ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ ম্যাচে ভিয়েতনামকে উড়িয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  শেষ ম্যাচে ভিয়েতনামকে  উড়িয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ জয় সব সময়ই মধুর। আর সেই জয়ের সঙ্গে যদি মিলে যায় শিরোপাপ্রাপ্তিও তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সেক্ষেত্রে চিত্তসুখটা নিঃসন্দেহে হবে দ্বিগুণ। এমনই অনুভূতিতে আক্রান্ত হয়েছিল গোটা বাংলাদেশ। রবিবার যে তাদের সোনার মেয়েদের হাত ধরে রচিত হয়েছে আরেকটি ঈর্ষণীয় সাফল্য। বাংলার বাঘিনীরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে পা রাখলো আরেকটি স্বপ্নের সিঁড়িতে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের ‘এফ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে এবং ‘অঘোষিত’ ফাইনালে স্বাগতিক বাংলাদেশ ২-০ গোলে হারায় ভিয়েতনামকে। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে গোল করে ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন এবং ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। অস্ট্রেলিয়ান রেফারি ক্যাথেরিন জ্যাসউইচের নির্লজ্জ ও পক্ষপাতিত্বমূলক রেফারিংও হারাতে পারেনি বাংলাদেশকে। তিনি বিস্ময়কর-অন্যায়ভাবে বাংলাদেশের আরও ৩টি গোল বাতিল করে দেন। এর আগেও ২০১৪ সালে একই আসরে (ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত) বাংলাদেশের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছিলেন পরপর দুটি ম্যাচে। সেবার দুটি ম্যাচেই জিততে জিততে হেরে গিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে এবার আর ক্যাথেরিনের কূটচাল কাজে লাগেনি। খেলা শেষে এক ক্ষুব্ধ-রসিক দর্শকের মন্তব্য, ‘শকুনির দোয়ায় গরু মরেনি!’ এই জয়ে এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের ‘এফ’ গ্রুপে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলো গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যারা। সেই সঙ্গে এই আসরের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল তারা। এই পর্বের খেলা ২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এই গ্রুপে স্বাগতিক বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গোল (২৭) করার পাশাপাশি একমাত্র দল হিসেবে একটি গোলও হজম করেনি। দ্বিতীয়পর্বে বাংলাদেশ ছাড়াও কোয়ালিফাই করা অপর সাত দল হলো : চীন, লাওস, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপিন্স এবং ভিয়েতনাম। তার মানে বাংলাদেশের কাছে হেরে মন খারাপ হয়নি ভিয়েতনামের। কারণ ফিলিপিন্সের মতো তারাও হয়েছে দুই সেরা রানার্সআপ দলের একটি। এই জয়ে ‘এফ’ গ্রুপে ৪ ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২ পয়েন্ট বাংলাদেশের। সমান ম্যাচে রানার্সআপ ভিয়েতনামের পয়েন্ট ৯। বাংলাদেশের নয়নাভিরাম খেলা দেখে গাঁটের পয়সা উসুল হয়েছে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আসা হাজার পাঁচেক দর্শকের। তিন ম্যাচে খেলে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের গোল (২৫) এবং পয়েন্ট (৯) সমান ছিল। ফলে সৃষ্টি হয় এক সমীকরণের। বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম ম্যাচটি যদি ড্র হতো তাহলে সরাসরি টাইব্রেকার অনুষ্ঠিত হতো (কোন অতিরিক্ত সময় খেলা হবে না)। সেক্ষেত্রে বাইলজ অনুযায়ী কিন্তু ম্যাচের অফিসিয়াল ফল ‘ড্র’ই লেখা থাকতো। সেক্ষেত্রে যে দলই হারুক না কেন তারা প্রত্যেকেই ১ পয়েন্ট করে লাভ করতো। টাইব্রেকারের আশ্রয় নেয়া হতো গ্রুপের শীর্ষ দল নির্ধারণ করার জন্য। বাংলাদেশ দল যদি টাইব্রেকারে হেরেও যেত তাহলেও তাদের পরের পর্বে যাওয়ার সুযোগ বেঁচে থাকতো। সেটা বেস্ট দুই রানার্সআপ দলের একটি হিসেবে। সেক্ষেত্রে অন্য পাঁচ গ্রুপের খেলা শেষ হওয়া এবং গ্রুপগুলোর পয়েন্ট টেবিলের চূড়ান্ত অবস্থার ওপর নির্ভর করতে হতো তাদের। উল্লেখ্য, এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে মোট ছয়টি গ্রুপ আছে। প্রতি গ্রুপে ৫টি করে মোট ৩০ দেশ খেলবে। ছয় গ্রুপের ছয় চ্যাম্পিয়ন এবং সেরা দুই রানার্সআপ দল মোট আটটি দল খেলবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। এই আট দল থেকে সেরা চার দল খেলবে তৃতীয় এবং চূড়ান্তপর্বে। এইপর্বে যোগ্যতা অর্জন করা চার দলের সঙ্গে সরাসরি খেলবে আগেই যোগ্যতা অর্জন করা আরও চার দেশ- স্বাগতিক থাইল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। ম্যাচ শেষে নিজেদের খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি রেফারির কড়া সমালোচনা করেন বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মহিলা ফুটবলে এটা ছোটনের ষষ্ঠ সাফল্য। এর আগে তার অধীনে মহিলা দল জেতে ২০১৫ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল), ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল), ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল), ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১৮ সালে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত জকি ক্লাব গার্লস ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ইনভাইটেশনাল ফুটবল টুর্নামেন্ট। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনগুলোতে বাংলার বাঘিনীদের নিয়ে আরও কত সাফল্য কুড়িতে আনতে পারেন ছোটন।
×