ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কণ্ঠরোধ হবে না ॥ সংসদে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কণ্ঠরোধ হবে না ॥ সংসদে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে সমালোচনা বা উদ্বেগ প্রকাশ করার কোন যৌক্তিকতা নেই উল্লেখ করে বলেছেন, কেউ কেউ শুধু ব্যক্তিস্বার্থ থেকে বা তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিলের ওপর মতামত দিয়েছেন। একবারও তাঁরা চিন্তা করেননি বা তাঁদের মাথায় আসেনি যে পুরো দেশ, সমাজ ও মানুষের স্বার্থে এই বিলটা কত গুরুত্বপূর্ণ। দেশ, সমাজ, শিশু থেকে যুবসমাজ পর্যন্ত সবাইকে তো আমাদের রক্ষা করতে হবে। এখানে কণ্ঠরোধ কোথায় হলো? কণ্ঠরোধ তো হয়নি। এসব বক্তব্যের কোন যৌক্তিকতা নেই, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ারও কিছু নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল যেন সবাই পায়, কুফল থেকে দূরে থাকে- এদিক বিবেচনা করেই বিলটি আনা হয়েছে। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় দেশের গণতন্ত্রের ভিত অত্যন্ত শক্তিশালী ও মজবুত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল বলেই বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। সত্যিই আজ গ্রামীণ মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। মাত্র সাড়ে ৯ বছরেই পুরো সমাজেই একটা বিরাট পরিবর্তন আমরা আনতে সক্ষম হয়েছি। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল। বাংলাদেশকে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই- এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদও সমাপনী বক্তব্যে রাখেন। এরপর রাত পৌনে দশটায় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশন সমাপ্তির রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে শোনান। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিল। অথচ দেখলাম কয়েকজন স্বনামধন্য সম্পাদক, সাংবাদিক ও সমাজের কিছু বিজ্ঞজন এই আইনের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন। তাঁরা শুধু কণ্ঠরোধ হলো কিনা সেটাই দেখে। কণ্ঠরোধ তো হয়নি, কণ্ঠ আছে বলেই তো তারা মতামত দিচ্ছেন। কণ্ঠরোধ করলে তো মতামত দেবার মতো ক্ষমতা থাকত না। তিনি বলেন, কণ্ঠরোধটা যে কি সেটা মার্শাল ল’ বা অবৈধ ক্ষমতা যখন ছিল তখন সবাই বুঝেছে। অবশ্য এদেশে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা যারা ছিল, যারা তাদের পদলেহন করেছে, তোষামোদী করেছে- তাদের তখন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু যারা তাদের অন্যায় কথা বলতে গেছে তাদের অসুবিধা হয়েছে। ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের আমলে কিভাবে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছে সেটা কী তারা ভুলে গেছেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তারা ডিজিটাল আইন করার পরেই কণ্ঠরোধের কথা বললেন। কণ্ঠরোধ কোথায়? এই দেশে মাত্র একটা টেলিভিশন ছিল। কোন সরকার কী সাহস পেয়েছে টেলিভিশন ও রেডিওকে বেসরকারী হাতে তুলে দিতে? কোন সরকাই সাহস পায়নি, আমরা দিয়েছি। এখন মধ্যরাত পর্যন্ত এসব বেসরকারী টিভিতে টকশ’ হয়, সেখানে যা খুশি তা আলোচনা করে যাচ্ছেন। কেউ যেয়ে তো তাদের গলা চেপে ধরছে না। কেউ তো তাদের বাধা দেয়নি। শুধু তাদের সাংবাদিকতার বিষয়টাই তারা দেখছেন। দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের কথা তারা ভাবছেন না। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাংবাদিকতা হবে গঠনমূলক। সাংবাদিকতায় থাকবে দায়িত্বশীলতা, সাংবাদিক হবে দেশ, সমাজ ও মানুষের মঙ্গলের জন্য। নিশ্চয়ই সাংবাদিকতা সংঘাতের জন্য হবে না। সাংবাদিকতা দেশের অকল্যাণের জন্য হবে না। দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য হবে না। এমন সাংবাদিকতা থাকতে হবে যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষের ভেতরে আত্মবিশ্বাস আনবে, সন্দেহের সৃষ্টি করবে না। মানুষকে বিভ্রান্ত করবে না। মানুষের মধ্য সংঘাত সৃষ্টি করবে না। একটা সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদকে উস্কে দেবে না। সেটাই তো হওয়া উচিত। সমাজকে সঠিকভাবে পরিচালনার দিকেই নিয়ে যাবে- আমরা তো সেরকমই সাংবাদিকতাই চাই। কিছু সংবাদ মাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের এতো উন্নয়ন হচ্ছে, বিশ্ববাসী দেশের উন্নয়ন দেখছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নয়নের রোলমডেল বলছে। কিন্তু দেশে কিছু পত্রিকা আছে সেটি খুললে মনে হয় বাংলাদেশ শেষ হয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন- সরকার কি খারাপ কাজ করছে? কোন উন্নয়নই তাদের চোখে পড়ে না। যারা ভালো কিছুই দেখতে পারেন না, সবই খারাপ দেখেন- এটা তাদের মানসিক অসুস্থতা। আমি দেশকে ভালবাসি, দেশকে চিনি। আমার বাবা দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। ব্যক্তিস্বার্থে নয়, দেশ ও মানুষের স্বার্থে কাজ করি, দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। কারোর লেখা দিয়ে কিংবা পত্রিকা পড়ে শিখতে হবে না। আমার আত্মবিশ্বাস আছে, জনগণের ওপর আস্থা-বিশ্বাস