ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তবলীগ জামাতে দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকারের পাঁচ নির্দেশনা

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  তবলীগ জামাতে দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকারের পাঁচ নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে তবলীগের দাওয়াত কার্যক্রম সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তবলীগ জামাতে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দেলোয়ারা বেগম স্বাক্ষরিত পরিপত্রে তবলীগ জামাতের চলমান সঙ্কট নিরসনে তবলীগের উভয় পক্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, অপপ্রচাররোধ, একে অপরের প্রতি সহনশীল মনোভাব পোষণসহ বেশকিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পরিপত্রটি ইতোমধ্যে সকল জেলা প্রশাসক ও তবলীগের মারকাজগুলোতে ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সরকারী নির্দেশের পরও রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে সাদপন্থীদের জোড় করতে দিচ্ছে না থানার ওসি। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষের দানা বেঁধে উঠেছে সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে। তবলীগ জামাত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন উল্লেখ করে পরিপত্রে বলা হয়, সমগ্র বিশ্বে তবলীগের কার্যক্রম একটি অরাজনৈতিক অহিংস, শান্তিপূর্ণ ও সম্পূর্ণ ধর্মীয় কার্যক্রম হিসেবে পরিচিত। মুসলমান জনসাধারণ তাদের আত্মশুদ্ধি ও ইসলামের দাওয়াতের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছেন। এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ একটি অন্যতম অগ্রসরমান দেশ বিধায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম জামাত ‘বিশ্ব ইজতেমা’ প্রতি বছর গাজীপুর জেলার টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবলীগ জামাতের চলমান সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, সম্প্রতি এ সংগঠনের মধ্যে দৃশ্যমান বিভক্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে শান্তিকামী সংগঠনটির দুটি গ্রুপের মধ্যে দেশের প্রায় সকল এলাকায় প্রায়শই বিন্যাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা ধর্মীয় রীতিনীতি তথা সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলার অন্তরায়। তাই দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সৌহার্দ ও সম্প্রীতি বজায় রাখা তথা সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তবলীগের সঙ্কট নিরসনে সরকারের পাঁচ নির্দেশনা ॥ প্রথম হচ্ছে, বর্তমানে তবলীগে বিদ্যমান দুটি পক্ষ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা পরামর্শক্রমে কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী এজতেমা ময়দানসহ দেশের সকল জেলা ও উপজেলা মারকাজে সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে, তারিখে তাঁদের কার্যক্রম (সাপ্তাহিক বাণী ও রাত্রি যাপন, পরামর্শ ও তালিম, মাসিক জোড় ইত্যাদি) পরিচালনা করবে। তবে কোন পক্ষ চাইলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে মারকাজ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে বা জায়গায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। দ্বিতীয় হচ্ছে, তবলীগের আদর্শ ও চিরাচরিত রীতিনীতি অনুযায়ী কোন পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কোনরূপ লিখিত বা মৌখিক অপপ্রচার চালাবে না। তৃতীয় হচ্ছে, দেশের সকল মসজিদে পূর্বের ন্যায় শান্তিপূর্ণভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সে লক্ষ্যে যে কোনো মসজিদে উভয় পক্ষের জামাতই যেতে পারবে। এতে কোন পক্ষই কাউকে বাধা দিবে না। তবে একই সময়ে দুই পক্ষের দেশী ও বিদেশী জামাত একই মসজিদে অবস্থান করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। এ ক্ষেত্রে যে পক্ষের জামাত আগে আসবে সেই পক্ষের জামাত অবস্থান করবে। অন্য পক্ষের জামাত পার্শ্ববর্তী অন্য কোন সুবিধাজনক মসজিদে চলে যাবে। চতুর্থ হচ্ছে, উভয় পক্ষ তাদের ইজতেমা বা জোড়ে তবলীগের দেশী-বিদেশী মুরব্বিদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। এতে এক পক্ষ অন্য পক্ষের কার্যক্রমে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। পঞ্চম হচ্ছে, কোন এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এদিকে সাদপন্থীরা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনার পর গত গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে তবলীগের মাসিক জোড় করতে দেয়নি থানা পুলিশ।
×