ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম অঘোষিত ফাইনাল আজ

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম অঘোষিত ফাইনাল আজ

রুমেল খান ॥ একটি ‘অলিখিত’ ফাইনাল। যাতে ফেবারিট স্বাগতিক দল। ফলে প্রত্যাশার চাপও বেশি। আবার শঙ্কাও আছেÑ এই প্রত্যাশার চাপই আবার ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায় কি না। আজ রবিবার সেই অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে ভিয়েতনামের। আসরের নাম ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব (‘এফ’ গ্রুপ)’। ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে মহাগুরুত্বপূর্ণ এবং হাইভোল্টেজ এই ম্যাচটি। এই আসরে টানা তিন ম্যাচ জিতে গ্রুপ সেরার লড়াইয়ে সবার ওপরেই আছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ২৫ বার বল পাঠিয়েছে বাংলার বাঘিনীরা। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে একই স্থানে আছে ভিয়েতনামও। কাকতালীয়ভাবে দু’দলের গোল ব্যবধানও এখন সমান, তাছাড়া কোন দলই গোল হজমও করেনি। তাই শেষ ম্যাচটি পরিণত হয়েছে দু’দলের জন্যই ফাইনালে। একইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বাহরাইন লড়বে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে। এবারের আসরের শুরুতেই গ্রুপের একমাত্র শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে ভিয়েতনামকেই মেনে নিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। মাঠের লড়াইয়ে সেটাই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ আমিরাতকে সাত গোল দিলে ভিয়েতনামও অন্য প্রতিপক্ষ লেবাননকে সাত গোল দিয়েছে। এভাবে এখন দুই দলের গোল ব্যবধান ও পয়েন্ট সমান হয়ে গেছে। শুক্রবার গ্রুপপর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিকরা যদি আরব আমিরাতকে আট গোল দিতে পারতো তাহলে আজ কিছুটা নির্ভার হয়ে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে পারতো। কারণ গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকলে এক পয়েন্ট হলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে (সুপার এইটে) নাম লেখানোটা নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু ওই পর্বে খেলতে হলে জয়ের বিকল্প নেই গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে মাঠে নামার আগে কোন প্রকার চাপ নিতে নারাজ কোচ ছোটন, ‘শুক্রবারের ম্যাচে অমিরাতের বিরুদ্ধে ৮ গোল করতে পারলে ভিয়েতনামের চেয়ে ১ গোল নিয়ে গোল তফাতে এগিয়ে থাকলে অবশ্যই আমাদের লাভ হতো। সেক্ষেত্রে শেষ ম্যাচে ওদের সঙ্গে ড্র করলেই আমাদের চলতো। কিন্তু আমিরাতের বিপক্ষে ৮ গোলের টার্গেট নিয়ে খেলে আমরা ৭টির বেশি করতে পারিনি। ফলে ভিয়েতনামের মতোই আমদেরও গোল সমান (২৫টি) হয়ে যায়। তবে এখন আর এ নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। যা হবার হয়ে গিয়েছে। কালকের ম্যাচে আমরা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব। তাই বলে এজন্য আমরা মানসিকভাবে চাপে নেই।’ শনিবার মারিয়াদের রিকভারি অনুশীলন করিয়েছেন ছোটন। তিনি জানান, ‘দলের সবাই সুস্থ ও ফিট আছে। আমরা রবিবার পুরো শক্তি নিয়েই মাঠে নামব।’ গত ম্যাচে যেন অধিনায়ক-সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দা দ্বিতীয়বারের মতো হলুদ কার্ড না পায় সেজন্য তাকে খেলিয়ে কোন ঝুঁকি নেননি ছোটন। তাকে না খেলিয়ে বিশ্রাম দেন। ফলে ম্যাচে ক্যাপ্টেন্সি করে সহ-অধিনায়ক এবং সেন্টার ব্যাক আঁখি খাতুন। আজকের খেলায় মারিয়া খেলার পাশাপাশি আবারও ক্যাপ্টেন্সি করবে, এমনটাই নিশ্চিত করেন ছোটন। জনকণ্ঠকে তিনি আরও জানানÑ ‘ভিয়েতনামের খেলা দেখেছি। ওরা বেশ ভাল দল। বিশেষ করে ওদের গোলরক্ষক, ৮ এবং ১০ নম্বর জার্সিধারী খুব ভাল খেলে। তাদের দিকে আমাদের বিশেষ নজর ও পরিকল্পনা থাকবে।’ ভিয়েতনামীরা দূরপাল্লার শট নিয়ে অভ্যস্ত। লাল-সবুজবাহিনীর গোলরক্ষক রূপনা চাকমা মাঝে মাঝে বল না পেয়ে গোলপোস্ট ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ওরা দূরপাল্লার শট নিয়ে যেন রূপনাকে বিপদে ফেলতে না পারে সেটা নিয়ে বিস্তর কাজ করেছেন ছোটন। সেই সঙ্গে শুনিয়েছেন আস্থার বাণী, ‘রূপনার প্রতি আমার আস্থা আছে।’ সাফ অনুর্ধ-১৫ আসরে ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে একটা বিষয় শিক্ষা নিয়েছেন কোচ ছোটন। তা হলোÑ অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামা যাবে না। ‘ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে ম্যাচে যেন এটা না হয় সেদিকে আমরা সতর্ক থাকব। মোট কথাÑ আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলব।’ ছোটনের ভাষ্য। দলে এ মুহূর্তে আর কোন কার্ড কিংবা ইনজুরি সমস্যা নেই বলেও জানান কিশোরীদের বস। উল্লেখ্য, আজকের বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম ম্যাচটি যদি ড্র হয়, তাহলে সরাসরি টাইব্রেকার অনুষ্ঠিত হবে (কোন অতিরিক্ত সময় খেলা হবে না)। সেক্ষেত্রে বাইলজ অনুযায়ী কিন্তু ম্যাচের অফিসিয়াল ফল ‘ড্র’ই লেখা থাকবে। সেক্ষেত্রে যে দলই হারুক না কেন, তারা প্রত্যেকেই ১ পয়েন্ট করে লাভ করবে। টাইব্রেকারের আশ্রয় নেয়া হবে গ্রুপের শীর্ষ দল নির্ধারণ করার জন্য। বাংলাদেশ দল যদি টাইব্রেকারে হেরেও যায় তাহলেও তাদের পরের পর্বে যাওয়ার সুযোগ বেঁচে থাকবে। সেটা বেস্ট দুই রানার্সআপ দলের একটি হিসেবে। সেক্ষেত্রে অন্য পাঁচ গ্রুপের খেলা শেষ হওয়া এবং গ্রুপগুলোর পয়েন্ট টেবিলের চূড়ান্ত অবস্থার ওপর নির্ভর করতে হবে। উল্লেখ্য, এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে মোট ছয়টি গ্রুপ আছে। প্রতি গ্রুপে ৫টি করে মোট ৩০ দেশ খেলবে। ছয় গ্রুপের ছয় চ্যাম্পিয়ন এবং সেরা দুই রানার্সআপ দল মোট আটটি দল খেলবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। এই আট দল থেকে সেরা চার দল খেলবে তৃতীয় এবং চূড়ান্ত পর্বে। এইপর্বে যোগ্যতা অর্জন করা চার দলের সঙ্গে সরাসরি খেলবে আগেই যোগ্যতা অর্জন করা আরও চার দেশÑ স্বাগতিক থাইল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। এই আসরে (এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব, সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল) নিজেদের মাঠে ২০১৬ সালেও বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তারপর এই আসরের মূলপর্বে (২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত) অংশ নেয়। মূলপর্বে অংশ নিয়েছিল আট দল। বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ আসরে চাইনিজ তাইপে, ইরান, আরব আমিরাত, কিরগিজস্তান ও সিঙ্গাপুরকে হারিয়ে নিজেদের মাটিতে অপরাজিত শিরোপা জিতে মূলপর্বে উন্নীত হয়েছিল বাংলার বাঘিনীরা। দুই বছর পর আবারও নিজভূমে একই আসর। এবারও কি ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে তাদের? পয়েন্ট টেবিল (‘এফ’ গ্রুপ) দেশ ম্যাচ জয় ড্র হার গোল পয়েন্ট বাংলাদেশ ৩ ৩ ০ ০ ২৫/০ ৯ ভিয়েতনাম ৩ ৩ ০ ০ ২৫/০ ৯ লেবানন ৪ ২ ০ ২ ১৪/১৮ ৬ আমিরাত ৩ ০ ০ ৩ ৩/১৭ ০ বাহরাইন ৩ ০ ০ ৩ ০/৩২ ০
×