ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিশপ্ত ভবদহে ধানের বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অভিশপ্ত ভবদহে ধানের  বাম্পার ফলন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ অভয়নগর উপজেলার অভিশপ্ত ভবদহ পাড়ের মানুষের ম্লান মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। মাঠভরা ধানে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে কৃষক। জলাবদ্ধতার থেকে মুক্তি পাওয়ায় ৭২৫ হেক্টর জমিতে বেড়েছে চাষাবাদ। চলতি বছরের শেষে বোরা ধান রোপণ করে তিন ফসল ঘরে তোলার সম্ভাবনা জেগে উঠেছে কৃষক পরিবারে। নদী ও খাল খননসহ টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প চালু হলে ঘুচবে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমস্যা। এই প্রথম জলাবদ্ধ ভবদহবাসীর মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এক সময়ের জলাবদ্ধ জমিতে যারা মাছ শিকার ও শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করেছেন তারা এখন ধান ফলাতে শুরু করেছেন। বর্ষা মৌসুমের আগেই সরকারীভাবে ভবদহের ২১ ও ৯ ভেল্ট স্লুইস গেটসহ টেকা, শ্রী-হরী, মুক্তেশ্বরী ও ভৈরব নদী খননসহ আমডাঙ্গা খালের প্রশস্ততা বৃদ্ধির ফলে চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের পর উফশী আউশ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাকা ধানও কাটতে শুরু করেছেন কৃষক। ২০১৭ সালে ধান উৎপাদনের দ্বিগুণ ফলন হয়েছে এবার। ৭২৫ হেক্টর জমিতে বেড়েছে ফলন। এক সময়ের জলাবদ্ধ জমিতে সোনার রঙে ফলা পাকা ধানের গন্ধ ছাড়াতে শুরু করেছে। ভবদহ এলাকার কৃষক উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের আসাদ মোল্যা বলেন, ‘এই প্রথম আমার জমিতে দুটি ফসল হইছে। সামনে আরেকডা ফসল করবো।’ তিনি সরকারে কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে উফশী আউশ ধান বীজ ও সার প্রদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘পানির যন্ত্রণার থেকে এইবার আমরা মুক্তি পাইছি।’ বারান্দি গ্রামের কৃষক মিন্টু বিশ্বাস বলেন, ‘আগে মাছ শিকার করে সংসার চলতো। এইবার আমন ও আউশ ধান ঘরে তুলছি। ফকিরহাটের আনোয়ার হোসেন ও সুন্দলী এলাকার কৃষক দীপায়ন বিশ্বাস বলেন, ‘নদী ও খাল খননের কারণে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাইছি। তয় এহেবারে জলাবদ্ধতা বন্ধ করতি হলে টিআরএম প্রকল্প চালু করতি হবে। তাইলে আমরা শান্তিতে থাকতি পারবো। এহন মাছ আর শাপলা তুলে সংসার চালাতি হবে না।’ ভবদহ এলাকার পায়রা, বারান্দি, ফকিরহাট ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, তার ব্লকে ৭০ চাষির ১২০ হেক্টর জমিতে উফশী আউশ ব্রি ধান-২৮ রোপণ করে ৪ দশমিক ২ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছে। এক সময়ের মাঠ ভরা পানিতে এখন ধানের বাম্পার ফলন, কথাটি বলে লুৎফর রহমানের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ গোলাম ছামাদানী কৃষিতে সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ভবদহবাসীর জন্য পরিকল্পনা ছিল আমন ও উফশী আউশ ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষককে আকৃষ্ট করা। তাতে আমরা সফল হয়েছি। তবে এ সফলতার পিছনে কৃষি মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবদান রয়েছে। ভবদহের পানিবন্দী খাল, বিল ও মাঠ থেকে পানি অপসারণের ব্যবস্থা করায় এ সফলতা এসেছে। এই প্রথম এ অঞ্চলের মানুষ এক মৌসুমে তিনটি ফসল ঘরে তুলতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উপজেলা ২০১৭ সালে ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন করা হয়েছিল। চলতি বছর ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনের ফলে অতিরিক্ত ৭২৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন উফশী আউশ ধানের বাম্পার ফলন ঘরে উঠাতে শুরু করেছে কৃষক। ভবদহের পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বিষ্ণুপদ দত্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভবদহের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। চলতি বছরের শুরুতে ভবদহ এলাকার নদী, খাল ও বিলের জল অপসারণে দীর্ঘমেয়াদী খনন কাজ হয়েছিল বলেই জলাবদ্ধ জমিতে এবার ধান উৎপন্ন হয়েছে। অচিরেই টিআরএম প্রকল্প চালু হলে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হবে। টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্পের জট খুলেছে দাবি করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় টিআরএম প্রকল্প চালুসহ ভবদহের সার্বিক উন্নয়নে ৪৪৮ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে গত ৫ আগস্ট একটি প্রকল্পের অনুমোদন করেছে। বিষয়টি যশোর পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য, যশোর ও খুলনা জেলার বিল কপালিয়া, বিল ভায়না, বিল খুকশিয়া, বিল বোকড়সহ ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র প্রবাহ পথ ভবদহ স্লুইস গেট।
×