ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

বুধবার জাতীয় সংসদে তিনটি বিল পাস হয়। এগুলো হলো : ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮, সড়ক পরিবহন বিল ২০১৮ এবং কওমি মাদ্রাসার স্নাতকোত্তর স্বীকৃতি সংক্রান্ত একটি বিল। তিনটি আইন পাস হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন নিয়ে বেশি সরব হয়েছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। ডিজিটাল নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রয়োজনে পুলিশকে পরোয়ানা এবং কারও অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আইনটিতে যুক্ত করা হয়েছে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট’। এ সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটিত হলে তার জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের একটি ধারায় অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধী জামিন পাবেন না। অর্থাৎ অপরাধটি হবে জামিন অযোগ্য। বিশ্বের যে কোন জায়গায় বসে বাংলাদেশের কোন নাগরিক এই আইন লঙ্ঘন হয় এমন অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে। সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তি ছিল বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বিষয়ে। শেষ পর্যন্ত ধারাটি বহালই থাকছে এই ডিজিটাল আইনে। তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আইনটিকে ঐতিহাসিক আইন হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে ডিজিটাল যুদ্ধ হবে। এই যুদ্ধে যদি রাষ্ট্রকে নিরাপত্তা দিতে না পারি, রাষ্ট্র যদি বিপন্ন হয় তাহলে অপরাধটা আমাদেরই হবে।’ সম্পাদক পরিষদ এবং দেশের বেশ ক’জন সিনিয়র সাংবাদিক ডিজিটাল আইন পাশে উদ্বেগ ও আপত্তি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে এই আইনটি সংবাদপত্রের স্বাধীন মত প্রকাশে বাধাস্বরূপ। বলা হয়েছে, এ আইন সাংবিধানিক অঙ্গীকার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী। দেশের অধিকাংশ জাতীয় দৈনিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আইনটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি আইনটিকে ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও হতাশা লক্ষ্যযোগ্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের পর্যবেক্ষণে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে সরকারের সমালোচনার কারণে কিংবা ভিন্ন মত প্রকাশের ফলে হয়রানিমূলক মামলায় পড়ার আশঙ্কার বিষয়টি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই আইনটির সপক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক নামকরা সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পরপরই এ নিয়ে মতামত দিয়েছেন। তাদের কণ্ঠরোধ হয়নি। সেজন্যেই তারা মতামত দিতে পারছেন, না হলে মতামত দিতে পারতেন না।’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পরিষ্কার : ‘ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থচিন্তা থেকে বিবেচনা করলে হবে না। সমগ্র রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় আমরা দেখেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ডিজিটাল মিডিয়ার অপব্যবহার হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বেশ কয়েকবার। নারীর ওপর ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন চলছে। তাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মাধ্যম। তাদের সাইবার নিরাপত্তা দেয়া জরুরী হয়ে উঠেছিল। জঙ্গীবাদের প্রসারে মাধ্যমটি ব্যাপকভাবে অপব্যবহৃত হওয়ারও নজির রয়েছে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার কাজেও বিপুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে মাধ্যমটি। সম্প্রতি কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সামাজিক অস্থিরতা ছড়ানোর অপচেষ্টা নেয়া হয়। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোয় এই মাধ্যমটি অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যম যাতে ধ্বংসাত্মক দানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হতে পারে সেজন্যে মাধ্যমটির নিয়ন্ত্রণ অস্বীকার করার নয়। সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বিনষ্টির পক্ষে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম। অথচ এই মাধ্যমটি জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে এবং অর্থনীতির প্রবাহে এবং মানুষে মানুষে দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিপ্লবী ব্যবস্থা হিসেবেই আমাদের হাতের মুঠোয় রয়েছে। প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার রোধই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
×