আছে। পত্রিকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করি। আর এই ভাল না লাগার গোষ্ঠীর পত্রিকা পড়ারও কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউটিউব, ফেসবুকের ভাল দিক আছে, আবার খারাপ দিকও আছে। খারাপ বিষয়গুলো সমাজের জন্য অশুভ বিষয় বয়ে আনে। অনেক ছেলেমেয়ে এর প্রতি এডিকটেড হয়ে যায়। অপব্যবহার হয়, অপপ্রচার হয়। এমনভাবে অপপ্রচার হয় যে পারিবারিক অসন্তোষ তৈরি হয়। আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটে। এইসব বিষয়তো আমাদের দেখতে হবে। এ নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আমাদের একান্ত দরকার। অনেকে এর মধ্যে এত বেশি ডুবে যায় যে, মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এটা অনেক সময় সমাজের জন্য ও সংসারের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। চরিত্রহনন শুরু হয়। এই কুপ্রভাবের ফলটা আমাদের সমাজের জন্য মোটেই ভাল নয়। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দিকটাও আছে। এসব মাধ্যম যদি সুস্থভাবে পরিচালিত হয় তাহলে সেটা ভাল হতে পারে। আবার উল্টো হলে সমাজ ও সংসার ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, সকলের জন্য নিরাপত্তা অত্যন্ত প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। সে লক্ষ্যই নিয়ে কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়েছে। এখানে শুধূ গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারের কথা চিন্তা করা হয়নি। তাহলে তারা কেন এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন? যেটা করেছি জাতীর স্বার্থে ও মানুষের স্বার্থেই করেছি। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতি আজ খুবই শক্তিশালী। বাজেট বাস্তবায়ন করতে আজ কারও কাছে আমাদের হাত পাততে হয় না। এই সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি পরিকল্পিতভাবে এগোনোর কারণে। বাজেটের ৯০ ভাগই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে পারি। তাই বাংলাদেশ আজ বিশে^র কাছে রোল মডেল। সারা বিশে^ জঙ্গীবাদ একটি সমস্যা। আমরা সন্ত্রাস,জঙ্গীবাদ সফলভাবে দমন করতে পেরেছি। এখন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পরিকল্পনার মূল টার্গেট ছিল গ্রামীণ অর্থনীতি। তৃণমূলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন। সবকিছুতে বিশে^ একটা নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছি। দেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি। একসময় বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় নিয়ে এসে বিলি করা হতো। এখন কিন্তু আর সেই অবস্থা নেই। সংসদ অধিবেশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদে কোন অশালীন কথা ছিল না। এটা গণতন্ত্রের ভীতকে শক্তিশালী করেছে, মজবুত করেছে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এক সময় এই পার্লামেন্ট অনেক নোংরা ভাষা ব্যবহার হয়েছে। একসময় মানুষের কাছে সংসদ নিয়ে আগ্রহ কমে গিয়েছিল। কিন্তু এবার সংসদের ওপর আস্থা ও বিশ^াস অর্জন হয়েছে। সরকার ও বিরোধী দল মিলে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। সড়ক পরিবহন বিল প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, এটা দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি করা হয়েছে। সকলের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর ধরে এ নিয়ে কাজ করা হয়েছে। অনেকে প্রশংসা করেছেন। কোন খুঁত তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। আর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিলো। তারা কিন্তু মেধাবি। কিন্তু তারা কখনও স্বীকৃতি পায়নি বা তারাও চায়নি। এটাই হলো বাস্তবতা। এসব শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে যেনো প্রবেশ করতে পারে, জীবনটাকে যেনো উন্নতি করতে পারে সেটা চেয়েছি। প্রায় ৯ বছর তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বিলটি পাস করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের সরকারের শেষ সময়, পড়ন্ত বেলা। সামনে নির্বাচন হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসবেন। তবে আমরা দেশের গণতন্ত্রর ভীতকে শক্তিশালি করেছি, মজবুত করেছি। যারা এটা দেখেন না তাদেরই আসলে নড়বড়ে অবস্থা। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার আস্থা আছে, বিশ^াস আছে। সাধারণ জনগণ কিন্তু এসব বোঝে। আবার যদি ক্ষমতায় আসি তাহলে প্রতিটি গ্রামকে আমরা শহরে পরিণত করবো। প্রতিটি গ্রামে আমরা নাগরিক সেবা পৌঁছে দেব। আমরা সমগ্র দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবোই- এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এত সফল সংসদ অতীতে কখনো হয়নি-বিরোধী দলের নেতা \ বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ দশম জাতীয় সংসদকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেন, এত সফল ও আলোচনায় মুখর সংসদ অতীতে কখনো দেখিনি। এরকম সফল ও কার্যকর সংসদ অতীতে কখনো হয়নি। এ কারণে পাঁচটি বছর দেশ সফলভাবে চলেছে, উন্নত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের তরুণ সমাজকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এই উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করতে পারি তবে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। আমরা এখনও তরুণ সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা অবশ্যই রাখতে হবে। যদি কোটা তুলে দেওয়া হয় তবে অন্যভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। সংঘাত নয়, আলোচনার মাধ্যমে কোটা নিয়ে স্থায়ী সমাধানে আমাদের আসতে হবে। লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণরা সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় চাকরি পাচ্ছে না। তাই চাকরিতে প্রবেশ ৩৫ বছর করলে ছেলেদের অনেক কল্যাণ হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই এমপিওভুক্তি করা প্রয়োজন। স্মার্ট অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা বিপথে চলে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণের মধ্যে অবশ্যই আনতে হবে। রাত এগরাটার পর ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হলে ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনায় মন দিতে পারবে। কারণ শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া মানে কোকেন তুলে দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে ছেলে-মেয়েদের রক্ষা করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে রক্ষার্থে কঠোর হস্তে খাদ্যে ভেজাল বন্ধ করতে হবে। মাত্র দশ দিনের সংসদ অধিবেশনে ১৮ বিল পাস \ শেষ হলো জাতীয় সংসদের মাত্র ১০ কার্যদিবসের ২২তম অধিবেশন। এই সময়ে রেকর্ড সংখ্যক ১৮ সরকারী বিল পাস হয়েছে। যার মধ্যে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল, সড়ক পরিবহন বিলসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল রয়েছে। সরকারের মেয়াদ পূর্তির শেষ সময়ের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এতো অধিক সংখ্যক বিল পাস করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, সংসদের চলতি অধিবেশন শুরু হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর। মাত্র ১০ কার্যদিবসের এই অধিবেশন বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। শেষ দিনেও ৪টি বিল পাস হয়েছে। এর আগের ২৫ কার্যদিবসের বাজেট অধিবেশনে ১৫ বিল পাস হয়। চলতি বছরের সব থেকে দীর্ঘ অধিবেশন ২০তম অধিবেশনে ১৫টি বিল পাস হয়। আর আগের চার বছরে ১৯ অধিবেশনে ১৩০ বিল পাস হয়। সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি অধিবেশনের মতো অল্প সময়ে এতগুলো বিল পাসের রেকর্ড নেই। আগামী অধিবেশনে কি হয় তা দেখার বিষয়। আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে একটি সংক্ষিপ্ত অধিবেশন বসার কথা রয়েছে। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৮ জানুয়ারি। এর তিন মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে সংবিধানে। ফলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে দুই মাসের মধ্যে সংসদ অধিবেশন বসার বাধ্য-বাধকতা নেই। ফলে আগামী অধিবেশনই এই সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন। অধিবেশনের শেষ দিনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিল, পণ্য উৎপাদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্রমিক (চাকরি শর্তাবলী) বিল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বিল ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা বিল পাস হয়। এর আগে বুধবার পাস হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল, সড়ক পরিবহন বিল এবং ‘কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রী (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী) সমমান প্রদান বিল। ১৮ সেপ্টেম্বর পাস হয়েছে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড (সংশোধন) বিল, কৃষি বিপণন বিল ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল নামের তিনটি বিল। এছাড়া ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি বিল ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বিল, ১৬ সেপ্টেম্বর সার (ব্যবস্থাপনা) (সংশোধন) বিল ও যৌতুক নিরোধ বিল, ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বিল এবং ১২ সেপ্টেম্বর বস্ত্র বিল, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিল পাস হয়েছে। রাত পৌনে দশটায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের সমাপনী বক্তব্যে স্পীকার সংসদ অধিবেশন সমাপ্তি সম্পর্কিত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে শোনান। সর্বশেষ ২২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত দুটি কার্যদিবসে উত্তর দানের জন্য ৮৪ প্রশ্ন পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী ২৬টি প্রশ্নের উত্তর দেন। আর অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য এক হাজার ৫০৪ প্রশ্ন পাওয়া যায় তার মধ্যে মন্ত্রীরা ৮০৪ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সংসদ সদস্যদের দেয়া জরুরী জনগুরুত্বপূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণীয় নোটিস নিয়ে আলোচনা হয়।
×