ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ আফগানিস্তানের সামনে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আজ আফগানিস্তানের সামনে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচটি জেতায় কি সাধুবাদই না পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। এরপর সেই সাধুবাদ আর টিকিয়ে রাখতে পারেননি তারা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ১৩৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায়। ‘সুপারফোরে’ নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছেও পাত্তা পায়নি। ৭ উইকেটে হেরেছে। লঙ্কানদের বিপক্ষে জয়ে যেখানে আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। সেখানে টানা দুই হারে আত্মবিশ্বাস ও মানসিকতায় চিড় ধরেছে। বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ জেতায় যেখানে ফুরফুরে মেজাজেই আফগানদের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে নামা গেছে। আজ আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে ৫টায় সেই আফগানিস্তানের বিপক্ষেই ‘সুপারফোরে’র ম্যাচে খেলতে নামছে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দল। শুধু কি বাংলাদেশ দল বিধ্বস্তই, টালমাটালওতো হয়ে গেছে। এশিয়া কাপে ওপেনাররা ব্যর্থ হয়ে চলেছেন। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ না হতেই দেশ থেকে দুবাইয়ে দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে। এ দুই ব্যাটসম্যান যে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন তা আবার খোদ বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজেও জানেন না। মাশরাফিকে না জানিয়েই টিম ম্যানেজমেন্ট এমন সিদ্ধান্ত নেয়! তাতেই বোঝা যাচ্ছে হারতে থাকা বাংলাদেশ দলে একটা ‘গোমট’ পরিবেশও বিরাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। এই অবস্থায় কী আফগানদের হারানো সম্ভব? আফগানিস্তান যে কতটা শক্তিশালী দল তা তো প্রতিটা ম্যাচেই প্রমাণ দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কাকে গ্রুপপর্বে উড়িয়ে দেয়ার পর বাংলাদেশকেও পাত্তা দেয়নি। পাকিস্তানকে তো হারানোর মুখেই ফেলে দিয়েছিল। বেঁচে গেছে পাকিস্তান। তা নাহলে টানা তিন জয় হয়ে যেত আফগানিস্তানের। দলটির বোলিং লাইন যে কতটা শক্তিশালী তা তো সব দলই বুঝে গেছে। স্পিনার রশিদ খান, মুজিব জাদরান, মোহাম্মদ নবীর সঙ্গে পেসার গুলবাদিন নাইবতো প্রতিটি দলের ব্যাটসম্যানদেরই ভোগাচ্ছেন। জয়ও আরামেই পাচ্ছে আফগানিস্তান। বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংটাওতো অসাধারণ হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান দলের। মোহাম্মদ শাহজাদ, ইহসানুল্লাহ, রহমত শাহ, হাসমতুল্লাহ শহিদি, আসগর স্ট্যানিকজাই, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, মোহাম্মদ নবী, গুলবাদিন নাইব ও রশিদ খানতো আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এক থেকে নয় নম্বর পজিশন পর্যন্তই ব্যাটসম্যান! আফগানিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ দলও কম নয়। কিন্তু এক তামিম ইকবাল ইনজুরিতে ছিটকে পড়াতে যেন সব ওলট-পালট হয়ে গেছে। লিটন কুমার দাস ব্যর্থ হচ্ছেন। তামিমের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তও কিছুই করতে পারছেন না। সাকিব আল হাসান প্রতিপক্ষে পরিকল্পনা বুঝতে না পেরে আউট হচ্ছেন। মুশফিক কী আর প্রতিদিন সেঞ্চুরি করবেন! মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। মোহাম্মদ মিঠুন প্রথম ম্যাচের পর থেকে নিশ্চুপ। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত যে এখনও কেন একাদশে সুযোগ পেয়েই চলেছেন সেই প্রশ্ন উঠছে। মেহেদী হাসান মিরাজ যে ঝলকানি দেখাচ্ছেন তা জেতার জন্য যথেষ্ট নয়। তার সঙ্গে মাশরাফির ব্যাটে খানিক হাসছে। কিন্তু শুরু ও মাঝের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় এমনই অবস্থা হয়ে যাচ্ছে, নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ তো কিছু হচ্ছে না। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা এতটাই চোখে ধরা পড়ছে যে বোলারদের বিশেষ কারুকাজ করার যেন সুযোগই হচ্ছে না। কাহিল অবস্থাই হয়ে গেছে বাংলাদেশ দলের। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ একটাই। আজ আফগানিস্তানকে যে করে হোক হারাতে হবে। কিন্তু কাজটা কী এতটাই সহজ? খুবই কঠিন। আফগানিস্তান যে ধারাবাহিকতায় আছে, সেই ধারাবাহিকতা আগে ভাঙ্গতে হবে। তা না হলেই বাংলাদেশের সামনে আবারও বিপদ ধরা দেবে। ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপে টানা দুইবার আফগানিস্তানের কাছে হারল বাংলাদেশ। যদি আজও সেইরকম কিছু ঘটে তাহলে ২০১৪ সাল, এবার গ্রুপপর্বের পর ‘সুপারফোরে’ও হার হবে। ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপে টানা তিন ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হার হবে বাংলাদেশের। আফগানিস্তান বোলারদের কথাই বিশেষ করে বলেছেন মাশরাফি। এখনও টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার সুযোগের কথাও জানিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে হারের পর মাশরাফি বলেছেন, ‘আমরা টুর্নামেন্ট থেকে এখনও ছিটকে যাইনি। ভাল করে ঘুরে দাঁড়ানোর এখনও সুযোগ আছে। একটা দিন সময় আছে পরের ম্যাচের আগে। নিজেদের একটু গুছিয়ে নিয়ে পরের ম্যাচে নামতে হবে।’ সঙ্গে মাশরাফি যোগ করেন, ‘আমার কাছে মনে হয় এখনও সম্ভব (ফাইনাল)। আমার কাছে মনে হয়, এত হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অবশ্যই দুটি ম্যাচে হার হতাশার। এটা কেউই চায়নি। বিশেষ করে এই ম্যাচের (ভারত ম্যাচের) ফলাফলটা একটু বেশি হতাশার। কারণ গত ম্যাচের তুলনায় আজকের (শুক্রবারের) ম্যাচটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু আজকেও (শুক্রবার) আমাদের ব্যাটিংয়ে ধস নেমেছে। অবশ্যই হতাশার। তবে আমাদের এখনও টুর্নামেন্টে ফেরার সুযোগ আছে। একটা ভাল দিনেই সব বদলে যেতে পারে। আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে যদি আমরা জিততে পারি তাহলে ৫০-৫০ চান্স চলে আসবে। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে জিতলে ভাল সুযোগ থাকবে (ফাইনালের)।’ এখন আফগানিস্তানের সামনে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ কী পারবে আজ জয় তুলে নিতে?
×