ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চয়পত্রের সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সঞ্চয়পত্রের সঙ্কট

বাজেট ঘোষণার আগে আমরা আশা প্রকাশ করেছিলাম সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ কমানো হবে না। কেননা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ানো কোন কাজের কথা নয়। সরকার আশাহত করেনি জনসাধারণকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমাবে না সরকার। তার ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ঠেকেছে দুই লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকায়। বিপুল অঙ্কের এ অর্থের বিপরীতে সরকারকে গড়ে ১১ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। অথচ ব্যাংক থেকে এখন ৪ থেকে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো অনেক দিন ধরে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করার দাবি জানিয়ে আসছিল। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। যদিও জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভিন্নতর এক হতাশার চিত্র। ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান জেলা শহরে বিভিন্ন সরকারী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যংকের শাখা অফিসগুলোয় সঞ্চয়পত্র ছাড়া হচ্ছে সীমিত আকারে। নিয়মানুযায়ী একজন নারী বা কোন প্রবীণ নাগরিক (৬৫ উর্ধ) সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। কিন্তু সঙ্কট দেখিয়ে সর্র্র্বোচ্চ এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা বঞ্চিত হচ্ছেন, ক্ষেত্রবিশেষে বিরক্ত ও বিব্রতও হচ্ছেন। এটি অনাকাক্সিক্ষত। কয়েক বছর আগে ২০১৫ সালে সাধারণ মানুষের বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি পিটিয়েছিল পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের সুদহার হ্রাসের বিষয়টি। এ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল ‘সুদের হার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। এটা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। সরকারের ভবিষ্যত ঋণের বোঝাও বেড়ে যাবে। সে কারণেই সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ কিন্তু সঞ্চয়পত্র হলো স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরতার জায়গা। এই আমানত তাকে নিরাপত্তা দেয়। মানুষ রাষ্ট্র তথা সরকারের কাছ থেকেই এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। এই একটি খাতে সাধারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করে। শেয়ারবাজারে ধস নামার বাস্তবতায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ প্রধানত সঞ্চয়পত্র খাতের মাধ্যমেই বিনিয়োগ করে থাকে। অবসরভোগী চাকরিজীবী, প্রবাসী ও সমাজের বিশেষ জনগোষ্ঠীর ভেতর সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের প্রবণতা বেশি। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তার সারা জীবনের সঞ্চয়ের বড় অংশ এই খাতেই ঝুঁকিহীনভাবে বিনিয়োগ করে থাকে বেশি লাভের আশায়। আমরা বলেছিলাম খেলাপি ঋণ আদায়ের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণই যুক্তিযুক্ত। আমরা আশা করব ব্যাংকগুলোয় সঞ্চয়পত্র কিনতে আসা সাধারণ মানুষ আশাহত হয়ে ফিরে যাবেন না। চাহিদামতো তারা নিয়ম অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র কিনতে সমর্থ হবেন। এটি মানুষের নাগরিক অধিকার।
×