ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিএনজিতে বিদ্যুতের তার

কুমিল্লায় প্রাণ গেল এক পরিবারের তিনজনসহ চারজনের

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কুমিল্লায় প্রাণ গেল এক পরিবারের তিনজনসহ চারজনের

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২২ সেপ্টেম্বর ॥ কুমিল্লায় চলন্ত সিএনজি চালিত অটোরিক্সার ওপর পল্লী বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে একই পরিবারের তিনজনসহ ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার নাঙ্গলকোট-দৌলখাঁড় সড়কের বাগমারা আন্দিপুকুরপাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে নিহতদের গ্রামের বাড়ি নাঙ্গলকোট উপজেলার শংকরপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। এদিকে এ ঘটনায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রশাসন ও কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুত সমিতি-৪ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে নিহত আবু তাহেরের ছেলে আবু জাফর সালেহ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলার শংকরপুর গ্রামের মাওলানা আবু তাহের শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও নাতিকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াতে অংশগ্রহণের জন্য বাড়ি থেকে সিএনজিযোগে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে নাঙ্গলকোট-দৌলখাড় সড়কের বাগমারা আন্দিপুকুরপাড় এলাকায় পৌঁছলে একটি বিদ্যুতের তার ওই সিএনজি অটোরিক্সার ওপর পড়ে। এতে মুহূর্তেই বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলে একই পরিবারের ৩ জন ও সিএনজি চালকসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হয় আরও দুইজন। নিহতরা হচ্ছেন- শংকরপুর গ্রামের মৃত হাবিবুল্লাহর ছেলে মাওলানা আবু তাহের (৬০), তার ছেলে মাওলানা বায়েজীদ (২৯), মেয়ে ফাহিমা আক্তার (১৬) এবং সিএনজি চালক একই গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে সারোয়ার (৩৫)। এ ঘটনায় আহতরা হচ্ছেন- আবু তাহেরের মেয়ে বিবি মরিয়ম (২০) এবং নাতি আল-আমিন। এদিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে গ্রামের বাড়ি শংকরপুরে লাশ নিয়ে গেলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। স্বজনরা তাদের লাশের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান। এ সময় শংকরপুরসহ আশপাশের এলাকার লোকজন নিহতদের বাড়িতে ভিড় জমায়। পরে জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পৃথক দুটি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং পুলিশের তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ বিষয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদু্যুত সমিতি-৪ এর ডিজিএম সহিদ উদ্দিন জানান, ‘আকস্মিকভাবে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্তে এজিএম মাসুদুল আলমকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর জানান, দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্তের জন্য নাঙ্গলকোট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেগম শিরীন আক্তারকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
×