ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ কোন্দলের ফায়দা নিতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ কোন্দলের ফায়দা নিতে চায় বিএনপি

মোঃ মোস্তফা কাদের ও মোঃ হোসাইন আলী কাজী, বরগুনা ॥ বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা বিষখালী, বুড়িশ্বর, বলেশ্বর আর খাকদন নদীবেষ্টিত উপকূলীয় জেলা বরগুনায় এক সময় ছিল তিনটি সংসদীয় আসন। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি আসন কমিয়ে দুটি আসন করে। বরগুনা, আমতলী, তালতলী নিয়ে একটি আসন এবং পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা নিয়ে অন্যটি। বর্তমানে এ দুটি আসনই রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দখলে। দুটি আসনই দলের দুর্গ বলে পরিচিত। একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জেলার এই দুটি আসনেই বইছে নির্বাচনের হাওয়া। দলীয় মনোনয়নের আশায় দুটি আসনেই বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের আশায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক জনপদের মানুষের সমর্থনের জন্য কেউ কেউ বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত। ছুটে যাচ্ছেন প্রান্তিক জনপদের অবহেলিত মানুষের পাশে। দেশের ‘দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ’ বলে পরিচিত বরগুনার এই জনপদে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীর দৌড়ে প্রকাশ্য দেখে গেলেও নীরবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। তবে মনোনয়নের দৌড়ে প্রবীণদের চেয়ে নবীনরাই এগিয়ে। তবে দুটি আসনেই মনোনয়ন কেন্দ্র করে বড় দুই দলেই রয়েছে দ্বন্দ্ব বিবাদ। মৌসুমি কিছু মনোনয়নপ্রত্যাশীর কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে এসব দ্বন্দ্ব। স্বাধীনতার পর থেকে এ দুটি আসনে আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে আসন দুটিতে ভাগ বসাতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। স্থানীয় নেতাদের অভিমত, নির্বাচনের আগে দ্রুতই দলের মধ্যে সৃষ্ট কোন্দল-দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে না পারলে আওয়ামী লীগকে বিজয় ধরে রাখতে বড় বেগ পেতে হবে। বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) ॥ স্বাধীনতার পর থেকেই এ আসনে জয়লাভ করে আসছ আওয়ামী লীগ। তবে এবার আওয়ামী লীগের পুরনো প্রার্থীদের পাশাপাশি মৌসুমিরাও অনেকটা সক্রিয়। দলের দুর্দিনে কিংবা সংগঠনে আগে সক্রিয় ছিলেন না এমন ব্যক্তিরাও পোস্টার-ব্যানার দিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে চাইছেন। তরুণ প্রার্থীরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে মৌসুমি প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে তেমন গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পারছেন না। পরিবর্তন চেয়ে তরুণরা দলের মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিং ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় উপজেলার বিভিন্ন হাট ও বাজার সরগরম। চায়ের দোকানে চলছে আলোচনার ঝড়। কে পাচ্ছেন আগামী নির্বাচনে দলীয় টিকেট? বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মনোনয়ন ঘিরে চলছে প্রকাশ্যে কোন্দল। আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এ আসনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দখল করতে চাইছে বিএনপি। জাতীয় পার্টি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগে মনোনয়নপ্রত্যাশী ৯, বিএনপির ৫, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একক প্রার্থী রয়েছে। এ আসন থেকে মোট চারবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। বিভিন্ন সময়ে দলের প্রয়োজনে সাহসী যোদ্ধা হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু থেকেছেন সবার সামনে। ’৯৬ সালে তিনি উপমন্ত্রী থাকা অবস্থায় অবহেলিত এই জনপদের যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার বেশিরভাগই হয়েছে তাঁর হাত ধরে। এ কারণে আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর কবির, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম মজিবুর রহমান তালুকদারের পুত্র ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ মাহ্মুদুর রহমান নিরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ নেতা মোঃ গোলাম সরোয়ার টুকু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক, বরগুনা জেলা কৃষক এ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মশিউর রহমান শিহাব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী আসন সাবেক বরগুনাÑ৩ (আমতলী-তালতলী) থেকে ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ গোলাম সরোয়ার ফোরকান, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ জিএম দেলওয়ার হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা, সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ মোঃ মতিয়ার রহমান তালুকদার, জেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম মোল্লা, সাবেক জেলা বিএনপি সভাপতি মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, বিমান শ্রমিক দলের সভাপতি ফিরোজ-উজ-জ্জামান মামুন মোল্লা এ তিন জন একই পরিবারের লোক। অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন জেলা কৃষক দলের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অবঃ) আব্দুল খালেক। জাতীয় পার্টি থেকে একমাত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি শাহজাহান মানছুর। