ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিয়াদ-ইমরুলের রেকর্ড জুটিতে আশায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রিয়াদ-ইমরুলের রেকর্ড জুটিতে আশায় বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ অসাধারণ ব্যাটিং করলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ইমরুল কায়েস। ৮৭ রানেই ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দুইজন মিলে এতটাই সুন্দর ব্যাটিং করেছেন, দলকে টেনে তুলেছেন, ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ১২৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছেন, তাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৫০ রানের টার্গেটও দেয়া গেছে। বোলিংটা দুর্দান্ত হলে এই স্কোরেই জেতা সম্ভব। সেই আশাতেই আছে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ ৭৪ রান করে আউট হলেও ইমরুল ৮৯ বলে অপরাজিত ৭২ রান করেন। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ‘সুপারফোরে’র গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এসে আগে টস জেতার সৌভাগ্য ধরা দিয়েছে। যা খুবই দরকার ছিল। আগে ব্যাটিং করে আফগানিস্তানের সামনে বড় স্কোর দাঁড় করাতে পারলেই হয়ে গেল। ব্যাটিংয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের পরিবর্তে ইমরুল কায়েসকে নামিয়ে ব্যাটিং লাইন শক্ত করা হয়। বোলিংয়ে রুবেল হোসেনকে একাদশের বাইরে রেখে নাজমুল ইসলাম অপুকে নেয়া হয়। ওয়ানডে অভিষেক হয় অপুর। যেন স্কোর বড় হলে আফগানিস্তান ব্যাটসম্যানদের স্পিন দিয়ে বিপদে ফেলা যায় সে জন্যই পেসার কমিয়ে স্পিনার বাড়ানো হয়েছে। মাহমুদুল্লাহ ও ইমরুলের রেকর্ড ১২৮ রানের জুটিতে বড় স্কোরই গড়েছে বাংলাদেশ। ৭ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৪৯ রান করে বাংলাদেশ। দুই ওপেনারকে রেখেই একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। আরেকটি সুযোগ মিলে লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর। কিন্তু শান্ত ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করলেন। ৭, ৭ এরপর এবার ৬ রানেই আউট শান্ত। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে গিয়ে শান্ত আউট হন। ষষ্ঠ ওভারেই ওয়ান ডাউনে নামা মোহাম্মদ মিঠুনও সাজঘরের পথ ধরেন। মুজিব জাদরানের বলটি বুঝতেই পারলেন না মিঠুন (১)! এলবিডব্লিউ হয়ে যান। তাতে করে ১৮ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। বিপদেও পড়ে যায় দল। উইকেটে আঁকড়ে থাকাই তখন মুখ্য কাজ হয়। সেই কাজটি করতে থাকেন লিটন ও মুশফিকুর রহীম। ১০ ওভারে গিয়ে দলের স্কোরবোর্ডে ৩৪ রান জমা হয়। রান একেবারেই কম হয়। কিন্তু উইকেট আর পড়েনি। সেই কাজটিই করার চেষ্টা করেন লিটন ও মুশফিক। উইকেট থাকলে যে পরে রানও তোলা যাবে। দলের ৪০ রান হতেই আরেকটি উইকেট হারাত বাংলাদেশ। মুজিবের বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাই। ৯ রান করা মুশফিক আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। এর আগেই অবশ্য ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫ হাজার রান করার কৃতিত্ব গড়েন মুশফিক। যখন ৭ রান হয়, তখনই তামিম, সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান করেন মুশফিক। ক্যাচ মিসের সুযোগে ‘নতুন জীবন’ পান মুশফিক। সেই সুযোগে লিটনকে নিয়ে এগিয়েও যেতে থাকেন মুশফিক। দুইজন মিলে একটা সময় ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দুইজনই সমানতালে ব্যাটিং করতে থাকেন। ১৯তম ওভারে গিয়ে রশিদ খান বল হাতে নেন। চতুর্থ বলেই উইকেট শিকার করে ফেরেন। অহেতুক সুইপ করতে গিয়ে (৪১) বল আকাশে তুলে দেন। স্লিপে আউট হন। পরের বলেই সাকিব রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন। অদৃশ্য এক তাড়াহুড়ো সাকিবের মধ্যে যেন কাজ করেছে। মিডউইকেটে বল ঠেলে দিয়েই রান নিতে দৌড়ান। মুশফিক সাড়া দেবেন এমন কোন পরিস্থিতিই ছিল না। বল মিডউইকেটে থাকা শেনওয়ারির হাতে পড়তেই সরাসরি স্ট্যাম্পে লাগিয়ে দেন। ১৯তম ওভারের শেষ তিন বলে ২ উইকেট পড়তেই বাংলাদেশের ঘাড়ে আবারও বিপদ চেপে ধরে। কি সুন্দর ব্যাটিং করছিলেন মুশফিক ও লিটন। ৬৩ রানের জুটিও গড়েন। আতঙ্ক বোলার রশিদ বোলিংয়ে আসতেই সব যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। ৮১ রানে গিয়ে আরও ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ৬ রান যোগ হতেই মুশফিকও (৩৩) রানআউট হলে যেন ম্যাচ থেকেই ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। ৮৭ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে মাশরাফির দল। কী করুণ অবস্থা হয়। রানআউটই এর মধ্যে হন দুইজন (সাকিব ও মুশফিক)! দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান যখন এমন আউট হন, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দল। এমন পরিস্থিতিতে দলকে একটি ভাল জায়গায় দাঁড় করাতে হলে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ ও প্রায় এক বছর পর খেলতে নামা ইমরুল কায়েসকেই হাল ধরতে হতো। তারা দুইজন হাল ধরলেনও। দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে গেলেন। বিপর্যস্ত অবস্থাও দূর করলেন। ৫০ রানের জুটিও গড়া হলো। দলের ১৫০ রানও হয়ে গেল। ১০০ রানের জুটি গড়ার সঙ্গে দলকে ২০০ রানেও নিয়ে যান মাহমুদুল্লাহ ও ইমরুল। অভিজ্ঞতার ঝলক দেখাতে থাকেন। ২০তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ। দলের বিপদ দূর করেন। ইমরুলও পেছনে পড়ে থাকবেন কেন। তিনিও হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। এই ম্যাচের আগেই দলে যোগ দেন। একাদশেও থাকলেন। ব্যাটিং ঝলকও দেখিয়ে দিলেন। প্রায় একবছর পর দলে ফিরে হাফসেঞ্চুরি করে দলকেও বিপদমুক্ত করলেন। আল শাহরিয়ার ও খালেদ মাসুদ পাইলটের ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গড়া ১২৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির রেকর্ড ভেঙ্গে দেন মাহমুদুল্লাহ-ইমরুল জুটি। দল যখন ২১৫ রানে থাকে তখনই ৮১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৭৪ রান করে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। আউট হওয়ার ৪ রান আগেই আসলে ষষ্ঠ উইকেটে রেকর্ড জুটি হয়ে যায়। দেশের হয়ে রেকর্ড জুটি হয়। এরপর অধিনায়ক মাশরাফি (১০) ব্যাট হাতে নেমে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে আউট হয়ে যান। ইমরুল শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন। অপরাজিত ৭২ রান করে ৫ রান করা মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে বড় স্কোর দাঁড় করিয়েই মাঠ ছাড়েন। তাতে বাংলাদেশ জয়ের আশাও দেখছে।
×