনের অপূর্ব রুচিশীলতার মার্জিত ছন্দময় গুঞ্জরণটা থেকে থেকে বেজে ওঠে। ছবি : কেক্রাফট
×