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী ড. মুফতি মাহবুবুর রহমান। বরগুনা-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে মাঠে সক্রিয়ভাবে গণসংযোগ করছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন। পাশাপাশি চারবার সাংসদ হয়েছেন। দীর্ঘ সময় দল ও সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা উন্নয়নে অবদানের পাশাপাশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাঁকে ঘিরে। সম্প্রতি স্থানীয় জেলার কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় কেন্দ্র পর্যন্ত তোলপাড়ের সৃষ্টি করে। এ কারণে সংবাদ সম্মেলনে থাকা নেতাদের কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শানের নোটিস পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। বরগুনার জনগণকে একত্রিত করে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত করেছি। আমার উপরে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আস্থা রেখে যতবার সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন বরগুনার জনগণ তার প্রতিদান হিসেবে আমাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন। আমি বরগুনার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। দলের নেতাকর্মীদের মাঝে কখনও বিভেদ সৃষ্টি হতে দেইনি। আশা করি আগামী নির্বাচনেও দল আমার ওপরই আস্থা রাখবে। একই সঙ্গে বরগুনার অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ করে যেতে পারব। আওয়ামী লীগের আরেক জনপ্রিয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। জনগণের মধ্যে তাঁর রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তিনিও এখন বিভিন্ন এলাকায় সভা সমাবেশ করে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছেন। এই আসনে তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন গোলাম সরোয়ার টুকু। তিনি বরগুনা সরকারী কলেজের দু’বার নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্র রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে বর্তমানে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের দু’বার জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক হন। একজন সুবক্তা ও কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে গোলাম সরোয়ার টুকু সততা ও সুজনশীল চিন্তা এবং সাংঠনিক দক্ষতা দিয়ে বরগুনার সাধারণ মানুষের কাছে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। টুকু বলেন, বরগুনার মাটি ও মানুষের হৃদয়জুড়ে আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভালবাসা। এজন্য প্রত্যেক নির্বাচনে এখানকার মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই ভালবাসাকে পুঁজি করে এখানে যিনি দীর্ঘদিন সাংসদের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা এখন পরিবর্তন চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করে ন্যায় ও নিষ্ঠার সঙ্গে জনকল্যাণে কাজ জাতির জনকের সোনার বাংলা গঠন করব। আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সরোয়ার ফোরকান বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করে প্রার্থিতার জানান দিয়ে আমতলী-তালতলীর উন্নয়নের জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন। তিনি ২০০১ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন থেকে নির্বাচন করেন। ওই সময় চারদলীয় জোট সরকার প্রভাব খাটিয়ে তাঁকে হারিয়ে দেয়। অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তরুণ নেতা মোঃ মশিউর রহমান শিহাব বরগুনা জেলা সদরসহ ৩টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরিব ও দুস্থদের মাঝে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করে জনগণের সমর্থন এবং পরিবর্তনের জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার সঙ্গে থাকার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনার নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ড. মাহ্মুদুর রহমান নিরু বলেন, আমার বাবা মরহুম মজিবুর রহমান তালুকদার সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন থেকে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সফলতার সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন করে গেছেন। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমাকে বরগুনা-১ আসন থেকে মনোনয়ন দেবেন। আমাকে মনোনয়ন দিলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে কাজ করব। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, এখন বরগুনার উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন দরকার। