ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুরে এতিমখানার দুই ছাত্রকে পিটিয়ে জখম

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মাদারীপুরে এতিমখানার দুই ছাত্রকে পিটিয়ে জখম

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ২২ সেপ্টেম্বর ॥ বৃহস্পতিবার রাতে একটি চায়ের দোকানে বসে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখার অপরাধে এতিমাখানার ৮ম শ্রেণীর দুই ছাত্র অলিদ ও নাজমুলকে পিটিয়ে জখম করেছে অধ্যক্ষ। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের খৈয়ারভাঙ্গা হাফিজিয়া এতিমখানায়। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে এতিমখানা থেকে বের হয়ে পাশের বাজারে একটি চায়ের দোকানে টিভিতে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ম্যাচের ক্রিকেট খেলা দেখছিল একই এলাকার মৃত লিটন হাওলাদারের ছেলে নাজমুল ও শিরখাড়া ইউনিয়নের কুচিয়ামারা গ্রামের মওলানা মাইনউদ্দিনের ছেলে অলিদ। ১০ মিনিট খেলা দেখে রুমে এলে এতিমখানার অধ্যক্ষ মাওলানা ওবাইদুল্লা-বিন-বাসার তাদের ডেকে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ২০-৩০টি বেত্রাঘাত করে। এতে গুরুতর আহত হয়ে পড়লে রাতে কাউকে জানাতে পারেনি দুই ছাত্র। শুক্রবার সকালে অলিদ ও নাজমুলের পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে এতিমখানার ম্যানেজিং কমিটিসহ স্থানীয়দের জানান এবং এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। ম্যানেজিং কমিটি বিচার করার আশ্বাস দিয়ে ঐদিন রাতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে একটি সিদ্ধান্ত নেয় অধ্যক্ষকে আগামী তিন দিনের মধ্যে এই এতিমখানা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই ঘটনার পর এতিমখানা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছে অধ্যক্ষ। আহত ছাত্র অলিদ জানায়, ‘আমি ১০ মিনিট খেলা দেখে রুমে যাওয়ার পরে হুজুর ডেকে নিয়েই বড় একটা বেত দিয়ে পেটাতে থাকে ক্ষমা চাইলে আরও বেশি পেটাতে থাকে। আমাকে বেত দিয়ে ২০-৩০টি আঘাত করেছে। আমার দুই হাতে, পায়ে, পীঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করার ক্ষত ও বিভিন্ন স্থানে ফুলে গেছে।’ অলিদের বাবা মওলানা মাইনউদ্দিন বলেন, ‘একজন শিক্ষক শাসন করতে পারে, আমিও একটি মাদ্রাসার শিক্ষক, আমার মাদ্রাসা অনেক দূরে হওয়ায় ছেলেকে এখানে রেখে পড়াশোনা করতে দিয়েছি। তাই বলে এভাবে আঘাত করবে, এটা কোনভাবেই ঠিক না। আমরা এর বিচার চাই।’ খৈয়ারভাঙ্গা হাফেজিয়া এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুজাহিরুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে অলিদের পরিবার অধ্যক্ষের বিচার চেয়েছে। আমরা ম্যানেজিং কমিটির সকলকে নিয়ে শুক্রবার রাতে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অধ্যক্ষ এতিমখানার সকল হিসাব বুঝিয়ে তিন দিনের মধ্যে এখান থেকে তাকে বিদায় দেয়া হবে। আর এই সিদ্ধান্ত না মানলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া হবে।’ খৈয়ারভাঙ্গা হাফেজিয়া এতিমখানার অধ্যক্ষ মওলানা ওবাইদুল্লা-বিন-বাসার ফোনে নিজের দোষ শিকার করে বলেন, ‘ওই দুই ছাত্রকে এক আরবি শিক্ষক এশার নামাজ পড়তে নিয়ে গেলে তারা পেছন থেকে পালিয়ে একটি দোকানে গিয়ে টিভি দেখে। তাই তারা আসার পর তাদের শাসন করেছি। তবে শাসনটা একটু বেশি হয়ে গেছে। আমি আমার ভুল স্বীকার করছি।’ মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম ঘটনা হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া ভুক্তভোগীর পরিবার আমাদের কাছে অভিযোগ করলে মামলা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
×