ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনকালীন সরকার

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নির্বাচনকালীন সরকার

দেশ এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে। একাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অবাধ হয় সে জন্য নির্বাচন কমিশন সমূহ প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনার দায়-দায়িত্ব কমিশনের একান্ত এখতিয়ার। শুধু সংসদ নয়, অন্যান্য নির্বাচনও তারা পরিচালনা করে আসছে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ইত্যাকার নির্বাচন তারাই আয়োজন করে আসছে। সাম্প্রতিককালে স্থানীয় সরকার পরিষদের যেসব নির্বাচন হয়েছে, তার অধিকাংশই সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরাও বলেছে। কোথাও কোন হানাহানি, সংঘর্ষ, হামলা, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, কেন্দ্র দখল, জালভোট, মিডিয়া ক্যুর ঘটনা ঘটেনি। যা পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক জান্তা শাসকদের সময় ছিল স্বাভাবিক পন্থা। দুই সামরিক শাসক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে জনগণকে তুচ্ছ করে ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, ফলাফল পাল্টে দেয়ার মতো জঘন্য কাজগুলো করেছে। নির্বাচন কমিশনকে বশংবদ বানিয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। ভোটকেন্দ্রে হাঙ্গামা হানাহানি, প্রতিপক্ষের সমর্থকদের পেটানো, গ্রেফতার সে আমলে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিল। জান্তা শাসকরা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের নামে প্রহসন মঞ্চস্থ করত। অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলে আদপে কিছুই ছিল না। সংবিধান অনুসারে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু সেই দায়িত্বটুকুও তাদের পালন করতে দেয়া হয়নি। কমিশনে যাদের নিয়োগ দেয়া হতো, তারা সবাই ছিলেন ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ছিল জান্তা শাসকদের বশংবদ। প্রতিকারে জনগণ এক সময় রাস্তায় নেমে এসেছিল। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সামনে আসে। রাজনৈতিক দলগুলো অভিন্ন কর্মসূচীতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। অবশেষে স্বৈরাচারের পতন ঘটে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। এরপর ২০০১, ২০০৬ ও ২০০৯ সালে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় তারা ক্রমশ বিতর্কিত হয়ে পড়ে। অনেকের আচরণ ছিল একপেশে এবং গণবিরোধী। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মেয়াদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও টানা দুই বছর অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে গণবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হয়। জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কারণ তারা রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণই শুধু নয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জেল, জুলুম, হুলিয়ায় আক্রান্ত করে এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীকালে আদালতে তাদের পর্যবেক্ষণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত প্রদান করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধান থেকে বাদ দেয়। এরপর ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে আসছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র বিরাজ করছে, সেখানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশও (টিআইবি) বলেছে, দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব, যদি ক্ষমতাসীন দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ অন্য স্টেকহোল্ডাররা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা থাকলে দলীয় সরকারের অধীনেও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব।
×