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়েই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। দলের কাছে বিগত দিনেও মনোনয়ন চেয়েছি এবারও চাইব আশা করি দল বিবেচনায় নেবে। অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার বলেন, বিগত ২০০১ সালে বরগুনা-৩ আসন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামান্য ভোটে হেরেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় আসন ছেড়ে দেয়ার পরে উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। সে সময় আমতলী ও তালতলীর ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ওই উন্নয়নের পরে আমতলী-তালতলীর কোন উন্নয়ন হয়নি। আমার রেখে যাওয়া কাজই উল্টে-পাল্টে করেছে বর্তমান সরকারের লোকজন। দল থেকে মনোনয়ন পেলে কর্মী সমর্থক ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারব বলে আশা করি। বরগুনা জেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, শহীদ জিয়ার আদর্শ বুকে ধারণ করে বিএনপি করে আসছি। বরগুনার বিএনপিকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি আগামী নির্বাচনে এ আসন উদ্ধার করতে বিএনপির আমাকে মনোনয়ন দেবে। দলের মনোনয়ন পেলে তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ জনগণের ভোটে বিজয় লাভ করে আসনটি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে পারব। বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বেতাগী-বামনা) ॥ আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা। সাবেক বরগুনা-২ (বামনা-পাথরঘাটা) আসনটি ছিল একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বেতাগী উপজেলাকে সংযুক্ত করে বরগুনা-২ আসন হওয়ায় এটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। সারাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে বরগুনা-২ (বেতাগী-বামনা-পাথরঘাটা) সে উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে নেই। এ আসনেও ব্যাপক উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাই দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে তিনিই বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দিতে পারবে বলে মনে করেন অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে হারানো আসন ফিরে পেতে একাট্টা তারা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন। আগামী নির্বাচনে তিনি ছাড়াও কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, সাবেক এমপি গোলাম সবুর টুলুর কন্যা ফারজানা সবুর রুমকি, পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাবির হোসেন, বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সগির হোসেন লিয়ন ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনি। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে নানা কারণে বিরাগভাজন থাকলেও আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন পাবেন বলে দৃঢ় আশাবাদী বর্তমান এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন। ২০০৩ থেকে ২০১৪ এ ১১ বছরে বিস্ময়কর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তার। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন এবং সবশেষে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন তাঁর বাবার বিরোধী অবস্থান, এমপি থাকাকালীন সরকারী কর্মচারীদের মারধর, সালিশ বৈঠকের নামে নারীর মাথায় বিষ্টা ঢেলে দেয়া, মাজার দখলসহ জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ করেছেন তাঁর বিরোধী পক্ষরা এমপি রিমনের সমর্থকরা তা অস্বীকার করেন। এক্ষেত্রে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ক্লিন ইমেজ থাকা সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার। তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে বামনা-বেতাগী-পাথরঘাটার গরিব দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে ছিলাম, এখনো আছি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার তৃণমূলের মানুষ আমাকে ভালবাসে। তাই আমি আশাকরি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জনআকাক্সক্ষার কথা বিবেচনা করে আমাকে মনোনায়ন দেবেন এবং নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে। পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেন বলেন, বর্তমান সাংসদ শওকত হাচানুর রহমানের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে দূরে সরে গেছেন। এ কারণে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে আমি সবার মতামত নিয়ে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। আশাকরি প্রধানমন্ত্রী শওকত হোসেন রিমনের বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে তাঁকে বাদ দিয়ে আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আমি মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হয়ে সৎ ও ন্যায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হবো। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন এবারও মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সগির হোসেন লিয়ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম মনিও ক্যারিশম্যাটিক নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে তাঁর কর্মী সমর্থকরা জানান। এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আশা করি দেশনেত্রী আমাকে বরগুনা-২ আসন থেকে মনোনয়ন দেবেন। ওই আসনে আমার বিকল্প কোন প্রার্থী নেই। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখে পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের ভালবাসায় ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশনেত্রীর হাত শক্তিশালী করব। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সারোয়ার হিরু। এর আগে একাধিকবার তিনি এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই সকলের কাছে জনপ্রিয় মুখ হিসেবে রয়েছে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি।
×