ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রুশ অস্ত্র ক্রয়ে চীনা সামরিক বাহিনীর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেব ॥ বেজিং

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেব ॥ বেজিং

যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে চীন বলেছে, রাশিয়ার জেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য চীনের সেনাবাহিনীর ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেয়া হলে ওয়াশিংটনকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার কর্মকা- এবং মার্কিন রাজনীতিতে রুশ হস্তক্ষেপের জেরে মস্কোর ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা চীন লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ ওয়াশিংটনের। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে জঙ্গীবিমান ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র কেনায় চীনের সামরিক বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় মস্কো বলছে, ওয়াশিংটন আগুন নিয়ে খেলছে। বিবিসি ও ইয়াহু নিউজ। বেজিং সম্প্রতি রুশদের কাছ থেকে ১০টি সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার পর চীনা সামরিক বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের পর থেকে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিলেও বেজিং তাতে কখনই সমর্থন দেয়নি। সে কারণে মস্কোর কাছ থেকে অস্ত্র কেনাও বন্ধ রাখেনি তারা। চীনা সামরিক বাহিনী এমাসের শুরুতে রাশিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের সামরিক মহড়াতেও অংশ নিয়েছে। সামরিক বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং সুয়াং। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ককেও সমস্যাশঙ্কুল করে তুলেছে। ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে এ ভুল শুধরে নেয়া এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্রকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে,’ বলেন সুয়াং। যুক্তরাষ্ট্র চীনের সামরিক বাহিনীর হাতিয়ার উন্নয়ন বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং রাশিয়া থেকে অস্ত্র ও জঙ্গী বিমান কেনার জন্য ওই বিভাগের পরিচালক লিং শেংফুকেও নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত করেছে। চীন তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার খাতিরে অত্যাধুনিক অনেক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করছে। কিন্তু দেশটি এর পাশাপাশি রাশিয়া থেকে আরও উন্নত অস্ত্র কিনতে আগ্রহী। বিশেষ করে আকাশ প্রতিরক্ষা এবং যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে। আর মস্কোও আগের চাইতে বর্তমান সময়ে বেজিংয়ের কাছে এ ধরনের অস্ত্র বিক্রি করতে অনেক বেশি আগ্রহী। ওয়াশিংটন বলছে, মার্কিন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ ও ইউক্রেনে দখলদারিত্বের প্রতিক্রিয়ায় মস্কোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল, এ অস্ত্র ক্রয় সে নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন। বেজিং সম্প্রতি রুশদের কাছ থেকে ১০টি সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনে। রিপাবলিকান প্রার্থীকে জেতাতে ক্রেমলিন ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও হস্তক্ষেপ করেছিল বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস ও বিচার বিভাগের কয়েকটি তদন্তও চলমান। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই দুই বছর আগের নির্বাচনে তার প্রচার শিবিরের সঙ্গে মস্কোর আঁতাতের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তবে মার্কিন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগে তার প্রশাসনও কয়েকজন রুশ ও রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে চীনা আমদানি পণ্যের ওপরও একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় অস্ত্র রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান রসোবরনেক্সপোর্টের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেন করায় এবার ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার খাড়ায় পড়ল চীনের সামরিক বাহিনীর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইক্যুইপমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ইডিডি)। এর ফলে ইডিডি ও এর প্রধান লি শাংফুর যুক্তরাষ্ট্রে যদি কোন সম্পদ থেকে থাকে, তাহলে সেগুলো জব্দ হবে। মার্কিন নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানও এদের সঙ্গে কোন ধরনের লেনদেন করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ইডিডির নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কোথাও থাকার সুযোগ পাবে না। রুশ সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত ৩৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও কাল তালিকাভুক্ত করেছে ওয়াশিংটন।
×