ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তন ॥ উদ্ভিদ ও প্রাণীর টিকে থাকার কৌশল

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জলবায়ু পরিবর্তন ॥ উদ্ভিদ ও প্রাণীর টিকে থাকার কৌশল

জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। তাপমাত্রা, বৃষ্টি ও তুষারপাত এবং মৌসুমের পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিয়ে প্রজাতিগুলো কি টিকে থাকতে বা অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে? জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে গবেষকদের কাছে এ এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। নতুন এক গবেষণাপত্রে জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত বর্তমান জ্ঞানের পর্যালোচনা করা হয়েছে। অতীতে পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীরা হয় পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল নয়ত এক স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গিয়েছিল কিংবা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। গবেষণার ফলাফল দৃষ্টে বলা যায় যে, ভবিষ্যতে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে জীববৈচিত্র্যে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ট্রেন্ডস ইন ইকোলজি এ্যান্ড ইভোলিউশন’-এ একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী দলের প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে এই অভিমত দেয়া হয়েছে। গবেষণাপত্রের মূল লেখক কোপেনহেগেনের অধ্যাপক ডেভিড ব্রাডো-নগুয়েস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিরও প্রতিক্রিয়া ঘটছে। আমরা জীবজন্তু ও উদ্ভিদের আচরণ এবং চলাচলের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। শীতকালে শীতের তীব্রতা কমে যাওয়ায় উষ্ণতা দেখা দেয়ায় ফুল প্রস্ফুটিত হওয়ার সময় বদলে যাচ্ছে। উষ্ণতর শীতকালের কারণে পেঁচার শরীরের রং কালো হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং জীববৈচিত্র্যের ভবিষ্যত কেমন দাঁড়াবে? প্রাণী ও উদ্ভিদরা কি তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও মৌসুমের পরিবর্তনের কারণে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে? অধ্যাপক ডেভিড জানান, গত লাখ লাখ বছরে প্রাণবৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করছে এমন অসংখ্য ঘটনার বিপুল পরিমাণ গবেষণা তথ্য তাঁরা সঙ্কলন করেছেন। তাতে দেখা গেছে যে প্রজাতিরা হয় তাদের আচরণ বা দৈহিক আকার-আকৃতির পরিবর্তন ঘটিয়ে নিজ নিজ আবাস অঞ্চলে নতুন অবস্থায় খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অবশ্য প্রকৃতিতে পরিবর্তনের বর্তমান ব্যাপকতা ও অদৃশ্য এবং অভাবিত গতি প্রজাতিগুলোকে তাদের অভিযোজনের সক্ষমতার বাইরে ঠেলে দিতে পারে। এই সেদিন অবধি বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন যে জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রজাতিগুলোর প্রধান প্রতিক্রিয়া ছিল স্থানান্তরিত হওয়া। তবে নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে নতুন অবস্থার সঙ্গে স্থানিক অভিযোজন প্রজাতিগুলোর টিকে থাকার ব্যাপারে মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। প্রজাতিগুলোর অভিযোজন ঘটে তখনই যখন গোটা জনগোষ্ঠীর পরিবর্তন ঘটে। দৃষ্টান্তস্বরূপ যখন সমস্ত পেঁচার শরীরই অধিকতর কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে। এই ব্যাপারটা ধীরে ধীরে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে ঘটে। বিষয়টি বিশদ ব্যাখ্যা করে গবেষক দলের অন্যতম স্টিফেন জ্যাকসন বলেন, জীবাশ্ম ও অন্যান্য জৈবিক আর্কাইভ থেকে শুরু করে পৃথিবীর ইতিহাসের প্রায় সীমাহীন সংখ্যক কেস স্টাডি দেখার সুযোগ আমাদের হয়েছে। তা থেকে আমরা কিভাবে জলবায়ু বিভিন্ন হারে ও ব্যাপকতায় পরিবর্তিত হয় এবং কি ধরনের প্রভাব প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর পড়তে পারে সে সম্পর্কে অমূল্য জ্ঞান লাভ করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিভাবে প্রাণবৈচিত্র্যে পরিবর্তন ঘটে সেই রহস্যের জবাব এই নতুন গবেষণা থেকে মিলতে পারে। এই সংক্রান্ত জ্ঞান নীতি নির্ধারকদের অবহিত করা দরকার যাতে করে ভবিষ্যতে তারা কার্যকর সংরক্ষণ কার্যক্রম চালাতে পারেন। কয়লা রঙের দাগওয়ালা ফাইলফিশের মতো কিছু কিছু প্রজাতি যথেষ্ট দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে বা স্থানান্তরিত হতে না পারায় তারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরেক গবেষক স্পেনের ফ্রান্সিসকো রডরিগুয়েজ সানচেজ বলেন, ‘আমরা জানি যে অতীতে প্রাণী ও উদ্ভিদরা পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে অথবা স্থানান্তরিত হয়ে নিজেদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করেছে। তবে বর্তমানে যে ব্যাপকতা ও গতিতে পরিবর্তন ঘটছে তা বিগত কয়েক লাখ বছরে অতি বিরল ঘটনা। তাই আমাদের জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেয়ার মডেলের উন্নতি ঘটাতে হবে।’ সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×