ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত বিনিময়

আজ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 আজ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুতখাতের বড় ইস্যুগুলো ঝুলে থাকার মধ্যেই আজ শুরু হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। এবার ঢাকা থেকে সরিয়ে বৈঠকের ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে সিলেটে। সাধারণত ঢাকা এবং দিল্লীতেই এর আগের বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ভারত বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং আগামীকাল স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে যোগ দিতে সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতের বিদ্যুত সচিব অজয় কুমার বালার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিলেট গেছেন। এছাড়াও ভারত থেকে প্রতিনিধি দলের আরও কয়েকজন সদস্যের ঢাকা হয়ে সিলেট যাওয়ার কথা রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দুটি স্পর্শকাতর বিষয় তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুত করিডোর। ভারত অরুণাচল প্রদেশ থেকে জল বিদ্যুত উৎপাদন করে বিহার নিতে চায়। এজন্য বাংলাদেশের কাছে তারা সঞ্চালন লাইন তৈরি করার অনুমতি চেয়েছে। উভয় দেশ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু গোল বেঁধেছে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ব্যয় নিয়ে। ভারত এর আগে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যার যার অংশে সেই সেই দেশ বিদ্যুত লাইন নির্মাণ করবে এবং লাইনের ব্যয় নির্বাহ করবে এমন প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করে বলে ভারত তার এক এলাকায় উৎপাদিত বিদ্যুত এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে নিতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশ কেন এই গ্রিড লাইনের খরচ দেবে। যেহেতু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে গ্রিড লাইন নেয়া হচ্ছে সঙ্গত কারণে বাংলাদেশ এখান থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত চাইছে। দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও ঐকমত্য ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। এবার বৈঠকেও বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সহযোগিতা কমিটির এক সদস্য রবিবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান। তিনি বলেন, কেবলমাত্র ভারতের সহযোগিতা না পাওয়ায় বাংলাদেশ অন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিদ্যুত সহযোগিতায় ফলপ্রসূ কোন কিছু করতে পারছে না। এর আগেও বাংলাদেশ দুই দেশের বৈঠকগুলোতে এসব বিষয় আলোচনা করলে ভারত বিষয়গুলো পাশকাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। বিষয়গুলো এককভাবে ভারতের বিদ্যুত মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে না বলে তারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এবার বৈঠকে অন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিদ্যুতখাতে সহযোগিতা সৃষ্টিতে ভারতের কাছে সুযোগ চাওয়া হবে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, ভারত প্রতিবেশী দেশ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত তাদের ভূখ- ব্যবহার করে নেয়ার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করে একটি নীতি করেছে। ওই নীতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দুই দেশ বিদ্যুত বিনিময় করতে চাইলে সেই কেন্দ্রে ভারতের সরকারী বেসরকারী কোম্পানির অংশীদারিত্ব থাকতে হবে। একইভাবে ভারতের কোম্পানিকে সঞ্চালনের দায়িত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ নেপালের জিএমআর থেকে যে বিদ্যুত কিনছে তা ভারতের কোম্পানি বিদ্যুত ভ্যাপার নিগাম (এনভিভিএন) এর মাধ্যমে কিনছে। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এ জন্য ভুটানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হলেও সই করা হচ্ছে না। সম্প্রতি নেপালের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তাতেও ভারতের অংশগ্রহণ প্রয়োজন হবে। আজ এবং আগামীকালের বৈঠকে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হবে। বিদ্যুত বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় ভারত থেকে আর বিদ্যুত ক্রয় করতে চায় না। আমাদের দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু শীত এবং গ্রীষ্মের মধ্যে আমাদের চাহিদার ব্যাপক অসামাঞ্জস্য রয়েছে। গরমে আমাদের চাহিদা বেড়ে যায় ১২ হাজার মেগাওয়াটে অন্যদিকে শীতে চাহিদা ৭ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুত আনলে বছরব্যাপী বিদ্যুত নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। সেক্ষেত্রে শীতের সময় দেশী বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রেখে ভারতের বিদ্যুত নিতে হবে। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশ শর্টটার্ম চুক্তিতে বিদ্যুত ক্রয়ের আগ্রহী।
×