ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেয়ারা চাষের সম্ভাবনা...

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পেয়ারা চাষের সম্ভাবনা...

বাংলাদেশের কম-বেশি সব জায়গাতেই পেয়ারা চাষ হলেও বাণিজ্যিকভাবে বরিশাল, ফিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপকভাবে পেয়ারার চাষ হয়। আশার কথা হচ্ছে এখন রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহরসহ দেশের জেলা উপজেলা পর্যায়েও শখের ছাদ বাগানে পেয়ারা চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তাই দেশে পেয়ারা চাষ অনেক লাভজনক। ফল উৎপাদনে অগ্রগামী বাংলাদেশ পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে ঠাঁই করে নিয়েছে। জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে কাজী পেয়ারা চাষের মধ্য দিয়ে দেশে উন্নত জাতের পেয়ারা চাষ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত ছয়টি উন্নত জাতের পেয়ারা এব বেসরকারীভাবে আমদানি হওয়া থাই পেয়ারার চাষে বিপ্লব ঘটে। ফলে দেশজুড়ে বিভিন্ন জাতের দেশী পেয়ারা চাষের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর উদ্ভাবিত বিভিন্ন উন্নত জাতের পেয়ারার চাষও হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রথম ২০০৬-০৭ সালে থাইল্যান্ড থেকে উন্নত জাতের পেয়ারার বীজ এনে ২০১০ সালে ব্যাপকভাবে চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যায়ে প্রায় ৪০ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পেয়ারা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি থাকলেও বাংলাদেশে পেয়ারার জনপ্রিয় জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাজী পেয়ারা, বারি পেয়ারা-২, বারি পেয়ারা-৩, বাউ পেয়ারা-১ (মিষ্টি), বাউ পেয়ারা-২ (রাংগা), বাউ পেয়ারা-৩ (চৌধুরী), বাউ পেয়ারা-৪ (আপেল), ইপসা পেয়ারা-১, ইপসা পেয়ারা-২, কাঞ্চন নগর, মুকুন্দপুরী, থাই পেয়ারা, পলি পেয়ারা, আঙ্গুর পেয়ারা প্রভৃতি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কমবেশি ২৭ হাজার ৫৮১ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। বছরে কমবেশি ৩ লাখ ২৫ টন পেয়ারা উৎপাদন হয়। সে হিসেবে দেশে পেয়ারার বাজার ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকায় উঠানামা করে। মুক্তিযুদ্ধে পেয়ারা বাগান আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বরিশাল অঞ্চলের স্বরূপকাঠী-ঝালকাঠী ও বানারীপাড়ার ৩৬ গ্রামের পেয়ারা বাগানের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে এসব পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধারা ঘাঁটি গড়ে তোলে ও বহু অপারেশন চালায়। এর মধ্যে প্রথমেই নাম করতে হয় কুড়িয়ানার। অন্যান্য ঘাঁটিগুলো হলো মাদ্রা, আতা, জিনুহার, ইদিলকাঠী, অশ্বত্থকাঠী, জামুয়া, ব্রাহ্মণকাঠী, বাউকাঠী, ভিমরুলি, জিন্দাকাঠীসহ বহু গ্রাম রয়েছে। ১৯৭১ সালে পেয়ারা বাগানের এই ৩৬ গ্রামে যাতায়াত বলতে ছিল একমাত্র নৌকা। দুর্গম যাতায়াতের কারণে এখানে বসে নিরাপদে থেকে অপারেশন চালানো সহজ ছিল। বিচিমুক্ত পেয়ারা উদ্ভাবন বিচিমুক্ত পেয়ারা ‘বারি পেয়ারা-৪’ জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক। এই পেয়ারা খেতে একটু কচকচে লাগে বা শক্ত থাকে। ২০০৫ সাল থেকে ১০ বছর গবেষণায় এই সফলতা আসে। গাজীপুর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মদন গোপাল সাহা বলেন, ‘বারি পেয়ারা-৪’ সম্পূর্ণ বিচিমুক্ত হওয়ায় এটি এরই মধ্যে সারা ফেলেছে। এই পেয়ারার প্রচার হচ্ছে। এই পেয়ারা ফল সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে সংগ্রহ উপযোগী হয়। সেপ্টেম্বর মাসে যখন বাংলাদেশে অন্যান্য ফল খুব কম পাওয়া যায় তখন ফল আহরণ শুরু হয়। জাতটি পাহাড়ী অঞ্চলসহ ব্যাপক বিস্তৃৃত আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী। পেয়ারা থেকে জেলি পেয়ারার জেলি পৃথিবী বিখ্যাত। বিদেশে বরিশালের উৎপাদিত পেয়ারা মূলত জেলি তৈরির কাঁচামাল হিসেবে রফতানি হয়। বাংলাদেশে পেয়ারার জেলি উৎপাদন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এগ্রোবেজড শিল্পে সরকারের মনোযোগ প্রয়োজন। পেয়ারা পাতা রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা পেয়ারার পাতা দিয়ে এক প্রকার চা তৈরি করছে জাপান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেয়ারা পাতার চা ক্রমশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। জাপান, কোরিয়া, ইংল্যান্ড , যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, ইতালি, ফ্রান্স ও গ্রীসে পেয়ারা পাতার চায়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মানব দেহের জন্য বিশেষত ডায়াবেটিক রোগীদের এই চা খুবই উপযোগী। অর্গানিক পদ্ধতিতে যে সব পেয়ারা গাছ চাষ হয় সে পাতাই চা তৈরির জন্য বিবেচিত হয়। এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভিত্তিক পেয়ারা চাষ হলেও শুধু পেয়ারাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সেসব এলাকায় পেয়ারা পাতার চা তৈরির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তুলতে পারলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পেয়ারা পাতার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হবে। বাংলাদেশের খবরের পিরোজপুর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের অন্যতম পেয়ারা অঞ্চল হলেও আজ অবধি এসব এলাকায় সরকারীভাবে কোন হিমাগার নির্মাণ করা হয়নি। নেই কোন জেলি কারখানাও। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, হিমাগার ও জেলি কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া অতি আবশ্যক। প্রতিবছর হিমাগারের অভাবে এসব এলাকার কয়েক কোটি টাকার পেয়ারা নষ্ট হয়। ভিমরুলি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পেয়ারার মোকাম ভিমরুলি থেকে নৌপথে খুলনা, ফেনী, ঢাকা, সিলেট, পটুয়াখালী, ভোলা, মাদারীপুর, নাটোর, বরিশালে হাজার হাজার মণ পেয়ারা যাচ্ছে। কিন্তু সড়কপথে যোগাযোগ থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে এসব জেলায় পেয়ারা নেয়ার জন্য পাইকাররা চাষীদের আরও বেশি দাম দিয়ে পেয়ারা কিনত। অর্থনীতি ডেস্ক
×