ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিএসইর আশঙ্কাই সত্যি হলো

তিন বছরেই জেড ক্যাটাগরিতে ইভিন্স টেক্সটাইল

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তিন বছরেই জেড ক্যাটাগরিতে ইভিন্স টেক্সটাইল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইভিন্স টেক্সটাইলের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সর্বশেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন ১৮) লোকসান গুনতে হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় মুনাফার পরিমাণ কমেছে ১৮ শতাংশ। সেইসঙ্গে কোন লভ্যাংশ ঘোষণা না করায় তালিকাভুক্তির তিন বছরেই কোম্পানিটি শেয়ারবাজারের ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে। এর আগে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আপত্তিকে উপেক্ষা করে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইভিন্স টেক্সটাইলে কোম্পানি আইন, কর্পোরেট গবর্নেন্স গাইডলাইন (সিজিজি), হিসাবমানসহ বিভিন্ন অসঙ্গতি থাকার পর আইপিও অনুমোদন পেয়েছিল। এর আগে একই মালিকানার আরগন ডেনিম শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলিত টাকার অপব্যবহার করে। তাদের প্রতারণার কারণে ৩০ লাখ টাকা জরিমানার কবলে পড়ে আরগন ডেনিম। এবার নো ডিভিডেন্ড দেয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা বড় লোকসানে পড়ে গেল। ইভিন্স টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেডের প্রসপেক্টাসে বিভিন্ন অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে ডিএসইর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. স্বপন কুমার বালা কোম্পানিটির আইপিওতে আপত্তি জানিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের কাছে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পাঠান। তবে বিএসইসি তা উপেক্ষা করে আইপিও অনুমোদন দিয়েছিল। তবে কোম্পানিটির আইপিওতে ডিএসইর পর্যবেক্ষণ যে সঠিক ছিল, তা কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির ৩ বছরেই প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির পর্ষদ সর্বপ্রথম ৩০ শতাংশ (১০% নগদ ও ২০% বোনাস) লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। যা ১৮ মাসের (জানুয়ারি ১৫-জুন ১৬) ব্যবসায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এর পরের অর্থবছরে (জুলাই ১৬- জুন ১৭) লভ্যাংশ কমে আসে মাত্র ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ারে। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা কোম্পানিটি রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হবে। কোম্পানিটির ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ার প্রতি ১.০৬ টাকা হিসেবে মোট ১৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। যাতে কোম্পানিটির ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা ছিল। তবে কোম্পানিটির পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করে, পুরোটাই রিজার্ভে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানিটির ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ১৭-মার্চ ১৮) সমন্বিত মুনাফা হয়েছিল ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা বা শেয়ার প্রতি ১.২০ টাকা। তবে বছর শেষে এই মুনাফার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা শেয়ার প্রতি ১.০৬ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেষ প্রান্তিকে লোকসান হয়েছে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা বা শেয়ার প্রতি ০.১৪ টাকা। কোম্পানিটির ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সমন্বিত শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ১.২৮ টাকা। যা কমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হয়েছে ১.০৬ টাকা। এক্ষেত্রে ইপিএস কমেছে ০.২২ টাকা বা ১৭ শতাংশ। ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ইভিন্স টেক্সটাইলে ৫৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোন লভ্যাংশ না ঘোষণা করার ফলে মুনাফার সম্পূর্ণ বা ১৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার রিজার্ভ বাড়বে। এদিকে ইভিন্স টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৩টি প্রান্তিকে অসত্য আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে। যে হিসাবকে ডিএসই কর্তৃপক্ষ ভুল হিসেবে ‘লাল’ চিহ্নিত করে রেখেছেন। দেখা গেছে, ইভিন্স টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা দেখিয়েছেন ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ও তৃতীয় প্রান্তিকে ৬ কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এ হিসাবে ৩ প্রান্তিকের যোগফল হয় ১৮ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ৩ প্রান্তিকের মোট হিসাবে ১৯ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষই একক ও মোট হিসাবে ২ রকম তথ্য প্রদান করেছেন।
×