ভারতের হায়দরাবাদের ঐতিহাসিক মক্কা মসজিদ বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ‘হিন্দু’ অভিযুক্তদের মুক্তি দেয়ার পাঁচ মাস পর বিশেষ আদালতের বিচারক রবীন্দ্র রেড্ডি ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন। রেড্ডি অবশ্য ইতোমধ্যেই স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছেন। বিজেপির দফতরে গিয়ে সিনিয়র নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বন্ডারু দত্তাত্রেয়র সঙ্গে তিনি দেখাও করেছেন। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরে হায়দরাবাদের রাজনৈতিক ও আইনজীবী মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিবিসি জানায়, প্রাক্তন বিচারক রবীন্দ্র রেড্ডি আনুষ্ঠানিকভাবেই বিজেপিতে যোগ দিতে পার্টি দফতরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দলের নেতারা তাকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন। রবীন্দ্র রেড্ডি হায়দরাবাদ শহরে সন্ত্রাস-তদন্তের জন্য তৈরি জাতীয় তদন্ত এজেন্সি ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক ছিলেন। গত ১৯ এপ্রিল মক্কা মসজিদ বোমা মামলায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে তিনি বেকসুর খালাসের আদেশ দেন। ওই পাঁচজনই কোন না কোনভাবে বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত। ২০০৭ সালের ১৮ মে জুমার নামাজের সময় ৪শ’ বছরের পুরনো মক্কা মসজিদে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে এক শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই হামলায় নয় জনের মৃত্যু ও ৫৮ জন আহত হন। ঘটনার তদন্তভার নিয়েছিল সিবিআই। লোকেশ শর্মা আর দেবেন্দ্র গুপ্তাসহ আরএসএস এবং কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিচারক রেড্ডি তাদের সকলকেই নিরপরাধ বলে খালাস দেন। আর রায় ঘোষণার ঠিক পরেই তিনি পদত্যাগ করেন। হায়দরাবাদ হাইকোর্ট অবশ্য তার পদত্যাগপত্র খারিজ করে দেয়। তারপরে তিনি ফের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি স্বেচ্ছা অবসর নেন। তখন থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় যে মক্কা মসজিদ বোমা মামলার রায় নিরপেক্ষ হয়েছে কি না। একদিকে মুসলিম সংগঠন যেমন কড়া সমালোচনা করে তেমনই বোমা হামলায় নিহতদের পরিবার পরিজনও বলেন যে তারা ন্যায় বিচার পায়নি। বিজেপি অবশ্য ওই রায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছিল যে হিন্দু সংগঠনগুলোর কয়েক সদস্যকে ফাঁসানো হয়েছিল। এখন ওই অবসরপ্রাপ্ত বিচারক রবীন্দ্র রেড্ডি অবশ্য বলছেন যে, তার বিজেপিতে যোগ দেয়া আর মক্কা মসজিদ মামলায় দেয়া রায়, এই দুটোর মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। ‘আদালতে বসে যা রায় দিয়েছি, তার সঙ্গে আমার রাজনীতিতে যোগ দেয়ার কোন সম্পর্ক নেই। আমি যখন বিচারক ছিলাম, তখন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবেই কাজ করেছি। আর এখন দেশের জন্য কাজ করতে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছি। তিনি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নিজ জেলা করিমনগর থেকে লড়তে চান। রেড্ডি জানিয়েছেন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর সঙ্গে তিনি হায়দরাবাদে দেখা করেছেন। আগে থেকেই বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বন্ডারু দত্তাত্রেয়র সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। সিভিল লিবার্টিজ মনিটরিং কমিটি দাবি করেছে রবীন্দ্র রেড্ডির দেয়া মক্কা মসজিদ মামলার পুনরায় শুনানি করা হোক।