ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুমিল্লায় গর্ভ থেকে শিশুর অর্ধেক দেহ টেনে বের করল নার্স-আয়া

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  কুমিল্লায় গর্ভ থেকে শিশুর অর্ধেক দেহ টেনে বের  করল নার্স-আয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২৩ সেপ্টেম্বর ॥ দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফাতেমা বেগম নামে এক প্রসূতির গর্ভের সন্তান স্বাভাবিকভাবে প্রসবের জন্য ভর্তি হওয়ার পর ওই হাসপাতালের দুই নার্স ও এক আয়া মিলে প্রসূতির সন্তানের হাত-পাসহ অর্ধেকাংশ টেনে ছিঁড়ে বের করে। এতে প্রসূতির জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়লে পেটে সন্তানের মাথার অংশ রেখে তড়িঘড়ি করে তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অপারেশন করে রবিবার ওই প্রসূতির গর্ভ থেকে সন্তানের মাথার অংশ বের করে আনলেও তার অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটলেও দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বশীল মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আহসানুল হক ও ডাঃ নীলা পারভীন কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আহমেদ কবির। এ ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। জানা গেছে, উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ নীলা পারভীনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। ফাতেমার স্বামী সেলিম মিয়া ও স্বজনরা জানান, প্রসব বেদনা থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় সন্তান প্রসবের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। হাসপাতালের নার্স আছিয়া ও ঝর্না রোগীর স্বজনদের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের জন্য বাইরের দোকান থেকে ওষুধপত্র ক্রয় করান। পরবর্তীতে প্রসব বেদনায় প্রসূতি কাতর হয়ে পড়লেও সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একপর্যায়ে ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নার্স আছিয়া, ঝর্না ও আয়া জেসমিন মিলে ফাতেমার গর্ভের সন্তানের পা এবং হাত ধরে টানাটানি শুরু করলে হাত-পাসহ অর্ধেক প্রসূতির পেট থেকে বেরিয়ে আসে এবং মাথাসহ অর্ধেকাংশ ছিঁড়ে পেটে থেকে যায়। এ অবস্থায় প্রসূতির জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়লে গভীর রাতে প্রসূতিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। রবিবার ওই হাসপাতালে অপারেশন করে প্রসূতির পেটে থাকা সন্তানের মাথাসহ অর্ধেক বের করে আনা হয়। বর্তমানে ওই প্রসূতি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এদিকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আহমেদ কবির জানান, দায়িত্বশীল মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আহসানুল হক ও ডাঃ নীলা পারভীনকে না জানিয়ে রাতে নার্স আছিয়া, ঝর্না ও আয়া জেসমিন মিলে প্রসূতির গর্ভের সন্তান ডেলিভারির চেষ্টা করে। এ ঘটনার তদন্তের জন্য দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ তামান্না সোলেমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব একই হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মনজুর রহমান ও সদস্য মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আহসানুল হক। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে বলা হয়েছে। এদিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের নিকট বক্তব্য প্রদানে অনীহা প্রকাশ করেন। কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডাঃ মুজিবুর রহমান জানান, দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে আমার কাছে যে তথ্য এসেছে তাতে আমি মর্মাহত। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×