ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবইয়াদ আহনাফ আদ্রিক

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের লটকন

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের লটকন

ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজার দখল করে নিয়েছে নরসিংদীর শিবপুরের লটকন। কৃষি বিভাগের তথ্যে জানা গেছে- এ অঞ্চলের লটকন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ২০-২৫টি দেশে রফতানি করা হচ্ছে। এতে আয় হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। জেলার ৬২৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শিবপুর উপজেলায়ই চাষ হয়েছে ৪২৫ হেক্টরে। প্রতি মৌসুমে প্রায় ৮ হাজার টন লটকন উৎপাদন হয়, যার আনুমানিক দাম ২৪-২৫ কোটি টাকা। জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রামে লটকন চাষ হয়। নরসিংদীর লটকন : নরসিংদীর মানুষের কাছে লটকন অন্যতম অর্থকরী ফসল। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুন লাভ বেশি হওয়ায় লটকন চাষে ঝুঁকে পড়ছে কৃষকরা। নরসিংদীর শিবপুরে লটকন চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক চাষী। জয়নগর, বঘাব ও যোশর ইউনিয়নসহ সব কয়টি ইউনিয়নে প্রায় ৪৭ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় মিলে দুই হাজার ৯৫৫টি লটকন বাগান রয়েছে। এদের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে উপজেলার মানুষজনের মধ্যে লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে। প্রতিবছরই বাড়ছে বাগান। ফলন হচ্ছে প্রচুর। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন শত শত মণ লটকন সরবরাহ হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। এখানকার লটকন মধ্য প্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশেও রফতানি হচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। এ থেকে ২৫ হাজার টন লটকন উৎপাদন হবে, যার মূল্য প্রায় একশ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক হাজার টন লটকন রফতানি হবে দেশের বাইরে। উঁচু আর লালমাটির টিলা লটকন চাষের জন্য উপযোগী ভূমি। পাশাপাশি লটকনের বাজারজাত নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লটকন কাঁচা থাকা অবস্থায় বাগান থেকে কিনে নেয়। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান এবং চাহিদা বৃদ্ধির কারণে নরসিংদীর চাষীদের লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে। নরসিংদীতে লটকন চাষে বিপ্লব এনেছে লটকন চাষীরা। যার ফলে লটকন মৌসুমে এ অঞ্চলে নেমে আসে নবান্নের উৎসবের আদলে লটকোৎসব। এখানে নবান্ন উৎসবের মতোই লটকন সংগ্রহের দিন, সন্ধ্যায় বাড়িতে খাবারের আয়োজন হয়, খোশগল্প হয়, গান হয়। বাড়িতে বাড়িতে নতুন লটকনের গন্ধে মৌ মৌ করে। জয়নগরের : কিশোরগঞ্জের জয়নগর গ্রামে লটকন চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক চাষী। এ উপজেলায় দিন দিন লটকনের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জয়নগর, বাঘাব ও যোশর ইউনিয়নসহ সব কয়টি ইউনিয়নে প্রায় ৪৭৫ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় মিলে প্রায় দুই হাজার ৯৫৫টি লটকন বাগান রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন শত শত মণ লটকন সরবরাহ করা হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। এখানকার লটকন মধ্য প্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে। গৌরীপুরের লটকন : কৃষির ওপর নির্ভরশীল বৃহৎ জনগোষ্ঠীর এলাকা ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবারের বিশাল অর্থভাগ্যে খুলেছে মৌসুমী ফল লটকন বিক্রি করে। কোন ধরনের পরিচর্যা ছাড়াই প্রকৃতিগতভাবে জন্ম নেয়া পুষ্টিগুণে ভরপুর দেশীয় লটকন ফল (বুবি) বাগানের মালিকরা কয়েক দশক ধরে প্রতি মৌসুমে শুধু লটকন ফল বিক্রি করে ঘরে তুলছেন লাখ লাখ টাকা। উপজেলার বিচ্ছিন্নভাবে ১০টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের ৮০ হেক্টর জঙ্গলাকীর্ণ জমিতে ছোট-বড় ২৫০ লটকন ফলের বাগান রয়েছে। লটকন চাষ কয়েক দশক ধরে উপজেলায় কৃষিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরনের আর্থিক চাহিদার যোগান দেয়াসহ অনেকের সংসারে এনে দিয়েছে সচ্ছলতা। দেশের লটকন ইংল্যান্ড, কাতার, সৌদি আরবসহ নানা দেশে রফতানি হচ্ছে। কৃষি বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে এবং বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের সহায়তায় প্রতিটি জেলাতেই লটকনের বাণিজ্যিক চাষাবাদ করা যেতে পারে।
×