ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর গুজব, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর গুজব, পুলিশের  সঙ্গে সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে রবিবার এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্ম বিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। আন্দোলনরত কয়েক শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধ করেছে। উত্তেজিত শ্রমিকরা বেশ কিছু যানবাহন, কারখানা ও দোকানপাটসহ ব্যাপক ভাংচুর করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে অন্তত ২৫ কিলোমিটারব্যাপী যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্তত অর্ধশত কারখানা এদিন ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ডেগেরচালা এলাকার নিট এ্যান্ড নিটেক্স লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঈদের আগে আগস্ট মাসের পাওনা বেতন ভাতার অর্ধেক পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ। ঈদের ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়ে শ্রমিকরা তাদের অবশিষ্ট পাওনা পরিশোধের জন্য গত কয়েকদিন ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার আশ্বাস দিয়ে দিন তারিখ নির্ধারণ করলেও তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এদিনও তা পরিশোধ করেনি কর্র্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে শনিবার কারখানায় কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। কর্তৃপক্ষ এতে সায় না দেয়ায় শ্রমিকরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বারবার আশ্বাস দিয়েও বেতন ভাতা পরিশোধ না করায় একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা শনিবার রাত ১০টার দিকে কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনার পর শ্রমিকদের বেতন ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলে প্রায় আধাঘণ্টা পর শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিকে শনিবার রাতে ওই কারখানার সরবরাহ লাইনের পানি পান করে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে- এমন খবর কারখানায় ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে ওই কারখানার শ্রমিকরা রবিবার সকালে কাজে যোগ দিতে কারখানার গেটে এসে জড়ো হয়। কিন্তু তারা কাজে যোগ না দিয়ে গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের পাওনাদি পরিশেধের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় পানি পানে অসুস্থদের মধ্যে কয়েকজন শ্রমিক মারা গেছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। উত্তেজিত শ্রমিকরা সকাল ১০টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা লরিসহ বিভিন্ন মালামাল সড়কের ওপর রেখে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ সময় আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনরতদের সঙ্গে যোগ দেয়। বেশ কিছুসংখ্যক বহিরাগতরাও তাদের সঙ্গে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে তারা যানবাহনসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানা, দোকানপাট নির্বিচারে ভাংচুর করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে উভয়দিকে অন্তত ২৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরতদের সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে পুলিশের অন্তত ১০ সদস্য আহত হয়। পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পথচারী ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে দিগি¦দিক ছুটোছুটি শুরু করে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। এক পর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে বেলা আড়াইটার দিকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে বিকেলে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ওই কারখানার শ্রমিক কালাম বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের পাওনা বেতন ভাতা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধের পাঁয়তারা করছিল। শ্রমিকদের যাতে বেতন না দিতে হয়, সেজন্য শ্রমিকদের দাবি দমন করতে কারখানা কর্তৃপক্ষ কৌশলে ট্যাঙ্কের পানির সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেয়। শনিবার রাতে ওই পানি খেয়ে বেশ কারখানার কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাতেই তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও ওই ঘটনার জেরে একই সময়ে চান্দনা চৌরাস্তার নলজানী এলাকার শান্তাবুর কারখানার শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়ক অবরোধ ও ভাংচুর করে। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী দোকানের তেলের ড্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে দীর্ঘ সময় যান বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প পথে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। বেলা দেড়টা থেকে ডিগ্রী পরীক্ষা থাকায় রাস্তায় বেরিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় জটিলতায় পড়েন অনেক পরীক্ষার্থী ও শিক্ষক। জিএমপি’র গাছা থানার ওসি কাজী ইসমাইল হোসেন জানান, ওই কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক রয়েছে। তাদের সমর্থনে আশপাশের কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক সড়কে নেমে এসেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডেগেরচালা ও আশপাশের এলাকার প্রায় অর্ধশত কারখানা রবিবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় বিজিএমইএ কর্মকর্তারা এক জরুরী বৈঠকে বসেছে। এ ছাড়া জিএমপির কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমানও রবিবার কারখানা এলাকা পরিদর্শন ও বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। গাজীপুর শিল্প পুলিশের এএসপি আমিরুল আলম বলেন, পানি পানে শ্রমিকের মৃত্যুর খবরটি পুরোপুরি গুজব। আমরা কোন শ্রমিকের মৃত্যুর খবরের সত্যতা পাইনি। টঙ্গীতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী থেকে জানান, রবিবার সন্ধ্যায় টঙ্গী চেরাগআলী মার্কেট এলাকায় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু’পাশের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গেলে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন ও ট্রাফিক সহযোগী পুলিশের সঙ্গে হকারদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা মিলে ধাওয়া করে পুলিশ সহযোগীদের সাবেক টঙ্গী পৌরসভার অভ্যন্তরে আটকে রাখে। এসময় ফুটপাতের হকার ব্যবসায়ীরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও হকাররা পুলিশের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হয়। উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম টঙ্গী ব্রিজ থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু’পাশে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে ২৫দিন মাইকিংয়ের পর স্থানীয় প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযানে নামে। উচ্ছেদ অভিযান সত্ত্বেও সন্ধ্যা থেকে প্রতিদিন ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু’পাশে চেরাগআলী মার্কেট এলাকায় হকাররা তাদের ভ্যানগাড়ি নিয়ে দু’পাশে পসরা জমিয়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি করে। এলাকাবাসী ও পথচারীরা চাচ্ছিল মহাসড়ক যানজটমুক্ত ও ফুটপাত দখলমুক্ত হউক। একইদিন সন্ধ্যায় টেলিফোনে গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জনকণ্ঠকে তিনি জানান, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজটমুক্ত রাখতে ফুটপাতে অবৈধ দখল দারিত্ব বন্ধে যে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি জনকণ্ঠকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
×