ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাস খাত থেকেই এলএনজির ভর্তুকি মেটানো সম্ভব

নির্বাচনের আগেই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের আগেই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

রশিদ মামুন ॥ গ্যাস খাত থেকে প্রতি বছর সরকার যে অর্থ নিয়ে যায় তা দিয়েই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ভর্তুকি মেটানো সম্ভব। পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সম্প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। তবে নির্বাচনের ঠিক আগেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এতটুকু ভর্তুকি সরকারের পক্ষে দেয়া কোন কঠিন বিষয় ছিল না। তবে এক্ষেত্রে সরকারকেই আমাদের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। সরকার বিতরণ কোম্পানির লোকসান পুষিয়ে দিতে চাইলে এখন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়ত না বলে মনে করেন এই কমিশন সদস্য। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সূত্র জানায়, গ্যাসের উপর ভ্যাট রেখে অন্য সব কর প্রত্যাহারের জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বিদ্যুত জ¦ালানি খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে গ্যাসের উপর থেকে কর প্রত্যাহার সংক্রান্ত এসআরও জারির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গত সপ্তাহের বুধ এবং বৃহস্পতিবার এসআরও জারির অপেক্ষায় ছিল। ওই দুই দিনই কমিশনের আরেক সদস্য জানান, সকালে এসআরও জারি হলে বিকেলেই গ্যাসের বর্ধিত দাম ঘোষণা করা হবে। তবে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এনবিআর এসআরও জারি করেনি। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি জ¦ালানি মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের ভ্যাটিং শেষে রাজস্ব বোর্ডে যাওয়ার কথা। পেট্রোবাংলা বলছে সরকারের কোষাগারে গত পাঁচ অর্থবছরে গ্যাস খাত থেকে সিডি ভ্যাট, ডিএসএল, লভ্যাংশ, আয়কর এবং এসডি ভ্যাট বাবদ ৩৭ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক গত অর্থবছরে ১৩ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এছাড়াও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫২২ কোটি টাকা জমা দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছর (২০১৭-১৮) তে পেট্রোবাংলা ১২ হাজার কোটি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিতে পারবে বলে মনে করছে তারা। ক্রমান্বয়ে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ায় এ খাত থেকে সরকারী কোষাগারে অর্থের যোগানও বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এলএনজি সরবরাহে চলতি অর্থবছরে মোট ভর্তুকির পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। যা মোট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যে অর্থ জমা পড়ছে তার অর্ধেকের কম। সঙ্গত কারণে এলএনজি আসার শুরুতেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করে সরকার গ্যাস খাতের লাভের টাকার একটি অংশ এ খাতে ভর্তুকি দিলে আপাতত দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। জানতে চাইলে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, আমাদের দাবি ছিল এ খাত থেকে এনবিআর যে অর্থ অন্যায়ভাবে নিয়েছে সেই অর্থ সমন্বয় করা। তাহলেও গ্যাসের দাম বাড়ত না। তিনি বলেন, আইওসির গ্যাসের দাম এসডি ভ্যাট মুক্ত ছিল। কিন্তু পেট্রোবাংলা এই অর্থ অন্যায়ভাবে আদায় করে এনবিআরকে দিয়েছে। এই অর্থ গ্রাহকের অর্থ। যার পরিমাণ ৩০ হাজার থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা। যা সমন্বয় করে এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব। এক বছরের আয় ব্যয়ের হিসেব করেই দাম বৃদ্ধি করা হয়। এক্ষেত্রে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন অনুযায়ী জুন ২০১৯ এর পরে গ্যাসের দামের প্রক্ষেপণ দেখে এখনই দাম বৃদ্ধি করতে পারবে না। ফলে দাম বৃদ্ধি না করলে বিপুল পরিমাণ লোকসান হবে তেমনটিও নয়। প্রসঙ্গত গত ১৮ আগস্ট থেকে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। শুরুতে দৈনিক ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট করে এলএনজি সরবরাহ করা হলেও এখন যা ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা ছিল দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হবে। তবে পাইপ লাইন না থাকায় যা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
×